Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বিচারপতি অজিত কুমার নায়ক মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার অন্যতম উপদেষ্টা

মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার সম্মাননীয় নবতিপর সদস্য মাননীয় অজিত কুমার নায়ক মহাশয় মেদিনীপুরের গর্ব। মেদিনীপুর জেলা তাঁর জন্মভূমি। আবার কর্মভূমিরূপেও এই পবিত্র ভূভাগের সাথে সংযোগ ঘটেছে তাঁর জীবনে। হাইড্রোজেন অক্সিজেন মিলিত হয়ে যে…

 





  



মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার সম্মাননীয় নবতিপর সদস্য মাননীয় অজিত কুমার নায়ক মহাশয় মেদিনীপুরের গর্ব। মেদিনীপুর জেলা তাঁর জন্মভূমি। আবার কর্মভূমিরূপেও এই পবিত্র ভূভাগের সাথে সংযোগ ঘটেছে তাঁর জীবনে। হাইড্রোজেন অক্সিজেন মিলিত হয়ে যেমন জলে পরিণত হয় তেমনি মেদিনীপুরের জল, মাটি ও হাওয়ার সমন্বয়ে তাঁর দেহ মনের বিকাশ ঘটেছে। 

    মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটের নিকটবর্তী (তৎকালীন পাঁশকুড়া থানার )মিহিটিকরী গ্রামে ১৩৩৭(১৯৩০) সালের স্নান পূর্ণিমার দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা স্বর্গীয় প্রবোধচন্দ্র নায়ক ও মাতা স্বর্গীয়া চারুশীলা নায়ক। কৃতী ও মেধাবী ছাত্র রূপে তাঁর পিতা তমলুক হ্যামিলটন স্কুল থেকে মেধাবৃত্তি নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করে তমলুক আদালতের লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যবহারজীবী হয়েছিলেন। শিক্ষাজীবনে পশ্চিমবাংলার প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী অজয় কুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর সহপাঠী ছিলেন।

  অজিত বাবুর শিক্ষাজীবন শুরু বাড়ির গৃহশিক্ষক ও গ্রামের পাঠশালায়। পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষালাভ তমলুক হ্যামিলটন স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি মনে করেন, তাঁর সৌভাগ্য যে পরাধীন ভারতে তমলুক হ্যামিলটনের মত এক আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও পরিকাঠামোর মধ্যে তাঁর কৈশোর ও বাল‌্যজীবনের শিক্ষা শুরু হয়েছিল বলেই তিনি তাঁর  ভবিষ্যৎ জীবনযুদ্ধের  রসদ সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এই  ছাত্রজীবনে চল্লিশের দশকে তিনি অর্জন করেছিলেন বিভিন্ন বিচিত্র অভিজ্ঞতা ------ ভা‌রতছাড়ো আন্দোলনে চোখের সামনে মাতঙ্গিনী দেবীর মৃত‌্যু, দুর্ভিক্ষের করাল ছায়ায় মৃত‌্যুর মিছিল, লঙ্গরখানায় স্বেচ্ছাসেবকের কাজ, মেদিনীপুর ও তমলুকের ইংরেজ সৈন্যদলের সান্নিধ্য, বিক্ষুব্ধ সাইক্লোন ঝড় ও বন্যা কবলিত দুর্গত মানুষের সেবা করা, মহাযুদ্ধের অবসান, ১৯৪৬ সালে প্রাক স্বাধীনতা পর্বে কলেজে পড়াকালীন কলকাতায় থাকা, স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে নেতাজী সুভাষ ও আজাদ হিন্দ ফৌজের কাহিনী, ভারতব্যাপী সুনামীর মতো প্লাবন, ১৯৪৬ এ ৯ আগস্ট  বিপ্লব আন্দোলনের বার্ষিক উদযাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেনেট হলে ও ওয়েলিংটন স্কোয়ারে জয়প্রকাশ নারায়ণের বক্তৃতা তাঁর মত তরুণদের মনকে উজ্জীবিত করেছিল। আবার কলেজ জীবনের সেই অস্থির সময়ে অন্যতম মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক নেতা মেদিনীপুরের সুসন্তান  মানবেন্দ্রনাথ রায়ের তেজোদৃপ্ত অভিভাষণ ( ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে), দেশভাগের প্রস্তুতিপর্ব, কলকাতার দাঙ্গা প্রভৃতি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজের উন্মুক্ত ও স্বতন্ত্র চিন্তা ও চেতনার চর্চায় সমৃদ্ধ হয়ে তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ জীবন পরিক্রমার পথনির্দেশ পেয়েছিলেন। 

