শতবর্ষ প্রাচীন মহিষাদল রাজ হাইস্কুলের ভগ্নপ্রায় ‘লালবাড়ি’ রক্ষার জন্য তৈরি হল ‘হেরিটেজ বাঁচাও কমিটি’। শিক্ষক দিবসে ঐতিহ্যবাহী স্কুলবাড়ি বাঁচানোর জন্য শপথ নিলেন মহিষাদলের মানুষজন। ১৮৯৪ সালে রাজ হাইস্কুলের পঠনপাঠনের জন্য তৈরি হয়েছ…
শতবর্ষ প্রাচীন মহিষাদল রাজ হাইস্কুলের ভগ্নপ্রায় ‘লালবাড়ি’ রক্ষার জন্য তৈরি হল ‘হেরিটেজ বাঁচাও কমিটি’। শিক্ষক দিবসে ঐতিহ্যবাহী স্কুলবাড়ি বাঁচানোর জন্য শপথ নিলেন মহিষাদলের মানুষজন। ১৮৯৪ সালে রাজ হাইস্কুলের পঠনপাঠনের জন্য তৈরি হয়েছিল এই লালবাড়ি। ইংরেজি শিক্ষার জন্য মহিষাদলের রাজ পরিবারের উদ্যোগে বিদেশি স্থাপত্যের আদলে দোতলা এই স্কুলবাড়ি তৈরি হয়। হিন্দি সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি সূর্যকান্ত ত্রিপাঠি (যিনি কবি নিরালা নামে সুপরিচিত), স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশচন্দ্র সামন্তের স্মৃতি বিজড়িত এই স্কুলবাড়ি সংস্কারের অভাবে আজ ধ্বংসের পথে। মহিষাদলের হিলজি টাইডাল ক্যানেলের পাশে ইন্দো ফরাসি গঠন শৈলীর স্কুলবাড়ি সংস্কারের জন্য এবার উদ্যোগী হয়েছেন মহিষাদলের শিক্ষানুরাগী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। রবিবার সন্ধ্যায় মহিষাদল রাজ হাইস্কুলের অডিটরিয়াম হলে বিধায়ক তিলক চক্রবর্তীর উদ্যোগে লালবাড়ি বাঁচানোর জন্য সভা হয়।
ঐতিহ্যবাহী লালবাড়ি বাঁচানোর জন্য যে ‘হেরিটেজ বাঁচাও কমিটি’ তৈরি হয়েছে তার সভাপতি হয়েছেন বিধায়ক তিলকবাবু। তিনি বলেন, লালবাড়ি সংস্কারের জন্য এলাকার মানুষের মতামত নিতেই সভা ডাকা হয়েছিল। বহু মূল্যবান মতামত দিয়েছেন বিদ্বজ্জনেরা। আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, লালবাড়ি সংরক্ষণের প্ল্যান এস্টিমেট করা হবে। এজন্য নতুন কমিটি আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এবিষয়ে মিটিং করবে ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। হেরিটেজ বিল্ডিং সংস্কারের জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নেওয়া হবে। এস্টিমেট করার পাশাপাশি কমিটির নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। বাড়িটি সংরক্ষণ করার পর এখানে স্মারক টাউন হল ও ইতিহাসের সংগ্রহশালা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এবিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগামীদিনে মহিষাদল পুরসভা হলে এখানকার স্মারক টাউন হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। রাজবাড়িকে ঘিরে যে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে এটি তার অন্তর্ভুক্ত হবে।
হেরিটেজ কমিটির অন্যতম সদস্য ও আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ হরিপদ মাইতি বলেন, রাজ হাইস্কুলের পরতে পরতে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ১৮৫১ সালের সেনসাস রিপোর্টে মহিষাদল রাজ হাইস্কুলের উল্লেখ রয়েছে। তখন এই স্কুলটি বসত রাজবাড়ির ভিতরে। পরে রাজ হাইস্কুলের একটি একতলা বাড়ি হয়। সেই বিল্ডিং ভেঙে ১৮৯৪ সালে রাজ হাইস্কুলের ঐতিহ্যবাহী ‘লালবাড়ি’ তৈরি শুরু হয়। ১৮৯৬ সাল নাগাদ ওই বাড়ি তৈরি শেষ হয়। এটি ছিল সেই সময়ে মিডল ইংলিশ স্কুল এবং জেলার প্রথম অবৈতনিক বিদ্যালয়। এখানে শিক্ষক ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক জলধর সেন। ছাত্র ছিলেন কবি নিরালা, সতীশবাবু প্রমুখ বিখ্যাত মানুষজন। এই স্কুলবাড়ি হেরিটেজ করার জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হবে বলে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বহু পড়ুয়া দেশ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত তাঁদের কাছে কাছে লালবাড়ি বাঁচানোর জন্য অর্থ সাহায্য চাওয়া হবে। সেজন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে।
রাজ হাইস্কুলের প্রাক্তন বাংলা শিক্ষক অশোক লাটুয়া বলেন, শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণ নয়, আগামী প্রজন্মের কাছে এই স্মারক ভবনকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে। সেজন্য আমাদের পরামর্শ এখানে একটি টাউন হল এবং সংগ্রহশালা গড়ে তোলা দরকার। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, আঞ্চলিক ইতিহাস, লোকসংস্কৃতির পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানের বিষয়ও থাকা প্রয়োজন পড়ুয়াদের দিকে তাকিয়ে। কারণ এখানে অনেকগুলি স্কুল ও কলেজ রয়েছে। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, লালবাড়ি শুধু স্কুলে সম্পদ নয়, মহিষাদলের মানুষের আবেগ জড়িত এর সঙ্গে। সেজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা দরকার। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এবিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিধায়ক।
No comments