Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

রাজকীয় ভোজ– আশিস কুমার পণ্ডা!

রাজকীয় ভোজ– আশিস কুমার পণ্ডা!
একদিন, এক ব্যক্তি এক রেস্তোরাঁয় ঢুকে মেনু দেখে খাবারের অর্ডার দিলেন। তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগলেন। প্রায় বিশ মিনিট পর, একদল লোক হৈ-হৈ করে এসে খাবারের অর্ডার দিলেন। ব্যক্তিটি অবাক হয়ে দেখলেন — …

 




রাজকীয় ভোজ– আশিস কুমার পণ্ডা!


একদিন, এক ব্যক্তি এক রেস্তোরাঁয় ঢুকে মেনু দেখে খাবারের অর্ডার দিলেন। তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগলেন। প্রায় বিশ মিনিট পর, একদল লোক হৈ-হৈ করে এসে খাবারের অর্ডার দিলেন। ব্যক্তিটি অবাক হয়ে দেখলেন — সেই লোকদের খাবারই আগে পরিবেশন করা হলো।  তারা হাসাহাসি করে আনন্দে খেতে শুরু করলেন, এমনকি গর্ব করে বললেন, “এখানে আমাদের সবাই চেনে, তাই আমাদের খাবার তাড়াতাড়ি আসে।”

লোকটির মন খারাপ হয়ে গেল। তিনি তো অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন! একবার তিনি চলে যাওয়ার কথা ভাবলেন, কিন্তু আবার কী ভেবে অপেক্ষা করতে লাগলেন। দেখতে দেখতে প্রায় আধ ঘণ্টা কেটে গেল। ব্যক্তিটির এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো। তিনি ওয়েটারকে ডেকে বললেন, “আমার খাবার আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন? আমার পাশের টেবিলের লোকেরা আমার পরে এসেও আমার আগে খাবার পেয়ে গেলেন! এটা তো অন্যায়।”

ওয়েটার এক গ্লাস জুস ব্যক্তিটির সামনে রেখে হাসিমুখে বললেন, “স্যার, আপনার অর্ডারটা সাধারণ নয়। আমাদের প্রধান শেফ নিজে সেটা রান্না করছেন। ওই লোকদের খাবার বানিয়েছে প্রশিক্ষণরত শেফরা, কারণ প্রধান শেফরা আপনার খাবার বানাতে ব্যস্ত। তাই ওদের খাবার আগে এসেছে। আপনার খাবারও আসছে। ততক্ষণ এই তাজা জুসের স্বাদ নিন।” ব্যক্তিটি জানতেন না যে রেস্তোরাঁর মালিক — তারই এক পুরানো বন্ধু। বন্ধুকে চমকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। প্রধান শেফকে তিনি বলে দিয়েছিলেন, “এই খাবার হবে আলাদা—সাধারণ নয়, একেবারে রাজকীয়।” কিছুক্ষণ পর, রেস্তোরাঁর মালিক তার পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তাকে চমকে দিলেন। ঠিক তখনই ছ’জন ওয়েটার সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে এসে ঝলমলে ট্রেতে সাজানো খাবার রাখল সামনে। প্লেটের প্রতিটি কোণে ছিল যত্নের ছোঁয়া, আর পরিবেশনায় ছিল আন্তরিকতা ও আপ্যায়নের উষ্ণতা। রেস্তোরাঁর মালিক তার বন্ধুকে এক বিশিষ্ট ব্যক্তির মর্যাদা দিয়ে যত্ন করে খাওয়াতে লাগলেন। দূরের  টেবিলের অতিথিরা এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তাদের মধ্যে একজন ফিসফিস করে বলতে লাগলেন, “আমাদের খাবারটা এমনভাবে পরিবেশন হলো না কেন?”

জীবনও অনেকটা এরকম। আমরা দেখি, অনেক সহপাঠী বা সহকর্মী আমাদের চেয়ে আগে সফল হচ্ছে — ভালো রেজাল্ট করছে, পুরস্কার জিতছে, চাকরি পাচ্ছে, প্রমোশন পাচ্ছে, সংসার গড়ছে। তখন মনে হয়, “আমি নই কেন?”

কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্স, যিনি অগণিত প্রত্যাখ্যানের পর ৬৫ বছর বয়সে কেএফসি শুরু করেছিলেন; বা জো বাইডেন, যিনি বহু ব্যর্থতার পর ৭৮ বছর বয়সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন; কিংবা হরিয়ানার প্রত্যন্ত এক গ্রামের ভগবানি দেবী ডাগর, যিনি ৯৫ বছর বয়সে ওয়ার্ল্ড মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে তিনটি স্বর্ণপদক জিতেছিলেন; অথবা জন বি. গুডএনাফ, যিনি ৯৭ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন! এরা সকলেই প্রমাণ করেছেন — সফল হওয়ার জন্যে কোন বয়সই ‘খুব বেশি’ নয়।

আবার, কিছু তরুণ প্রতিভাও আছেন; যেমন এমা রাডুকানু, যিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইউএস ওপেন জিতেছিলেন, বা মালালা ইউসুফজাই, যিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তারা দেখিয়ে দিয়েছেন — সফল হওয়ার জন্যে কোন বয়সই “খুব কম” নয়।

সত্যিটা হলো — সবার পথ আলাদা, সময় আলাদা, জীবনের গতি আলাদা। কোন ফুল আগে ফোটে, কোনটা পরে — কিন্তু দু’টি ফুলই নিজের সময়ে সুন্দরভাবে বিকশিত হয়। কখনো কখনো কারো জীবনে  সাফল্য আসতে দেরি হয়, কারণ তার জন্য হয়তো কিছু অসাধারণ তৈরি হচ্ছে — একেবারে সেরা শেফের হাতে বানানো বিশেষ খাবারের মতো। আর যখন সেটা আসবে, তখন প্রতিটি অপেক্ষার মুহূর্ত সার্থক মনে হবে।

তাই, আপনার সাফল্য আগে আসুক বা পরে — কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যান, ধৈর্য ধরুন, আর নিজের যাত্রায় বিশ্বাস রাখুন। আপনি এগিয়েও নেই, পিছিয়েও নেই — আপনি আছেন আপনার সঠিক সময়ে, সঠিক গতিতে, সঠিক অবস্থানে। তাই হতাশ হবেন না। কোন বিশেষ সূর্যোদয় — তা আপনার কুড়ি বছরেই হোক বা সত্তর বছরে — হতে পারে আপনার জীবনের সেরা অধ্যায়ের শুরু।

No comments