Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অনন্য রাজীব - বিজেপির মতো ক্ষমতালোলুপ নয় দেশের স্বার্থে বিশ্বে ক্ষমতা ত্যাগের অনন্য নজিরঃ-পার্থ মুখোপাধ্যায়

প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন রাজীব গান্ধীর ৭৭ তম জন্মবার্ষিকী পালনের আবহে আজ উল্লেখ করবো তার এক নজির যা বিশ্বের গণতন্ত্রের ইতিহাসে অনন্য।
সত্তর দশকের শেষের দিকে শুরু, উত্তাল হয়ে ওঠে ১৯৮০র দশকে। দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী রাজ্য পা…

 






প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন রাজীব গান্ধীর ৭৭ তম জন্মবার্ষিকী পালনের আবহে আজ উল্লেখ করবো তার এক নজির যা বিশ্বের গণতন্ত্রের ইতিহাসে অনন্য।


সত্তর দশকের শেষের দিকে শুরু, উত্তাল হয়ে ওঠে ১৯৮০র দশকে। দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী রাজ্য পাঞ্জাব এবং উত্তর পূর্বের সীমান্তে আসাম ও মিজোরাম রাজ্যে শুধু অশান্তিই নয়, বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ দেশের অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে তখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলো। পাঞ্জাবে স্বাধীনতাকামী খালিস্তান আন্দোলন তখন তুঙ্গে খালিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের। এর পেছনে নৈতিক সমর্থন ছিলো আকালি দলের এবং শিরোমনি গুরুদ্বোয়ারা প্রবন্ধক কমিটির। এদের সকলের কার্যকরী সমর্থনে গৃহীত হয়েছিল আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাব। সাধারণ মানুষ, পুলিস ও কংগ্রেস কর্মীদের ওপর প্রাণঘাতী আক্রমন ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। 


ওদিকে আসামে বিদেশী চিহ্নিতকরণের দাবীতে আন্দোলন চলছিল গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের, আসুর পরিচালনায়। কিন্তু   আলফার স্বাধীন অহমের দাবীও জনজীবনে, বিশেষ করে কংগ্রেস কর্মীদের জীবনে ঘোর দূর্যোগের অবস্থা সৃষ্টি করেছিলো। মিজোরামেও স্বাধীনতার দাবীতে হিংসাত্মক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ চলছিলো লালডেঙ্গার নেতৃত্বে। 


এমনই এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিলাম এক অনন্য রাজীবকে। রাজীব গান্ধীর গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর অদম্য বিশ্বাস সেদিন সারা বিশ্ব অনুভব করেছিল। একই সঙ্গে দেশের সংহতি রক্ষায় জাতীয় কংগ্রেসের অঙ্গীকারবদ্ধতা ও নিঃস্বার্থ প্রয়াসও প্রত্যক্ষ করেছিল সারা বিশ্ব,যা গণতন্ত্রের জয়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল।


১৫ই আগস্ট, ১৯৮৫ তারিখে আসামে ভারত সরকার ও আন্দোলনকারি ছাত্রদের সঙ্গে সম্পাদিত হয় এক চুক্তি। একই ভাবে চুক্তি সম্পাদিত হয় পাঞ্জাবের ধর্মীয় নেতা সন্ত হরচাঁদ সিং লঙ্গোয়ালের সঙ্গে জুলাই, ১৯৮৫ সালে এবং মিজোরামে লালডেঙ্গার সঙ্গে ১৯৮৬ সালে। এই চুক্তিগুলির প্রাথমিক শর্ত ছিলো যতো শীঘ্র এক নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্হার বহাল।


উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বার্থে   জাতীয় কংগ্রেস তিনটি রাজ্যের নির্বাচনেই অংশ নিয়েছিল না জেতার লক্ষ্য নিয়ে যাতে সেখানে আন্দোলনকারীরাই জয়লাভ করে। এখানে উল্ল্যেখযোগ্য যে পাঞ্জাবে কংগ্রেসের দরবারা সিং এর সরকার বরখাস্ত হয় ১৯৮৩র অক্টোবরে কিন্তু আসামে তখনও কংগ্রেসের হিতেশ্বর সইকিয়ার সরকার যার কার্যকাল ছিল ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এবং মিজোরামেও লালথানহাওলার নেতৃত্বে কংগ্রসেরই সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল যাদের কার্যকাল ছিল মে, ১৯৮৯ পর্যন্ত। এখানে উল্যেখযোগ্য যে নির্বাচনে জেতা সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেসের রাজ্যসরকার আসামে পদত্যাগ করে যখন তাদের কার্যকাল শেষ হতে ২৬ মাসেরও বেশি এবং মিজেরামে পদত্যাগ করে যখন তাদের কার্যকাল শেষ হতে ২৯ মাসেরও বেশি সময় বাকি ছিল। একথাও উল্লেখ করার মতো যে কংগ্রেস মনে করলে পাঞ্জাবেও তার নির্বাচিত সরকারকে পুনঃবহাল করতেই পারতো। এখানেই প্রয়াত রাজীব গান্ধীর এবং জাতীয় কংগ্রেসের মাহাত্ম্য যে নিজেদের জেতা রাজ্যেও স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেছিল দুই থেকে আড়াই বছর কার্যকাল বাকি থাকতেই, শুধু মাত্র সম্পাদিত চুক্তিগুলির সম্মান রক্ষার্থে এবং দেশের সংহতিরক্ষায় ও সার্বভৌমত্বের সুদৃঢ় পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। 


পৃথিবীর সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ইতিহাসে প্রয়াত রাজীব গান্ধীর ঐতিহাসিক এবং সাহসী নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রসের এই মহান ক্ষমতা ত্যাগের নজির শুধু বিরলই নয়, দ্বিতীয়টি নেই। রাজীব গান্ধী ও কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তে দলের স্বার্থ আপাত ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তা সামগ্রিক ভাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল এবং দেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় এক গৌরবময় অধ্যায় সুচিত করেছিল। আজকের শান্ত পাঞ্জাব, আসাম ও মিজোরাম রাজীব গান্ধীর ত্যাগ ও সাহসী কর্মকাণ্ডেরই মহিমান্বিত রুপ বহন করছে।


No comments