Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বর্ধমানের কঙ্কালেশ্বরী কালী: রুদ্রচর্চিকা- তমাল দাশগুপ্ত

যদিও মন্দিরটি প্রাচীন নয় কিন্তু কঙ্কালেশ্বরী মূর্তিটি অন্তত এক সহস্র বছর পুরোনো। এটি পালসেনযুগের রুদ্রচর্চিকা মূর্তি, সন্দেহ নেই। পালযুগ ও সেনযুগ - উভয় সময়েই এই রুদ্রচর্চিকা উপাস্য ছিলেন। নয়পালের বাণগড় প্রশস্তি যেমন চর্চিকার বন্দ…

 







যদিও মন্দিরটি প্রাচীন নয় কিন্তু কঙ্কালেশ্বরী মূর্তিটি অন্তত এক সহস্র বছর পুরোনো। এটি পালসেনযুগের রুদ্রচর্চিকা মূর্তি, সন্দেহ নেই। পালযুগ ও সেনযুগ - উভয় সময়েই এই রুদ্রচর্চিকা উপাস্য ছিলেন। নয়পালের বাণগড় প্রশস্তি যেমন চর্চিকার বন্দনা করে শুরু হয় এবং একটি পূর্ণাঙ্গ চর্চিকাস্তব আছে তারপর (সেটির পূর্ণাঙ্গ পাঠ ও বঙ্গানুবাদ আগে পেজে দিয়েছি, বাণগড় প্রশস্তির সেই চর্চিকাস্তব আমি আগের বছর আমার গৃহে সহজ দুর্গাপুজোয় সন্ধিপুজোর সময় ব্যবহার করেছিলাম), একইভাবে সেনযুগে সদুক্তিকর্ণামৃত সংকলনে উমাপতিধরের লেখা একটি চর্চিকাস্তব আছে: মা এখানে নক্ষত্রের অভ্যন্তরে জ্বলন্ত অগ্নিরাশির মত চক্ষুবিশিষ্ট, অগস্ত্য মুনির দ্বারা বারিহীন সমুদ্রের মত তাঁর পাতালগত উদর। ওই সংকলনেই সেনযুগের একজন অনামা কবির লেখা চর্চিকাস্তবে এই মাতৃকা "নির্মাংসা প্রকটাস্থিজাল" বলে আখ্যা পেয়েছেন। অর্থাৎ তিনি মাংসহীন, তাঁর মূর্তিতে অস্থিজাল প্রকট। প্রসঙ্গত কঙ্কালেশ্বরী মূর্তি সম্পর্কে বলা হয় যে এই মূর্তির অস্থি ও শিরা নিখুঁতভাবে বর্ণিত। 


বর্ধমান কাঞ্চননগরের এই মূর্তিটি বলা হয় দামোদর নদীতে ১৩২০ বঙ্গাব্দের বন্যায় চৌধুরীদহে ভেসে এসেছিল উপুড় অবস্থায়। ফলে এটি কেবল এক প্রস্তরখণ্ড হিসেবেই প্রতীত হয়, এবং ধোপারা এই ছয় ফুট ব্যাসল্ট পাথরের মূর্তির পেছনের দিকটা কাপড় কাচার জন্য ব্যবহার করতেন। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে এক ভূমিকম্পে চৌধুরীদহে ফাটল তৈরি হলে পাথরটি উল্টে গিয়ে সম্মুখভাগ বেরিয়ে আসে এবং এ মূর্তিটি আবিষ্কৃত হয়। বর্ধমান রাজের উদ্যোগে ওই বছরেই একটি পঞ্চরত্ন মন্দিরে এ মূর্তি স্থাপিত হয়। 


এ মূর্তিটি রুদ্রচর্চিকা, বা রুদ্রচামুণ্ডার। ইনি অষ্টভুজা (অনুরূপ মূর্তি দশভুজা হলে সিদ্ধচর্চিকা বা সিদ্ধচামুণ্ডা আখ্যা পায়)। ধ্যানমন্ত্রে বলা হয়েছে ইনি ডমরু ও নরমুণ্ড ধারণ করেন হাতে, এঁকে নৃত্যেশ্বরী নৃত্যরতা রুদ্রচামুণ্ডা বলা হয় (তেন সা রুদ্রচামুণ্ডা নাটেশ্বর্য্যথ নৃত্যতী)। ইনি বাঙালির নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার নৃত্যগীতনাট্যশালায় উপাস্য মাতৃকা ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই।


আজকের কঙ্কালেশ্বরী, পালসেনযুগের রুদ্রচর্চিকা।এঁর আটটি হাতের মধ্যে ডানদিকের হাতে তরবারি, ডমরু, শূল ও কপাল-পাত্র। বাঁদিকের হাতে  পশ্চিমী জগতে Grim Reaper যেমন একটা scythe বহন করেন তেমনই একটি ফসল কাটার অস্ত্র,  ঘন্টা, নরমুণ্ড ও ভক্ষণমুদ্রা। মায়ের দুদিকে দুই সহচরী আছেন, পদতলে শবশিব-দলন করেন।


কল্পনা করুন পাঠক! আজ অমাবস্যা তিথি, শনিবার আগতপ্রায়। হয়ত এমনই এক তিথিতে, মধ্যরাতে, আজ থেকে অনেক, অনেক শত বৎসর আগে, আপনার পূর্বমানুষরা এই সদ্যনির্মিত মাতৃমূর্তিকে পালরাষ্ট্রের বা সেনরাষ্ট্রের কোনও মন্দিরে মহা ধুমধামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সঙ্গীত আর বাদ্যে মুখরিত, নাগরিক জনারণ্যে আনন্দমুখর, লক্ষ দীপমালায় আলোকোজ্জ্বল সেই প্রাচীন মুহূর্তে ফিরে যান এক লহমার জন্য: আবহমানকালের বাঙালিকে আবিষ্কার করুন।


© 

No comments