নতুন লক্ষ্য স্থির করা বা নতুন স্বপ্ন দেখার জন্য বয়স কোনও বাধাই নয়” আর সেই কথা প্রমাণ করে দেখালো শিল্পনগরী হলদিয়া'র সাইক্লিস্ট মলয় কুমার পাত্র। হলদিয়া শহরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম সুতাহাটা থানার অন্তর্গত গুয়াবেড়িয়া।এই গ্রাম…
নতুন লক্ষ্য স্থির করা বা নতুন স্বপ্ন দেখার জন্য বয়স কোনও বাধাই নয়” আর সেই কথা প্রমাণ করে দেখালো শিল্পনগরী হলদিয়া'র সাইক্লিস্ট মলয় কুমার পাত্র। হলদিয়া শহরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম সুতাহাটা থানার অন্তর্গত গুয়াবেড়িয়া।এই গ্রামের নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মলয়। অভাবের সংসার কিন্তু চোখে ছিলো স্বপ্ন ও মনে ছিলো অদম্য ইচ্ছাশক্তি। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সম্পর্কে জানার, ভারত বৈচিত্র্যময় দেশ। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য তরুন বয়স থেকে ইচ্ছে ছিলো কিন্তু তার জন্য দরকার অর্থ। কিন্তু যে পরিবারে অভাব নিত্য সঙ্গী তাদের কাছে এই স্বপ্ন অনেকের কাছেই পাগলের প্রলাপ।
কথায় আছে ইচ্ছে থাকলে উপায় ঠিক বেরিয়ে পড়ে। মলয় পরিবেশ বান্ধব যান 'সাইকেল' নিয়ে ভারত ভ্রমন করে পূর্ব মেদিনীপুর তথা পশ্চিমবঙ্গ কে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ২০১৬ সালে ১২০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। তার মিশন দূষনমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা।
সাইকেল চালিয়ে পৃথিবী দেখার অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমন করে এসেছেন তিনি। দেখেছেন রাজ্যে রাজ্যে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ভাষার তারতম্য। অদ্ভুত, মজার ও বিচিত্র সব ঘটনা-গল্প জমা হয়েছে তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে। সুতাহাটা'র টগবগে যুবক ‘সাইক্লিস্ট মলয়’ ।
মলয় যখন তার এই সাইকেলে ভারত ভ্রমনের কথা পরিবারকে বলেন, পরিবার সন্মতি দেয়নি, কারন তখন সবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন । ওই আঠারো বছর বয়সে এই দুঃসাহসিক অভিযানে ছিলো অনেক বাধা বিপত্তি। পরে মায়ের দেওয়া ৩০০ টাকাতে পুরোনো সাইকেল কিনে বেরিয়ে পড়লেন অজানা কে জানতে ও অদেখা কে দেখতে। ছিলোনা তেমন কোন আর্থিক সাহায্য ছিলো শুধু অদম্য ইচ্ছাশক্তি। তাই তো ১৮০ টি রাজ্যের বিভিন্ন থানা থেকে পেয়েছেন সংশয়া পত্র । নেপাল, ভূটান কয়েক বছর আগেই পাড়ি দিয়ে এলেন এইবার স্বপ্ন পৃথিবী ভ্রমন। তার জন্য চাই সরকারী সাহায্য ও অনুমতি। হয়তো খুব বেশী দিন নয় সেই দিন। এখন পরিস্থিতি আলাদা। হয়তো সব স্বাভাবিক হলেই বেরিয়ে পড়বেন মলয় ।
পরিবেশ বান্ধব যান সাইকেল ও সবুজায়নের লক্ষ্যে তার এই পথ চলা। বার্তা একটাই সাইকেল সাশ্রয়ী ও শরীরচর্চার জন্য অনেক ভালো।
পৃথিবী ঘুরে আসা সোজা আকাশে উড়ে সে না হয় অনেকেই করেছে। কিন্তু সাইকেলে চড়ে পৃথিবী দেখার স্বপ্ন কজন দেখে? আর এখন একটাই স্বপ্ন শ্রীলংকা, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, মালয়েশিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। স্বপ্ন দেখা হাতেগোনা অল্প কয়েকজনের একজন মলয়।
কথা প্রসঙ্গে মলয় জানান অনেক রাজ্যে বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে,হিমাচল প্রদেশে দুষ্কৃতিদের কবলে এমনি উত্তর প্রদেশের এক থানায় তাকে বাংলাদেশী বলে আটক করে। পরে অবশ্য সততা যাচাই করে সসন্মানে ফিরে আসেন। মলয় বলেন বহুত মানুষের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা খুব পেয়েছি। গুজরাট ও মহারাষ্ট্র তে আন্তরিকতায় উনি বেশী মুগ্ধ।
আমার ব্যক্তিগত ভাবে মলয়ের সাথে পরিচয় হয়ে খুবই ভালো লাগলো। খুব সহজ সরল মনের মানুষ। এখন তিনি হলদিয়া গভর্নমেন্ট কলেজে ভূগোল তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
বর্তমান হাল ফ্যাশনের তরুণ-তরুণীরা চায় বৈচিত্র্যের সন্ধান। জীবনের ঘ্রান। নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি, ফেসবুক, টুইটার , ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ ডিজিটাল জীবনের নানা উপকরণ জীবনে দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ আনলেও অনেকের কাছেই একটু বাড়তি চাহিদা থাকে সোদা মাটির পরশ, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সুধাপান, জীবনের উচ্ছ্বাস, ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন পরিবেশে মাঝে আনন্দের অনুসন্ধান, আবার একই সাথে মাটি, মানুষ ও দেশের সম্পর্কে জানার স্পৃহা।
মলয় কে এলাকার শুভানুধ্যায়ী বহু মানুষ শুভেচ্ছা জানিয়ে ছেন। পঃবঃ বিজ্ঞান মঞ্চ সুতাহাটা কেন্দ্র সম্পাদক নকুল ঘাঁটি বলেন আগামী দিনে তুমি তোমার লক্ষ্য ঠিক পূরন করবে, অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো।
No comments