আমার একটাই সপ্তডিঙি, স্বপ্নের ডিঙি,খরস্রোতা বিলাগ্রাম পেরিয়ে ইছামতীর তীর ছাড়িয়ে-আমার স্বপ্ন ভাসান স্বপ্ন ডিঙি।দেখেছি, উপুড় করা কলসের উপর বসে-দু'পায়ে কলসের গলা চেপে দিব্যি ভেসে ভেসে-বাবা কাকা আউশ ধান কাটত ভাদ্রমাসে।পরে জোয়ারে…
আমার একটাই সপ্তডিঙি, স্বপ্নের ডিঙি,
খরস্রোতা বিলাগ্রাম পেরিয়ে ইছামতীর তীর ছাড়িয়ে-
আমার স্বপ্ন ভাসান স্বপ্ন ডিঙি।
দেখেছি, উপুড় করা কলসের উপর বসে-
দু'পায়ে কলসের গলা চেপে দিব্যি ভেসে ভেসে-
বাবা কাকা আউশ ধান কাটত ভাদ্রমাসে।
পরে জোয়ারের জলে কলসের পেছন চেপে-
কতবার স্বপ্ন ভাসানে আমিও!
সেবার আটাত্তরের বন্যায়,
গাঁয়ের আয়তন ছোট হয়ে গেলে,
আমার স্বপ্ন ভাসানের প্রস্তুতিকে-
আমি কিন্তু বড় করে নিয়েছিলাম।
মোটা মোটা তিন কলাগাছের ভেলার-
সামনে পিছনে উড়িয়ে দিয়েছিলাম আমার কেতন-
মায়ের ছেঁড়া শাড়ির অংশ পাটখুঁটিতে বেঁধে।
বড়দের নজর এড়িয়ে-
উজানের খালপথে ভেসে পড়েছিলাম গাঙে গাঙে।
আহা, সে ভয়ঙ্কর নদী যার বুকে-
আমার স্বপ্ন মধুকরে আমি একা সওদাগর।
স্রোতের ঘূর্ণিপাকে মাথার উপর দিয়ে-
আমার কলার ভেলা অবহেলে।
আমি তখন চাঁদ সদাগর।
আমি তখন জিন্দাবাদ।
ইচ্ছে হল ভাটিগাঙের খালপথ হয়ে ফিরে আসব।
কিন্তু হায়, সে ভেলা মাঝগাঙে ছুটে চলল।
হঠাৎই খেয়াল হল আমার লগিটা গেছে ভেসে।
অমনি আমার স্বপ্নও গেল ছুটে।
চাঁদ সদাগর নয়,
আমি তখন বাস্তবের কানাই।
ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করে কান্না জুড়েছি কখন মনে নেই।
ভেসে চলেছি অনন্ত প্রসারিত হাঁড়িভাঙা বিলের দিকে।
কপাল ভালো বলতে হয়,
ঐ গাঁয়ের দাদু আমার কান্না শুনেছিলেন ;
নৌকো পাঠিয়ে উদ্ধার করেছিলেন আমায়!
নইলে আমার স্বপ্নে ভাসান সাধের নাউ'এর পরিসমাপ্তি ঘটত কবেই,
আর এমনতর বিচিত্র অভিজ্ঞতার সময় সুযোগও পেতাম না,
স্বপ্ন ভাসানের সাথে সাথে আমার নটেগাছটিও-
কবেই মুড়িয়ে যেত।
No comments