১২ জানুয়ারি (১৮৬৩) স্বাধীন দেশের বীজ পোঁতা হয়েছিল, শুরু হয়েছিল না থামা তরঙ্গের, যা আজও বয়ে চলেছে। ৮ ডিসেম্বর (১৮৭৯) ও ২৫ মে (১৮৮৬) দেখালেন পথ, শেখালেন কৌশল; যাবার আগে লক্ষ্যস্থির দায়িত্বও তুলে দিলেন। বহু নমস্য আশ্চর্য অভূতপূর্ব এ…
১২ জানুয়ারি (১৮৬৩) স্বাধীন দেশের বীজ পোঁতা হয়েছিল, শুরু হয়েছিল না থামা তরঙ্গের, যা আজও বয়ে চলেছে। ৮ ডিসেম্বর (১৮৭৯) ও ২৫ মে (১৮৮৬) দেখালেন পথ, শেখালেন কৌশল; যাবার আগে লক্ষ্যস্থির দায়িত্বও তুলে দিলেন। বহু নমস্য আশ্চর্য অভূতপূর্ব এইরকম বহু শ্রেষ্ঠ জন্ম তারিখ সকলকে প্রণাম জানিয়ে মাথায় তুলে বলছি - ভারতবর্ষের জীবনে ২৩ জানুয়ারি (১৮৯৭) এক সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। ২১ অক্টোবর (১৯৪৩) এক অনন্য শ্রেষ্ঠ দিন। আর ১৪ এপ্রিল (১৯৪৪) এক আলাদা মর্যাদার দিন, গর্বের দিন - এইদিন সামনাসামনি যুদ্ধে লড়াই করে রক্ত ঝরিয়ে বলিদান দিয়ে ব্রিটিশদের থেকে দেশের একখণ্ড জমি পুনরুদ্ধার করে স্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজ তেরাঙ্গা পতাকা উড়িয়ে ছিল।
তিন-চারদিন ধরে চলা এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শেষে জয়লাভ করে আমাদের দেশের প্রথম স্বাধীন মাটিতে উড়লো ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। স্থান - মৈরাং, দিন - ১৯৪৪ সালের ১৪ এপ্রিল, বিকেলে। ২১ অক্টোবর ১৯৪৩ ঘোষিত হয়ে ছিল আজাদ হিন্দের ভারত সরকার - আর্জি হুকুমত-ই-আজাদ হিন্দ। জার্মানি, ইটালি, জাপান সহ অক্ষশক্তি ভুক্ত দেশগুলি ও আরও ৭টি দেশ সাথে সাথে সমর্থন জানায়। স্বয়ং নেতাজী প্রস্তুত, অস্ত্র সহ সেনা তৈরি, ব্যাংক তৈরি, জাতীয় সংগীত তৈরি, একটি দেশ ও সরকারের যা যা দরকার সব তৈরি, শহীদ ও স্বারাজ নামে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হাতে এসেছে, শুধু নেই যুদ্ধে বাইরের শত্রুকে পরাজিত করে স্বাধীন দেশের কোনো নির্দিষ্ট ভূমিখণ্ড। অথচ জাতির প্রধানতম শর্তই হ'ল নিজের মাটি। তাই আজকের এই দিনটি প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মর্যদা রক্ষার দিন।
লেখার প্রথমে যে লাইনটা লিখেছি, তাতে ফিরে আসছি। কখনও খাবার নষ্ট করবেন না। সকল নেতাজীপ্রেমী মনেরাখবেন- একপ্রকার ব্যবহার করা যুদ্ধাস্ত্র নিয়েই সামনাসামনি একটাও যুদ্ধে না হেরে আজাদ হিন্দ ফৌজ তবু পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। কেন জানেন.. পর্যাপ্ত খাবার ছিল না বলে। আবহওয়া ও পরিস্থিতি বিরুদ্ধ থাকায় আজাদ ফৌজ শিবিরে খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। চর মারফত যে খবর পেয়ে শত্রু ইঙ্গ-মার্কিন শিবির থেকে আজাদ সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করে খাবার খাওয়ার প্রলোভন দিয়ে মাইকে বারবার ঘোষণা করেছে, দূর থেকে খাবারের প্যাকেট দেখিয়েছে। তবু দু-তিন দিন প্রায় কিছু না খেয়েই আজাদ সৈন্যরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই দুচোখে জল চেপে রেখে নেতাজী ফৌজকে ফিরে আসার আদেশ দিয়েছিলেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে আজাদ হিন্দ ফৌজের বীরত্বের কথা। অভুক্ত আজাদ ফৌজ যখন পিছিয়ে আসছে তখনও ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী ভয়ে আজাদ ফৌজকে আক্রমণ করার সাহস দেখায়নি। আমাদের মনে রাখতে হবে নেতাজী তাঁর অঙ্গীকার রক্ষা করেছিলেন। নেতাজী বলেছিলেন, আইএনএ ভারতের মাটিতেই সর্বপ্রথম তাদের রক্ত ঝরাবে। সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, বার্মা জয় করে সেখান থেকে মণিপুরের কোহিমা, ইম্ফল হয়ে মৈরাং অভিযান। পূর্ব ভারতের ১৫০ মাইল এলাকা আজাদ হিন্দ ফৌজের দখলে আসে। আমাদের এক অতি গৌরব ইতিহাস। মৈরাংয়ে ঠিক সেই জায়গায় পতাকা আজও উড়ছে ..
জয়তু নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু
No comments