টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একশোর বেশি কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। পাঁশকুড়া, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, দেশপ্রাণ প্রভৃতি ব্লকে বহু কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার ওইসব ব্লকের বিডিও জেলায় এনিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। নিম্নচ…
টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একশোর বেশি কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। পাঁশকুড়া, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, দেশপ্রাণ প্রভৃতি ব্লকে বহু কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার ওইসব ব্লকের বিডিও জেলায় এনিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। নিম্নচাপ সরে যাওয়ায় এদিন দুপুরের পর থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হয়েছে। তবে, গত দু’দিনের প্রবল বর্ষণে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমনের চারা এবং সদ্য রোয়া ধান জলে ডুবে থাকায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। কংসাবতী সহ অন্যান্য নদীতে জলস্তর বেড়েছে। কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সেচদপ্তরের তমলুক ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অনির্বাণ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন।
গত ২৬ মে যশ সাইক্লোনে নদী তীরবর্তী এবং উপকূল এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। তবে, নিম্নচাপের জেরে টানা ভারী বর্ষণে নিকাশি সমস্যায় জল জমে দুর্ভোগ বেড়েছে। যেমন, নন্দীগ্রামের গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেশপুর, বরানগর, কেশবপুর, পারুলবাড়ি, ঝাটিবনী, জামবাড়ি প্রভৃতি এলাকা জলমগ্ন। পাঁশকুড়া ব্লকের হাউর, ঘোষপুর, চৈতন্যপুর-১ ও ২, রাধাবল্লভচক, প্রতাপপুরা-২ প্রভৃতি পঞ্চায়েত এলাকা জল থইথই অবস্থা। পাঁশকুড়া ব্লক এলাকায় ৫৫টি কাঁচাবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিডিও ধেনদুপ ভুটিয়া জেলায় রিপোর্ট করেছেন। বিডিও বলেন, বৃষ্টিতে পাঁশকুড়ার নিচু এলাকায় জল জমেছে। কিছু বাড়িতে জল উঠেছে। তাতে আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে রিপোর্ট পেয়েছি।
দেশপ্রাণ ব্লকের আউরাই পঞ্চায়েতের সঙ্গে কাঁথি-৩ব্লকের কানাইদিঘি পঞ্চায়েতের সংযোগকারী ঝাউবনীতে একটি কালভার্ট ভারী বর্ষণে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার বিডিও শুভজিৎ জানা বিষয়টি সেচদপ্তরের নজরে আনেন। এদিন সেচদপ্তরের পক্ষ থেকে ওই কালভার্ট মেরামত শুরু হয়। অতিবৃষ্টিতে অনেক জায়গায় গ্রামীণ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভগবানপুর-২ব্লকের গড়বাড়ি-১, পটাশপুর-১ ব্লকের অমর্ষি-২প্রভৃতি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা জলমগ্ন। আমন চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। জেলায় প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ হয়েছিল। অনেক জায়গায় সদ্য রোয়া জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। এছাড়াও বীজতলা ক্ষতি হওয়ায় চাষিরা সমস্যার মুখে পড়েছেন। আমনের পাশাপাশি পানবরজ, ফুল ও সব্জি চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগেও বৃষ্টির অভাবে ফুলচাষিরা সমস্যায় পড়েছিলেন। নিম্নচাপের জেরে ভারী বৃষ্টিতে ফুলের জমিতে জল জমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ছে।
অতিবৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুরে সাত-আটটি ব্লক জলমগ্ন। এছাড়াও পাঁশকুড়া, তমলুক ও হলদিয়া পুরসভা এলাকার অনেক এলাকায় জল জমে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন শহরবাসী। নিকাশি সমস্যার জেরেই এই ভোগান্তি। শুক্রবারও শহর এলাকায় পাম্প বসিয়ে জল সরানো হয়েছে। তবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোথাও ত্রাণশিবির খোলা হয়নি। স্থানীয়ভাবে কিছু জায়গায় দুর্গতরা প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন অফিসার মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, শ’খানেক কাঁচাবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে। কোথাও ত্রাণশিবির খুলতে হয়নি। নিম্নচাপ বাংলাদেশের অভিমুখে সরে যাওয়ায় শুক্রবার দুপুর থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হয়েছে। কৃষিদপ্তরের সহ অধিকর্তা(শস্য সুরক্ষা) মৃণালকান্তি বেরা বলেন, কয়েকটি ব্লকে জল জমে রয়েছে। যেকারণে আমনে ক্ষতি হতে পারে।
No comments