Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তুমি ঠিক ✅— কিন্তু তা প্রমাণ করে না যে আমি ভুল ❌: আশিস কুমার পন্ডা

তুমি ঠিক ✅— কিন্তু তা প্রমাণ করে না যে আমি ভুল ❌: আশিস কুমার পন্ডাআমাদের প্রত্যেকেরই জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত এসেছে, যখন মনে হয়েছে, কেউ আমাদের ঠিকভাবে বুঝতে পারছে না, বা এমন অনেকের উপর বিরক্ত হয়েছি, যাদের সঙ্গে কোন না কোন জিনিস নিয়…

 



তুমি ঠিক ✅— কিন্তু তা প্রমাণ করে না যে আমি ভুল ❌: আশিস কুমার পন্ডা

আমাদের প্রত্যেকেরই জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত এসেছে, যখন মনে হয়েছে, কেউ আমাদের ঠিকভাবে বুঝতে পারছে না, বা এমন অনেকের উপর বিরক্ত হয়েছি, যাদের সঙ্গে কোন না কোন জিনিস নিয়ে মতভেদ হয়েছে। কিন্তু পরে বুঝেছি — তারা ভুল ছিল না। তারা এমন কিছু দেখেছিল, যা আমরা দেখিনি।

আমাদের নিজস্ব ভাবনা, কথা বলার ধরণ বা বাঁচার পদ্ধতিকে মাপদণ্ড করে বিশ্বের সবকিছুকে খুব সহজ এক সমীকরণে ফেলে আমরা দু’ভাবে বিচার করতে চাই — হয় ঠিক, নয়তো ভুল। কিন্তু বাস্তব এতটা সহজ নয়। দু’জন মানুষ একই ঘটনা বা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে পারে, একই জিনিস দেখতে পারে, তবুও তাদের উপলব্ধি একেবারে আলাদা হতে পারে — এবং আশ্চর্যের বিষয়, দু’জনেই নিজের নিজের জায়গায় ঠিক হতে পারে।

👉কয়েকটা সহজ উদাহরণ দেখা যাক:

Ø  6 না 9? — দুইজন মানুষ মাটিতে আঁকা এক সংখ্যার বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে আছে। একজন বলছে, এটা 6 । অন্যজন বলছে, না, এটা 9 । দু’জনেই ঠিক — শুধু তাদের দেখার দিকটা আলাদা।

Ø  অর্ধেক ভর্তি গ্লাস — একজন বলছে “অর্ধেক ভর্তি”, আরেকজন বলছে “অর্ধেক খালি”। একই গ্লাস, কিন্তু দু’জনের মানসিকতা আলাদা।

Ø  ভোরের পাখি না ভোরের পোকা? — একজন বলছে, “যে পাখি আগে ওঠে, সেই পোকা ধরে”, আরেকজন বলছে “যে পোকা আগে ওঠে, সেই শিকার হয়।” সত্যের দু’ই দিকই আছে।

Ø  লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’ — কেউ তার হাসিতে প্রশান্তি দেখে, কেউ খুঁজে পায় বিষাদ বা রহস্য। ছবিটি বদলায়নি — বদলেছে দর্শকের দৃষ্টি।

Ø  এক বৃষ্টির সকাল — একজনের কাছে তা রোমান্স আর কবিতা, অন্যজনের কাছে ঝামেলা, দেরি আর অস্বস্তি।

👉এই ছোট ছোট উদাহরণগুলো কয়েকটি গভীর শিক্ষা দেয় 

Ø মানুষের উপলব্ধি আর যোগাযোগের মূলেই আছে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।

Ø বাস্তবতা অনেক গভীর ও বিশাল, আমাদের চোখে যে অংশটি ধরা পড়ে, সেটি সেই বিশাল বাস্তবতার এক টুকরো মাত্র।

Ø সত্যকে হাজার রকমভাবে বলা যায়, তবুও প্রতিটি কথাই সত্য হতে পারে।

Ø যা আমাদের কাছে বাস্তব, অন্যের কাছে তা অদৃশ্য হতে পারে — কারণ সে অন্য দিক থেকে দেখছে বা তার দেখার ভঙ্গী আলাদা।

👉কেন ভিন্ন ব্যক্তি একই জিনিসকে ভিন্নভাবে দেখে ও বোঝে?

আমাদের মস্তিষ্ক পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রথমে তথ্য নেয় — দৃষ্টি, শ্রবণ, স্বাদ, গন্ধ এবং স্পর্শ। পরের পর্যায়ে আমাদের বয়স, পরিবেশ, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি, বিশ্বাস আর আবেগের উপর ভিত্তি করে এই তথ্যগুলিকে বিশোধন করে ও সাজিয়ে নেয়। এই প্রক্রিয়া ঠিক করে দেয় আমরা তথ্যের কোন অংশে মনোযোগ দেব, কোনটা উপেক্ষা করব, আর কেমনভাবে আমরা নিজের “সত্য” তৈরি করব। এককথায়, আমরা বাস্তবতাকে সরাসরি দেখি না — আমাদের অভিজ্ঞতার চশমা দিয়ে সেটাকে ব্যাখ্যা করি।

👉যখন এক “ঠিক” আর এক “ঠিক”-এর মুখোমুখি হয়?

