অভিজিৎ মিশ্র - হলদিয়া ঃঃ ২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া হেলিপ্যাড ময়দান থেকে ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। এদিন হলদিয়া রিফাইনারি নতুন প্রোজেক্টের শিলান্যাস ও ব…
অভিজিৎ মিশ্র - হলদিয়া ঃঃ ২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া হেলিপ্যাড ময়দান থেকে ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। এদিন হলদিয়া রিফাইনারি নতুন প্রোজেক্টের শিলান্যাস ও বিপিসিএল এবং হলদিয়া উড়ালপুলের উদ্বোধন করে জাতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত করলেন। অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে একটি রাজনৈতিক জনসভায় যোগ দেন তিনি। আর সেই জনসভা থেকে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে তুলোধনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন , বাম আমলের থেকে এখন বাংলার অবস্থা আরও খারাপ উল্লেখ করে মোদী বলেন, “২০১১ সালে পুরো দেশের নজর ছিল বাংলার উপর। বামেদের অত্যাচার ছিল চর্চার বিষয়। ওই সময় মমতাদিদি বাংলায় পরিবর্তনের স্লোগান তুলেছিলেন। পুরো দেশের ধ্যান ছিল সেখানেই। মানুষ মমতার উপর ভরসা করেছিলেন। কিন্তু মমতা চেয়ে বাংলার মানুষ নির্মমতার শিকার হয়ে গেলেন মানুষ”। পরিবর্তনের পর কী হল? মোদীর কথায়, “এক বছরেই বাংলার মানুষ বুঝে গেলেন, তাঁরা পরিবর্তন পাননি, পেয়েছেন বামেদের পুনর্জীবন। সেটাও সুদ সমেত। বামেদের পুনর্জীবনের অর্থ দুর্নীতি, অপরাধ, অপরাধী আর হিংসার পুনর্জীবন। যে কারণে বাংলা গরিবি বেড়ে গেল কয়েকগুণ”। তাছাড়া ক্ষমতায় থেকে একের পর এক ‘ফাউল’ করেছে তৃণমূল। তাই তাদের এবার ‘রাম কার্ড’ দেখাবে বাংলার মানুষ। রবিবার হলদিয়ায় তৃণমূলকে এই ভাষাতেই আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পিসি-ভাইপোর শাসনের শেষ সময় হাজির হয়েছে। ‘বাংলার মানুষ ফুটবল ভালবাসেন। তাই আমি ফুটবলের ভাষায় বলবো, তৃণমূল সরকার একের পর এক ফাউল করে ফেলেছে। অপশাসনের ফাউল, বিরোধীদের ওপর হামলা ও হিংসার ফাউল, বাংলার মানুষের টাকা লুঠ করার ফাউল। ধর্মবিশ্বাসের ওপর আঘাত করার ফাউল। বাংলার মানুষ সব দেখছেন। তাই খুব তাড়াতাড়ি বাংলা তৃণমূলকে রাম কার্ড দেখাবে’।
পাশাপাশি এদিন আমফানের ত্রাণ দুর্নীতি নিয়ে তীব্র ঝাঁঝে মমতা সরকারকে আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, 'আমফানের জন্য কেন্দ্র যে পয়সা পাঠিয়েছিল, সেই পয়সা কোথায় গিয়েছে সবাই জানে। আদালতও এর নিন্দা করেছে।' তাঁর কথায়, 'এত বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এল, ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেক টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই টাকার জন্য আদালতকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়। করোনার সময়ও কম বিপদ ছিল না। অনেক মানুষের রোজগার চলে গিয়েছিল। বাংলার মানুষের জন্য সেই সময় বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্রের রেশন এখানকার সরকার সঠিক ভাবে দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেনি।'
এরই সঙ্গে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকদের কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রাখার অভিযোগ তুলেছেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস, 'বাংলায় বিজেপির সরকার গঠন হলে কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্প অতি দ্রুত বাংলায় কার্যকর হবে। দেশের অন্য কৃষকদের মতো সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাবেন বাংলার কৃষক।' মোদির কথায়, 'ভাগ্য ভালো কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার ৪ কোটি মানুষের জন ধন অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। তার জন্যই করোনার সময় সরকারের কাছ থেকে চাকা পেয়েছিলেন মানুষ। করোনার সময় কৃষকদের অ্যাকাউন্টে মোট ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। বাংলার কৃষকরাও এই সুবিধা পেতে পারতেন। কিন্তু এখানকার সরকার এই প্রকল্পই নিতে চায়নি।'
কেন্দ্রীয় প্রকল্প না পাওয়া এবং তৃণমূলের দুর্নীতির শিকার বাংলার মানুষ এবার মমতাদিকে শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বলেই আত্মবিশ্বাসী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথায়, 'তা বুঝেই সে নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু সরাসরি কৃষকদের পিএম সম্মান নিধি প্রকল্পের সুযোগ দিতে চায় না তৃণমূল সরকার। শুধু ৬ হাজার কৃষকের নাম পাঠিয়েছিল তারা। কিন্তু তাঁদেরও টাকা দিতে পারছে না কেন্দ্র। কারণ তৃণমূল সরকার এখনও পর্যন্ত তাঁদের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রকে দেয়নি। এই সংবেদনহীনতা দেখছেন বাংলার কৃষক। কারা তাঁদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করছে।'
No comments