Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অভিনয়ের জগতে এ এক অন্য উত্তম

জন্মগত প্রতিভা তাঁর ছিল, অভিনয় করার সহজাত দক্ষতা নিয়েই তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন বাঙালির চিরদিনের হৃদয়ের মনি কোঠার মানিক'মহানায়ক উত্তমকুমার'/ কিন্তু এই সত্যকে অস্বীকার করা যায় না, উত্তমকুমারকে মহানায়ক হতে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে…

 




জন্মগত প্রতিভা তাঁর ছিল, অভিনয় করার সহজাত দক্ষতা নিয়েই তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন বাঙালির চিরদিনের হৃদয়ের মনি কোঠার মানিক'মহানায়ক উত্তমকুমার'/

 কিন্তু এই সত্যকে অস্বীকার করা যায় না, উত্তমকুমারকে মহানায়ক হতে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে,ফ্লপ মাস্টার থেকে চিরকালের মহানায়ক হয়ে ওঠার কাহিনীর নেপথ্যে আছে এক অনবদ্য সংগ্রামের গল্প,যেখানে ছত্রে-ছত্রে, আছে এক সংগ্রামী তরুন শিল্পীর নায়ক হয়ে ওঠার লড়াই,ধাক্কা খাওয়া,হতাশ না হয়ে আবার চেষ্টা,পরিশেষে হাতের মুঠোয় সাফল্য/

 সংগ্রামী শিল্পী থেকে মহানায়ক, উত্তরণের সরণি খুঁজে আলোয় ফিরে বাঙালির চিরকালের চিরদিনের মহানায়ক উত্তমকুমার/তিনি এমন এক বর্ণময় চরিত্র তাঁকে নিয়ে এত লেখালেখি আজও হয় কারন তিনি বাঙালির হৃদস্পন্দন /অভিনয় প্রতিভা ব্যতিত মানুষ হিসেবে  মহানায়ক উত্তমকুমার বিরাট বড় মাপের ,বড় মনের মানুষ ছিলেন/ তাঁর জীবনের সেই অংশ নিয়ে  লেখালেখি বোধহয় আমাদের চোখে তেমন একটা  পড়ে না!তার নেপথ্যে নিশ্চয়ই কোনো  কারন আছে/

 উত্তমকুমারের জীবনের একটা বড় দিক ছিল দানশীলতা/তিনি আত্মপ্রচার না করে গোপনে কত দান করেছেন সেই হিসেব যদি কারও কাছে থাকত তাঁর নামের পাশে অনায়াসে 'দানবীর' বিশেষণ জুড়ে দেওয়া যেত বলে উত্তমকুমারকে খুব কাছ থেকে দেখা একসময়ের আনন্দবাজার ও দেশ পত্রিকার চিফ সাব এডিটর রবি বসু মশাই  লিখেছেন তাঁর 'সাতরঙ' বইয়ের পাতায়/

 উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে উত্তমকুমার বেশি দূর এগোতে পারেন নি ( বি কম) তাঁর জীবনে বেশ বড় মাপের একটা আক্ষেপ ছিল/

# হয়ত সেই কারনে  তিনি ঠিক করেছিলেন কখনো কোনও ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়ার সময় আর্থিক সঙ্কটে পড়ে যদি তাঁর শরণাপন্ন হয় তবে তিনি তাদের বিমুখ করবেন না/তবে সবটাই ছিল ভীষণ গোপনীয়, দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সাহায্যের বিষয়টা নিজে হাতে সামলাতেন  উত্তমকুমারের প্রবল বিশ্বস্ত সুনীল চৌধুরী(সুনু দা)/

# ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে উত্তমকুমারের প্রাথমিক শর্ত ছিল যেন কোনওভাবে তাঁর নাম প্রকাশ না হয়,এই বিষয়ে তিনি ছিলেন প্রবল সচেতন/

# দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নগদ টাকা দিতেন না মহানায়কের কাছে পৌঁছে যেত তাদের বুকলিস্ট/বই কিনে নিজের লোক দিয়ে তাদের কাছে বইগুলি পাঠিয়ে দিতেন/ অবশ্য সেই সাহায্য পেতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের একটা চিঠির প্রয়োজন হোত/

# কিন্তু সেবার এক ব্যতিক্রমী ঘটনা  মহানায়কের হৃদয়কে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল/

# মেদিনীপুর জেলার কোন এক প্রত্যন্ত গাঁ থেকে  ক্লাস সেভেনের একটি গরীব ছাত্র গাঁয়ের এক কাকাকে সাথে নিয়ে এসেছে উত্তমকুমারের ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে,বই কেনার টাকা নেই,তাঁর কাছে আবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চিঠিও নেই/


#সব শুনে সুনীল চৌধুরী বললেন —প্রধান শিক্ষকের চিঠি ছাড়া তো সাহায্য দেওয়া যাবে না,তুমি তাঁর চিঠি নিয়ে এসো/


# ছেলেটি বলল সে মেদিনীপুর জেলার একটা গাঁয়ে থাকে,তারা খুব গরিব,আর একবার গাড়ি ভাড়া করে আবার আসার মতো টাকা তার কাছে নেই/


#এইসব কথা উত্তমকুমারের কানে যাচ্ছিল,তখন তিনি বললেন সুনুদা ছেলেটিকে ভেতরে আসতে বলতো/


# উত্তমকুমার যে বিরাট মাপের অভিনেতা সেটা ছেলেটি জানত/

কিছুটা ভয়ে-ভয়ে সে উত্তমকুমারের সামনে এল/

উত্তমকুমার ছেলেটির কাছে জানতে চাইলেন— তুমি তোমার মায়ের কাছ থেকে গাড়িভাড়া চেয়ে এনেছো বলছিলে/

কেন তোমার বাবা নেই?