এই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলি অনেক সময় বিরোধের সৃষ্টি করে।

এক সাধারণ মতের অমিল থেকেই জন্ম নেয় বিতর্ক, ভুল বোঝাবুঝি বা সম্পর্কের টানাপোড়েন — শুধু এক পক্ষ ভুল বলেই নয়, বরং দু’পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা বলেই। যখন আমরা এটা বুঝতে পারি না, তখন একে অপরকে শোনা বন্ধ করে দিই, আর নিজেদের অবস্থান রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফলাফল? সেতুর জায়গায় তৈরি হয় দেয়াল, সংযোগের জায়গা নেয় সংঘাত।

👉ব্যবধান কীভাবে মিটবে?

দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যকে স্বীকৃতি ও মূল্য দিতে পারলে উন্নত হতে পারে সম্পর্ক, দলগত কাজের মান, এমনকি ব্যক্তিগত বিকাশ। যেহেতু আমরা প্রত্যেকে পৃথিবীকে ভিন্নভাবে দেখি, তাই এই ব্যবধান কমানোর কিছু সহজ উপায় রয়েছে:

Ø  প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে শোনো: মতের মিল না হলে, নিজেকে জিজ্ঞাসা কর — “সে এমন কী দেখছে যা আমি দেখছি না?” কৌতূহল সংঘাতকে পরিণত করে সংযোগে।

Ø  নিজের পক্ষপাত মনে রাখ: আমরা প্রত্যেকেই নিজের পক্ষপাতিত্ব  দিয়ে দেখি। সেটা মনে রাখলে দৃষ্টি পরিষ্কার হয়।

Ø  অন্যের জায়গায় নিজেকে বসাও: সহানুভূতির সঙ্গে অন্যের চোখ দিয়ে ঘটনাটা দেখো — অনুমান নয়, অন্যের হয়ে উপলব্ধি কর।

Ø  অন্যের মতামতকে সম্মান করো: অন্যের মতামত বোঝা মানে একমত হওয়া নয় —অন্যের ভাবনাকেও মর্যাদা দেওয়া।

Ø  বোঝার চেষ্টা করো, জেতার চেষ্টা নয়: আলোচনা কোন যুদ্ধ নয়; বোঝাপড়াই উদ্দেশ্য, নিজেকে প্রমাণ করা নয়।

Ø  তথ্যের চেয়ে অন্যের আবেগকে বেশি গুরুত্ব দাও: তথ্য মানুষকে আলাদা করে, কিন্তু আবেগ তাদের যুক্ত করে। আগে অনুভব করো, তারপর মতামত দাও।

Ø  পারস্পরিক বোঝাপড়ার জায়গা খুঁজে নাও: প্রায় সকলেই চায় সম্মান, শান্তি, ন্যায্যতা। তাই, দেয়াল না বানিয়ে সেতু বানাও।

Ø  প্রশ্ন করো: অনুমান করো না। জিজ্ঞাসা করো — “আমি কি ঠিক বুঝেছি?” বা “তুমি কি এভাবেই দেখছ?” প্রশ্ন দরজা খোলে, তর্ক দরজা বন্ধ করে দেয়।

👉শেষ কথা:

শুধু জ্ঞান যথেষ্ট নয় — মানুষকে না বুঝলে তথ্যও অর্থহীন হয়ে যায়।

তাই, পরের বার যখন তোমার মনে হবে তুমিই ঠিক, একটু থামো ও ভাবো — হয়তো তুমি ঠিক, কিন্তু হয়তো অন্যজনও ঠিক। তুমি হয়তো তার দিকটা এখনো দেখনি। “কে ঠিক” —  এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো “দুজনের কাছেই কোনটা ঠিক।” বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের চিন্তাকে সমৃদ্ধ করে, আর আমরা আরও প্রাজ্ঞ হই যখন নিজেদের দৃষ্টির বাইরে দেখতে শিখি। যখন দল বা সহকর্মীরা একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গিকে চিনতে ও সম্মান করতে শেখে, তারা একে অপরের শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। আর যারা এই ভিন্নতাকে মূল্য দেয়, তারাই তৈরি করেন সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন আর বিশ্বাসের পরিবেশ। প্রজ্ঞা তর্কে জেতা থেকে নয় — হৃদয়কে বোঝা থেকেই আসে।

No comments