সুপ্রাচীন কাল থেকেই দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হিরো স্টোন প্রতিষ্ঠা করবার প্রচলন ছিল। যুদ্ধে বীরত্বের নিদর্শন রেখে কোনো বীর যোদ্ধার মৃত্যু হলে তাঁর স্মৃতিতে এই ধরণের প্রস্তরখন্ড প্রতিষ্ঠিত করা হত। তামিলনাড়ু থেকে প্রায় ২৪০০ বছ…
সুপ্রাচীন কাল থেকেই দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হিরো স্টোন প্রতিষ্ঠা করবার প্রচলন ছিল। যুদ্ধে বীরত্বের নিদর্শন রেখে কোনো বীর যোদ্ধার মৃত্যু হলে তাঁর স্মৃতিতে এই ধরণের প্রস্তরখন্ড প্রতিষ্ঠিত করা হত। তামিলনাড়ু থেকে প্রায় ২৪০০ বছরের প্রাচীন হিরো স্টোন পাওয়া গিয়েছে, তবে সবচাইতে বেশি সংখ্যক হিরো স্টোন দেখা যায় কর্ণাটক রাজ্যে।
সঙ্গের ছবিটি কর্নাটকের বেগুর নামক স্থানে প্রাপ্ত একটি "হিরো স্টোন" বা "বীরযোদ্ধা স্মৃতি প্রস্তর"। এই প্রস্তরখন্ডে শিলালিপি সহ দশম শতাব্দীর একটি যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রাচীন সময়ের বিভিন্ন রণকৌশল, যুদ্ধ পরিস্থিতি ইত্যাদি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পাথরের গায়ে খোদাই করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত পাওয়া শ্রেষ্ঠ হিরো স্টোন হিসেবে একে পরিগণিত করা হয়। বর্তমানে এটি বেঙ্গালুরু মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
এই ফলকে দুটি ভাগ রয়েছে, নীচের অংশে একটি যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্যাবলী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবং উপরের অংশে সেই বীর শহীদ যোদ্ধার স্বর্গলাভের দৃশ্য অঙ্কিত হয়েছে।
ছবিটি খুঁটিয়ে দেখলে অসাধারণ কিছু ঘটনাবলী চোখে পড়ে, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। সবার বোঝার সুবিধার্থে বিষয়গুলি পয়েন্ট করে দেওয়া হল।
ছবির বাঁদিকে,
০১. বীর যোদ্ধা এক হাতে তরোয়াল এবং অন্য হাতে রণসাজে সজ্জিত ঘোড়ার লাগাম ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মাথায় রয়েছে রাজ উষ্ণীষ।
০২. বীর যোদ্ধার সঙ্গে রয়েছেন তাঁর দুজন অশ্বারোহী অনুগামী।
০৩. বীর যোদ্ধার সামনে একজন পদাতিক রণভেরী বাজাতে বাজাতে চলেছে।
০৪. বীর যোদ্ধার পিছনে যুদ্ধের পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রণভৈরবী, যাঁর বাঁ হাতে নরমুন্ড এবং ডানহাতে ডমরু।
ছবির ডানদিকে,
০৫. রাজ উষ্ণীষ পরিহিত প্রতিপক্ষের দলপতি একটি রণসাজে সজ্জিত হাতির উপরে বসে হাতে বল্লম নিয়ে আক্রমণোদ্যত।
০৬. তাঁর সঙ্গে হাওদায় বসে একজন তীর ছুঁড়ছে।
০৭. রণহস্তীর মাথায় অসংখ্য তীর বিঁধে রয়েছে।
০৮. যুদ্ধমত্ত হাতি একজন সৈন্যকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
০৯. আর একজন সৈন্যকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে।
১০. বল্লম হাতে একজন অশ্বারোহী।
১১. আহত সৈন্যকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
১২. রক্তের গন্ধে শাকিনী এবং ডাকিনী যুদ্ধক্ষেত্রে এসে হাজির হয়েছে।
ছবির উপরের অংশ,
১৩. আত্মত্যাগের পরে বীর শহীদ যোদ্ধা স্বর্গে পৌঁছে একটি সিংহাসনে বসে আছেন। তাঁর বাঁহাতে একটি পাখি বসে রয়েছে। তাঁর সামনে দুজন অপ্সরা নৃত্য পরিবেশন করছেন, আর দুজন চামর দুলিয়ে রাজার সেবা করছেন।
কর্ণাটকের বেগুর থেকে প্রাপ্ত এই হিরো স্টোন অত্যন্ত দূর্লভ। অপূর্ব সূক্ষ্মতার গুণে যুদ্ধের দৃশ্যপট যেন আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
No comments