Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মৃত্যুর আট দিন আগে রবীন্দ্রনাথ রচিত শেষ কবিতা ---

৩০ শে জুলাই ১৯৪১ সাল। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি সেদিন হসপিটাল এর রূপ নিয়েছে। অপারেশান হবে রবি ঠাকুরের। দখিনের বারান্দা ঘিরে ফেলা হয়েছে। ডঃ নীল রতন সরকার, ডঃ বিধান চন্দ্র রায়, ডঃ জ্যোতি প্রকাশ সরকার সবাই উপস্থিত আছেন। ইতি মধ্যে অনে…

 







৩০ শে জুলাই ১৯৪১ সাল। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি সেদিন হসপিটাল এর রূপ নিয়েছে। অপারেশান হবে রবি ঠাকুরের। দখিনের বারান্দা ঘিরে ফেলা হয়েছে। ডঃ নীল রতন সরকার, ডঃ বিধান চন্দ্র রায়, ডঃ জ্যোতি প্রকাশ সরকার সবাই উপস্থিত আছেন। ইতি মধ্যে অনেক টানাপোড়ন গেছে এই অপারেশান নিয়ে কারন রবি ঠাকুর চাননি তার শরীরটাকে নিয়ে কাটাছেঁড়া হোক। ডঃ নীল রতন সরকার কে সে কথা কবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ডঃ বিধান চন্দ্র রায় এর বিপক্ষে ছিলেন কারণ রবি ঠাকুরের শরীরের যদি অবনতি হয় তাহলে দেশবাসীর কাছে জবাব দিতে হবে। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় রবি ঠাকুরকে বললেন আপনার কোনো ভয় নেই। সাবধানের মার নেই আমরা সব রকম প্রটেকশন নিয়েছি। আপনি বুঝতেই পারবেন না। তখন আপনি একটা কবিতাও রচনা করতে পারেন। রবি ঠাকুর একটু হেসে বললেন এ কথাও ভুলনা মারেরও সাবধান নেই। অপারেশান কারো আমি জানি ফল কী হবে।


সকাল ৯.৩০ মি; রবি ঠাকুর রচনা করলেন শেষ কবিতা। এরপর তাঁর কল্পনা এবং কলম চিরকালের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। দেহে অস্ত্রোপচারের আগে রোগশয্যা থেকে মুখে মুখে বলে যান এই কবিতাটি। লিখে নেন রাণী চন্দ।


তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি

বিচিত্র ছলনাজালে,

হে ছলনাময়ী।

মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে

সরল জীবনে।

এই প্রবঞ্চনা দিয়ে মহত্ত্বেরে করেছ চিহ্নিত;

তার তরে রাখ নি গোপন রাত্রি।

তোমার জ্যোতিষ্ক তা'রে

যে-পথ দেখায়

সে যে তার অন্তরের পথ,

সে যে চিরস্বচ্ছ,

সহজ বিশ্বাসে সে যে

করে তা'রে চিরসমুজ্জল।

বাহিরে কুটিল হোক অন্তরে সে ঋজু,

এই নিয়ে তাহার গৌরব।

লোকে তা'রে বলে বিড়ম্বিত।

সত্যেরে সে পায়

আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে।

কিছুতে পারে না তা'রে প্রবঞ্চিতে,

শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে

আপন ভান্ডারে।

অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে

সে পায় তোমার হাতে

শান্তির অক্ষয় অধিকার।


'শেষলেখা' কাব্যগ্রন্থের শেষ কবিতা এটি।  


রবীন্দ্রনাথের 'শেষ লেখা' আসলে শেষ লেখা ছিলনা, তখন লেখার মতো শারীরিক অবস্থা ছিল না কবির। শয্যাশায়ী কবি ৩০ শে জুলাই ১৯৪১ সালে সকাল আটটা নাগাদ মুখে মুখে ডিক্টেশন দেন এই কবিতার। অসুস্থ শরীরে এক দমে কবিতাটি শেষ করতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। দ্বিতীয় দফায় ডিক্টেশন দিয়ে শেষ করেন বেলা সাড়ে নয়টায়। কবি বলেছিলেন অপারেশনের পরে সুস্থ হয়ে কবিতাটি আর একবার দেখে ঠিক করবেন। সেই সুযোগ আর হয়নি। কোমায় চলে গেলেন কবি। 


   (সংগৃহীত)


No comments