     ১৯৫০-৫১। অজিত বাবুর জীবনের এক সন্ধিক্ষণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্র দলের সদস্য রূপে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের রূপকার ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিপিন গাঙ্গুলী, ব্যারিস্টার জে সি সেনগুপ্তের সঙ্গে ছাত্র সমস্যা নিয়ে তিনি আলোচনা করেছিলেন। ১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচন। সুবিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ড. মেঘনাদ সাহার নির্বাচনী কর্মী রূপে তিনি অংশগ্রহণ করেন।  মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সান্নিধ্যলাভ করেন। কোলাঘাট ও পাঁশকুড়া ব্লকের শিক্ষা ও গ্রাম উন্নয়নমূলক জনহিতকর কর্মকাণ্ড---ফুলের অর্থকরী উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা, অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়,নৈশ বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ফ্রি কোচিং ও চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করা, গ্রামীণ পাঠাগার নির্মাণ,কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষিজীবী মানুষদের ঋণদানের ব্যবস্থা করা সহ নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। দেউলিয়া হীরারাম হাইস্কুলের নবীকরণ ও এফিলিয়েশনের সুবিধার্থে বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়েছেন। কোলাঘাট অঞ্চলে প্রথম কলেজ গড়তে জনমত গঠন ও অর্থ সংগ্রহ অভিযানে সামিল হয়েছিলেন। তিনি বহুমুখী কার্যক্রমের জন্য জেলার বিখ্যাত এন. জি. ও  পুলসিটা নবারুণ সেবানিকেতনের মুখ্য সাহায্যকারী বা চিফ পেট্রন হিসাবে কাজ করছেন। সতীশচন্দ্র সামন্ত, শ্যামাদাস ভট্টাচার্য, ভূপাল পণ্ডা,সুদাম বেরা, সুশীল ধাড়া, প্রহ্লাদ প্রামাণিক প্রমুখের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মেদিনীপুর ছাত্র সম্মিলনীর সম্পাদক ও মেদিনীপুর সম্মেলনীর একজন সক্রিয় প্রতিনিধি রূপে কলকাতা ও জেলায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রয়াসী হয়েছিলেন।

         বৃত্তি সহ কৃতিত্বের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করার পর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হয়ে বিচারবিভাগে যোগ দেন। ২৪পরগনার আলিপুর ও বর্ধমানের জেলা জজ রূপে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে জরুরী অবস্থায় 'মিসা' আইনী জজ রূপে সুবিচার করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এক সময় সুপরিচিত সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

   পশ্চিমবাংলার ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র, পুরাকীর্তি, বিশেষতঃ ধর্মীয় সংস্থা ও মন্দিরগুলির সংরক্ষণে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। পাঁচশত বর্ষের অধিক তমলুকের শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু পদাঙ্কিত মন্দিরের সরকারীভাবে অধিগ্রহণ রদ করার জন্য কয়েক বর্ষব্যাপী সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন এবং সবশেষে সফলতা পেয়েছেন। মন্দির সংলগ্ন জমিতে গড়ে তোলা বৃহৎ বাজারের বিপণীগুলিতে শতাধিক পরিবারের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা হয়েছে। এই সুবৃহৎ মন্দিরপ্রাঙ্গণে পশ্চিমবাংলার সাংস্কৃতিক জগতের এক গৌরবময় ধারাবাহিকতার পাশাপাশি বর্তমান আর্থসামাজিক প্রচেষ্টার মেলবন্ধন ঘটেছে।

  অবসর নেওয়ার পর থেকে তিনি বহু জনহিতকর সংস্থার সাথে যুক্ত রয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালের এথিকেল কমিটির চেয়ারপারসন হয়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করে আছেন। বেলুড় মঠ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, গৌড়ীয় মঠ, ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হসপিটাল, ব্যারাকপুরের রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত রয়েছেন। দেশ-বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হয়েছেন। করোনা আবহে তাতে ছেদ পড়লেও জেলার সাথে ছেদ ঘটাতে দেননি। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে জানান যে তাঁর জন্মভূমি মেদিনীপুর জেলার সাথে তাঁর সম্পর্ক কোনো দিনই ছিন্ন হবে না। সবশেষে তিনি  বলেন যে মেদিনীপুরকে পুনরায় ভাগ করা হতে পারে, তা নিয়ে কিংবা অন্য যে কোনো বিষয় নিয়ে মেদিনীপুরবাসীদের মধ্যে মতপার্থক্য হতে পারে। কিন্তু আমরা জানি যে মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্য, গণআন্দোলন গড়ার ক্ষমতা, মেদিনীপুর জেলার প্রতি আবেগ প্রকাশের প্রবণতা মেদিনীপুরবাসীকে  এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সুতরাং মেদিনীপুরবাসী বিভেদের মাঝে সমন্বয় সাধন করবেই করবে। ফলস্বরূপ নাছোড়বান্দা মেদিনীপুরের মানুষ সরকারি সাহায্য ব্যতিরেকে মেদিনীপুর ভবন নির্মাণে সফল হয়েছে। বিদ্যাসাগরের আদর্শ মেনে মেদিনীপুর ভবনে ভারতের যে কোনো প্রান্তের মানুষকে ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা বর্তমানে সুসংহত রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এসবে বিচলিত না হয়ে মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার প্রাক্তন বা বর্তমান কর্মকর্তাদের মত ভবিষ্যতের কর্ণধাররাও মেদিনীপুরবাসীদের একসূত্রে গাঁথার কাজ ধারাবাহিকভাবে প্রাণপণে করে যাবেন। এই বয়সে তিনি এটাই কামনা করেন।

No comments