# ছেলেটি বলল, আছেন তবে তাদের সঙ্গে থাকেন না/

# তিনি কোথায় থাকেন জানতে চাইলে ছেলেটি মহানায়ককে বলল তিনি আর একজন মাকে বিয়ে করেছেন,আর তাঁর মা বাবার কাছে তাঁকে যেতে দেন না/

তাদের সংসার কিভাবে চলে উত্তমকুমারের এই প্রশ্নের জবাবে ছেলেটি বলল মা অন্য লোকের বাড়ি ধান সেদ্ধ করেন,ধান ভেনে দেন,গোরুর গোয়াল পরিষ্কার করেন,

বাবুর বাড়ি সাংসারিক যাবতীয় কাজকর্ম করেন/

 # উত্তমকুমার আবার ছেলেটির কাছে জানতে চাইলেন তোমার স্কুলের মাইনে কে দেয়?

ছেলেটি বলল তাঁর স্কুলে মাইনে লাগে না,কারন সে প্রতিবছর প্রথম  হয়/

#ছেলেটি আরও বলল আগে মা সবার থেকে চেয়ে বই কিনে দিতেন,কিন্তু এবার ক্লাস সেভেন,বইয়ের দাম অনেকটা বেশি,সেজন্য তাঁর গাঁয়ের ভূষণকাকা  বলেছেন উত্তমকুমারের কাছে যেতে/

' মহানায়ক গরীব ছাত্র- ছাত্রীদের 

পড়ার জন্য সাহায্য করে '

# উত্তমকুমার আবার ছেলেটির কাছে জানতে চাইলেন সে তাঁর ঠিকানা কিভাবে পেলো?জবাবে ছেলেটি বলল আপনার ঠিকানা তো সকলেই জানে/

এসব শুনে উত্তমকুমারের চোখ-মুখের অভিব্যক্তি কেমন বদলে গেলো,তাঁর চোখ দুটো জলে ভরে গেলো/ তিনি ছেলেটিকে বসতে বলে ভিতরে গেলেন/মিনিট কয়েক পর চোখে-মুখে জল দিয়ে তিনি একটি খাম ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন এতে টাকা আছে,সাবধানে নিয়ে যেও/তোমার মায়ের হাতে দিয়ে বলবে বই কিনে দিতে/তোমাকে আর প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের  চিঠি আনতে হবে না,পরের বছর পাশ করার পর দেখা করে যেও/

সাংবাদিক রবি বসু তাঁর 'সাতরঙ' বইয়ে এই কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন,তিনি লিখেছেন 'ছেলেটিকে তিনি কত টাকা দিলেন তা আমি বলতে পারব না/তবে খামটির হৃষ্টপুষ্ট চেহারা দেখে আন্দাজ করতে পারি যে অন্তত হাজার টাকা তো হবেই'/

# পাঠক একটু ভাবুন (সময়ের যন্ত্রে

পিছিয়ে যাই আজ থেকে পঞ্চাশ- ষাট  বছর )  বুঝতে পারবেন সেই সময়ের হাজার টাকা আজকের দিনে কত টাকা হতে পারে /বাকিটা আপনারা বিচার করবেন/ 

#সত্যি বলতে কি উত্তমকুমার কত বড় অভিনেতা সেই নিয়ে প্রতিদিন হয়ত অসংখ্য লেখা লেখেন অনেক মানুষ,কিন্তু অভিনেতা উত্তমকুমার কত বড় মনের মানুষ ছিলেন তাঁর জীবনের এই মহৎ দিকটা কেন জানিনা তেমন ভাবে কোথাও আলোচনা হয় না!নাকি আমাদের চোখে পড়ে না!( সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ)

# এ পোড়া দেশের সাংবাদিক, কত 

সিকি,আধুলি মার্কা অভিনেতা কে

পারলে অস্কার পাইয়ে দেন/ কালো

ছোপের ওপর 'ফেয়ার এন্ড লাভলি'র 

 কোমল প্রলেপ/ সংবাদপত্রের শিরোনাম/ পরের দিন কোন বিশেষ 

কারনে অভিনেতার কারাবাস/তাঁদের 

নিয়ে আমাদের কি উল্লাস!

# কিন্ত যে মানুষ টি ভারতীয়  চলচ্চিত্র জগতের প্রথম অভিনেতা ,

 ভরত পুরস্কার ( জাতীয় পুরস্কার)

পেয়েছিলেন/ আমরা সেই মানুষটি

কে কেমন করে মনে রেখেছি/ বন্যা, খরা,ত্রাণের কাজে তিনি ছিলেন সবার আগে সবার মাঝে/

# তিনি আমাদের মহানায়ক অন্য

এক উত্তম/

আসুন  আমরা সবাই  আভূমি প্রনাম জানাই /

আপনাদের একান্ত আপনজনশ্রী অমলেশ ভূঞ্যা 

সভাপতি শ্রী  সনৎ কুমার বটব্যাল ।

সাধারণ সম্পাদক প্রতিবিম্ব (নাট্য সংস্থা)

 শহীদ পাঠাগার চৈতন্যপুর হলদিয়া 

পূর্ব মেদিনীপুর ।

তথ্যঋণ ও কৃতজ্ঞতা- সাতরঙ

রবি বসু

No comments