বুধবার রাজ্যে প্রথম হলদিয়ায় ‘সিআইএফএ-জিআই স্ক্যাম্পি’ নামে উন্নত এবং নতুন প্রজাতির গলদা চিংড়ির চাষ শুরু হল। দেশিয় প্রজাতির গলদা চিংড়িকে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও উন্নত করে বৃদ্ধির হার দ্রুত করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়…
বুধবার রাজ্যে প্রথম হলদিয়ায় ‘সিআইএফএ-জিআই স্ক্যাম্পি’ নামে উন্নত এবং নতুন প্রজাতির গলদা চিংড়ির চাষ শুরু হল। দেশিয় প্রজাতির গলদা চিংড়িকে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও উন্নত করে বৃদ্ধির হার দ্রুত করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তৈরি হয়েছে নয়া প্রজাতি। ভুবনেশ্বরের কেন্দ্রীয় মিষ্টিজল মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র (সিফা) প্রায় দেড় দশকের চেষ্টায় ২০২০ সালে গলদার নতুন এই প্রজাতি সৃষ্টি করেছে। একাজে তাদের সহায়তা করেছে ওয়ার্ল্ডফিশ নামে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র। ওই সংস্থার সদর দপ্তর মালয়েশিয়াতে। এদিন কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থা সিফা ও রাজ্য মৎস্য দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে হলদিয়ার বিভিন্ন মৎস্য খামারে নতুন প্রজাতির গলদা চিংড়ির মীন ছাড়া হয়। রুই, কাতলা, মৃগেলের সঙ্গে মিশ্র পদ্ধতিতে কম খরচে বাড়তি ফলনের জন্য নতুন প্রজাতির এই গলদা চাষ লাভজনক হবে বলে দাবি মৎস্য বিজ্ঞানীদের।
মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে, রাজ্যে প্রথম হলদিয়াতেই চারটি প্রদর্শনী ক্ষেত্র তৈরি করে নতুন প্রজাতির গলদা চাষ শুরু হল। সিফার ভুবনেশ্বর কেন্দ্র থেকে এদিন সাতহাজার চিংড়ির মীন এনে চাষিদের বিতরণ করা হয়েছে। নয়া মৎস্য প্রকল্পের কাজ দেখতে এদিন হলদিয়া আসেন সিফার দুই মৎস্য বিজ্ঞানী দেবব্রত পণ্ডা এবং বিধুদত্ত মিশ্র। তাঁরা জানান, সিফার মৎস্য বিজ্ঞানী বিন্দুরমন পিল্লাই পরিকল্পিতভাবে নির্বাচিত প্রজনন অর্থাৎ সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে বংশগতভাবে উন্নত এবং দ্রুত বর্ধনশীল গলদার প্রজাতি সৃষ্টি করেছেন। ভারতের উপকূল এলাকায় নদী ও খাল বিলে দেশিয় গলদা চিংড়ির মীন ভালো জন্মায়। সুস্বাদু ও দাম বেশি হওয়ায় বিদেশে গলদার রপ্তানি বাজার বাড়তে থাকে। তবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভারত গলদা রপ্তানিতে প্রথম ছিল। কিন্তু তারপর থেকে গলদার বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া এবং দ্রুত রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে চাষিদের উৎপাদন কমতে থাকে। ২০০৭ সাল থেকে কীভাবে উন্নত এবং দ্রুত বৃদ্ধি হয় এমন প্রজাতি সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেয় সিফা এবং সাফল্য আসে ২০২০ সালে।
সিফার বিজ্ঞানীরা জানান, নতুন নতুন প্রজাতির মাছ চাষে রাজ্যের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে হলদিয়া। তার বড় কারণ এখানকার উপকূলীয় এলাকা এবং একই সঙ্গে মিষ্টি জলের খামার চাষ। হলদিয়া ব্লকের প্রগতিশীল চাষিরা নতুন ধরনের মাছ চাষে খুবই উৎসাহী। হলদিয়া ব্লকের মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমনকুমার সাহু বলেন, নতুন প্রজাতির গলদার বৈশিষ্ট্য হল, রুই কাতলা ও অন্যান্য মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষ করলেও দ্রুত বাড়ে। ফলে চাষিদের লাভের পরিমাণ বাড়বে। চিংড়িমাছের জন্য আলাদা উচ্চপ্রোটিনযুক্ত কৃত্রিম খাবার দিতে হবে না। রুই কাতলার খাবারেই গলদা বাড়বে। এতে কম সময়ে কম খরচে লাভ পাবেন চাষিরা। মিষ্টি বা সামান্য নোনা জলেই চাষ করা যাবে। হলদিয়ার চার প্রগতিশীল শুভ্রজ্যোতি সাহু, শুভেন্দু বল্লভ, পবিত্র মুখোপাধ্যায় এবং কৃষ্ণপদ সামন্তকে নতুন প্রজাতির গলদার মীন দেওয়া হয়েছে। ভুবনেশ্বর থেকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি করে অক্সিজেন প্যাকেটে করে এই মীন এনেছে মৎস্য দপ্তর।
No comments