শুক্রবার অতিবর্ষণে বিপর্যস্ত হলদিয়া শিল্পাঞ্চল পরিদর্শনে এলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। এদিন তিনি হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার, পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিকে, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ…
শুক্রবার অতিবর্ষণে বিপর্যস্ত হলদিয়া শিল্পাঞ্চল পরিদর্শনে এলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। এদিন তিনি হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার, পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিকে, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ ওয়ার্ড জলমগ্ন হওয়ার দায় নিয়ে বন্দর ও রেলের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থাগুলির সঙ্গে পুরসভার চাপানউতোর শুরু হয়েছে। হলদিয়া পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বন্দর ও রেলের অসহযোগিতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পুর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিকাশি সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবছে পুরসভা। এবার অতিবর্ষণের সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ক্যানেলের স্লুইস গেটগুলি খুলে না রাখায় জলমগ্ন হয়েছে টাউনশিপ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে টাউনশিপের শিল্প আবাসন এলাকার হাজার হাজার মানুষকে জলবন্দি অবস্থায় ভুগতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন শিল্প সংস্থার পাল্টা অভিযোগ, পুরসভা শিল্প সংস্থাগুলির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করলেও নিকাশির উন্নয়নে খরচ করছে না। স্থানীয় বাসিন্দা ও বিরোধী দলগুলির ক্ষোভ, নিকাশি নিয়ে পুরসভার নজরদারির অভাবে এবার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিন, এইচডিএর সিইও হরিশঙ্কর পানিক্কর, ভাইস চেয়ারম্যান সাধন জানা, পুর চেয়ারম্যান সুধাংশুশেখর মণ্ডল, পুর এগজিকিউটিভ অফিসার রবীন্দ্রনাথ জানা, সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তাপস মাইতির সঙ্গে নিকাশি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন মন্ত্রী সৌমেনবাবু। শহরের নিকাশি নিয়ে তিনি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উপর জোর দেন। পুরসভা জানিয়েছে, হলদিয়ার নিকাশির মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে টানাপোড়েন চলছে। এজন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিনে হলদিয়ায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একটানা বৃষ্টিতে বহু ওয়ার্ড জলমগ্ন। শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় টাউনশিপ আবাসন এলাকায় সামান্য জল নেমেছে। তবে হাতিবেড়িয়া, ক্ষুদিরামনগর, সিটিসেন্টার, সুকান্ত কলোনি, দুর্গাচক টাউনের সমস্ত আবাসন কুমোরচক সহ বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তাঘাট জলে ভাসছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছেন কয়েক হাজার বস্তিবাসী পরিবার। ফ্ল্যাট ও পাকাবাড়ির বাসিন্দারাও বিপাকে পড়েছেন। জলমগ্ন হওয়ায় বহুতল ফ্ল্যাট থেকে সাধারণ বাড়ি সর্বত্র মিটার বক্স ডুবে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে। বাসিন্দারা জানান, বাড়িশুদ্ধ শর্টসার্কিট হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফলে অন্ধকারে কাটাতে হচ্ছে। সাবমার্সিবল পাম্প চালাতে না পারায় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। বহু ওয়ার্ডে নর্দমার নোংরা জল বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ায় করোনার সময় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। পুরসভার কাউন্সিলার ও কর্মচারীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন ওয়ার্ডে জরুরি ভিত্তিতে নিকাশি খালগুলি পরিষ্কার করা হচ্ছে। ফলে জলস্তর দ্রুত নামতে শুরু করেছে। সেচমন্ত্রীকে পুরসভার নিকাশির মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে জানিয়েছি। বিজেপি নেতা প্রদীপ বিজলী বলেন, পুরসভার সমস্ত নিকাশি খালে মাছ ধরার পাতা জালই বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এবার হলদিয়ায় ‘ম্যানমেড বিপর্যয়’ ঘটেছে পুর কর্তৃপক্ষের অপদার্থর কারণে। সিপিএম নেতা অচিন্ত্য শাসমল বলেন, বর্ষার আগে পুরসভা মূল নিকাশি খালগুলি সংস্কার না করে দোষারোপের রাজনীতি করছে। অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা দিনের পর দিন মানুষকে বিপাকে ফেলছে। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্দরের কাজকর্ম শুরু হলেও এদিন কোনও জাহাজ আসেনি। বন্দরের বেশিরভাগ ইয়ার্ড জলে ডুবে থাকায় ক্রেন কাজ করতে পারেনি। জলমগ্ন হলদিয়া পরিদর্শনে এসে পুরসভায় চেয়ারম্যান সুধাংশুশেখর মণ্ডলের সঙ্গে বৈঠকে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।
No comments