খুব প্রয়োজনীয় সপুষ্পক ভেষজ উদ্ভিদ বাসকের মধ্যশিরা থেকে পাওয়া গেল গুচ্ছমূল। এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানা আশ্চর্য ঘটনা। যার কিছু আমাদের নজরে পড়ে আবার কিছু ঘটনা আমাদের নজরের বাইরে ঘটে। উদ্ভিদ জগৎও এই প্রক্রিয়ায় বাইর…
খুব প্রয়োজনীয় সপুষ্পক ভেষজ উদ্ভিদ বাসকের মধ্যশিরা থেকে পাওয়া গেল গুচ্ছমূল। এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানা আশ্চর্য ঘটনা। যার কিছু আমাদের নজরে পড়ে আবার কিছু ঘটনা আমাদের নজরের বাইরে ঘটে। উদ্ভিদ জগৎও এই প্রক্রিয়ায় বাইরে নয়। উদ্ভিদ জগতেও ঘটে চলেছে নানা আশ্চর্যজনক ঘটনা। অনেক সময় অনেক কিছু আমাদের নজরের বাইরে ঘটলেও, অনেক পরিবর্তন বা আশ্চর্য ঘটনা নজর এড়াতে পাচ্ছে না উদ্ভিদবিদ্যার ছাত্র, গবেষক ও উদ্ভিদবিদ্যার বিজ্ঞানীর নজর থেকে।
আর তারই জেরে সবার সমনে আসছে নানা পরিবর্তনের চিত্র।
ক’দিন আগেই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উদ্ভিদবিদ্যার ছাত্রী ফতেমা খাতুনের নজরে এসেছিল পেঁপের ভিতরে পেঁপে। তারপরই আরও অভাবনীয় ঘটনা ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মিমোসা ঘোসের নজরে এসেছিল লেবুর ভেতর মিলেছিল আস্ত । যা একটি বিরলতম ঘটনা বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞ অমলকুমার মন্ডল। এছাড়াও কয়েকদিন আগে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার সায়ন্তন ত্রিপাঠীর নজরে এসেছিল পেঁপের ভিতর পেঁপে।এবার উদ্ভিদ জগতের আরও একটি আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলো পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরে। শনিবার পটাশপুর থানা এলাকার দেউলবাড় গ্রামে দেখা গেল বাসক পাতা (Justicia adhatodaL.) থেকে বেরিয়েছে গুচ্ছমূল! মাটিতে পড়ে থাকা একাধিক পাতায় এমন দৃশ্য দেখা যায়। তা নজরে আসে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা ও বনবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র গৌতম পণ্ডার। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একজন জিজ্ঞাসু ছাত্র হিসেবে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে একগুচ্ছ। এই ধরণের সপুষ্পক উদ্ভিদের ক্ষেত্রে তো পরাগমিলন ঘটে। অঙ্গজ জনন তো দেখা যায় না! তা সত্ত্বেও কিভাবে এমন ঘটনা ঘটল? তাও আবার পাতার কোনও ধার থেকে নয়, মধ্য শিরা থেকে মূল বেরিয়েছে! ছাত্র গৌতম পণ্ডার কথায়, আমরা সাধারণত দেখেছি পাথরকুচি, বিগনিয়া ইত্যাদির পত্রজ মূল দেখা যায়। বাসকের ক্ষেত্রে তা দেখে অদ্ভুত লেগেছে। আমরা এটাকে কি অস্থানিক মূল বলব না পত্রজ মূল? পাথরকুচির ক্ষেত্রে মূলত আমরা দেখেছি, পাতার কিনারা থেকে মূল বেরোয, এবং তা থেকে মুকুল হয়ে পুনরায় নতুন চারা গাছের জন্ম হয়, কিন্তু এ ক্ষেত্রে মুলটি উৎপন্ন হয়েছে পাতার মধ্য শিরা থেকে, এটা আরও আশ্চর্যের ব্যাপার।’’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অমলকুমার মন্ডলকে বিষয়টি জানান। সব শোনার পর কিছু ব্যাখ্যাও দেন তিনি। যদিও সম্পূর্ণ কারণ জানতে গবেষণার প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কী কী কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? এর থেকে কি নতুন চারা গাছের জন্ম হতে পারে? কেনই বা উদ্ভিদটির এমন ধরণের অভিযোজন? অধিক পুষ্টির কারণে কী এটা সম্ভব? এমন নানা প্রশ্ন জেগেছে ছাত্রের মধ্যে। এব্যাপারে অমলবাবু অবশ্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। অমলবাবুর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই ধরণের ঘটনার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। প্রথম কারণটি হল, নিশ্চয় পরাগ মিলনের ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকতে পারে। তাই নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কঠিন লড়াই করে অভিযোজন ঘটিয়েছে বাসক। এটাই যদি কারণ হয়ে থাকে তাহলে প্রকৃতির ক্ষেত্রে তা মঙ্গলজনক বলেই মনে করেন অমলবাবু। তাঁর মতে, বাসকের ভেষজ গুণ রয়েছে। যা বিভিন্ন ভাবে মানুষের উপকারে লাগে। অঙ্গজ জনন হলে তা সহজেই বেশি চাষ করা যাবে। এতে আখেরে লাভই হবে।
বেশি পুষ্টির কারণে হয়েছে কিনা সেটি মাটি পরীক্ষা ছাড়া বলা কঠিন বলে জানিয়েছেন অমলবাবু। তিনি জানান, মাটি পরীক্ষা ছাড়া পুষ্টি নিয়ে বলা কঠিন। আবার এক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়, পুষ্টি বেশি হলে পাতা মাটিতে পড়ার পর দ্রুত পচন ধরার কথা। এক্ষেত্রে তো তা হয়নি। এর থেকে নতুন গাছ বেরোনো সম্ভব কিনা? তার উত্তরে অমলবাবু জানান, শেকড় যেহেতু বেরিয়েছে, তাই নতুন গাছও হওয়া অসম্ভব নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
No comments