Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

১২৭ বছরে পুরনো এই ডাক ব্যবস্থা শুধুই স্মৃতি! রেজিস্টার্ড লেটারও বিদায়ের পথে!

১২৭ বছরে পুরনো এই ডাক ব্যবস্থা শুধুই স্মৃতি! রেজিস্টার্ড লেটারও বিদায়ের পথে!
 'কত চিঠি লেখে লোকে কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে ছুটে চলো, ছুটে চলো আরো বেগে। দুর্দম, হে রানার।'সুকান্ত ভট্টাচার্যের কলমে, স…

 



১২৭ বছরে পুরনো এই ডাক ব্যবস্থা শুধুই স্মৃতি! রেজিস্টার্ড লেটারও বিদায়ের পথে!


 'কত চিঠি লেখে লোকে কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে ছুটে চলো, ছুটে চলো আরো বেগে। দুর্দম, হে রানার।'

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কলমে, সলিল চৌধুরীর সুরে ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে এই গান এক অমলিন সৃষ্টি। কিন্তু রানার-এর সে দিন গিয়েছে। দিন গিয়েছে পোস্টাকার্ড, ইনল্যান্ড, টেলিগ্রামেরও। এ বার সেই তালিকায় রেজিস্টার্ড পোস্ট-ও। ভারতীয় ডাক বিভাগ জানিয়েছে, আগামী মাসের ১ সেপ্টেম্বর তারিখ থেকে উঠে যাচ্ছে রেডিস্টার্ড পোস্ট। কাজের ভার কমাতে ও দ্রুতগামী করতে তা স্পিড পোস্টের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আশ্বাস, এতে কোনও সমস্যা হবে না। কারণ ট্র্যাকিং থেকে শুরু করে ডেলিভারি পুরোটাই রেজিস্টার্ড পোস্টের মতোই থাকবে। তাই আশঙ্কিত বা আতঙ্কিত হওয়ার

কিছু নেই। কিন্তু বহু মানুষের বিশেষ করে বর্তমানে যাঁরা প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ, তাঁদের সঙ্গে রেজিস্টার্ড পোস্টের এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। রেজিস্টার্ড চিঠি আসা মানে তার অন্য গুরুত্ব, মূল্য, ওজন ও বিশ্বাসযোগ্যতা। কারণ সে চিঠি সই করে নেওয়ার অর্থ, শুধু প্রাপ্তি স্বীকার নয়, বরং তাতে লুকিয়ে থাকে জীবনের অনেক পর্যায়েও। ফলে ইতিহাসের এক বিরাট অধ্যায়। আর এক মাসের মধ্যেই চিরতরে মুছে ফেলতে চলেছে ভারত।

১২৭ বছরের পুরোনো এই ডাক ব্যবস্থা ব্রিটিশ আমলে যেমন বিপ্লবীদের উপর নজরদারির জন্য ট্র্যাক করা হতো তেমনই সরকারি চাকরিতে যোগদানের চিঠি হোক বা বিয়ের পাকা কথা, কোনও নিকটাত্মীয়ের সন্তানের জন্ম বা প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট বা আইনি চিঠি সবই হতো এই রেজিস্টার্ড পোস্টের মাধ্যমেই।

গ্রামে এর আবার এর মাহাত্ম্য ছিল অন্য উচ্চতা। সাইকেল করে রেজিস্টার্ড চিঠি নিয়ে ডাকঘর থেকে কেউ এসেছেন এমন খবর এলেই যেন সব কাজ থেমে যেত। দুরুদুরু বুকে সে চিঠি খোলার অপেক্ষা। কখনও নতুন চাকরির খবর আবার কখনও বা জমি-বিবাদের আইনি চিঠি আবার কখনও অন্য কিছু মুহূর্তরা থাকত অপেক্ষায়। হয় তো বা তখন দিনের শেষের আলোটুকুও নিতু নিতু, কিন্তু সেই আলোতেই চাকরির পাকা চিঠি পেয়ে উজ্জ্বল গোটা গ্রামই। গ্রামে এর আবার এর মাহাত্ম্য

আবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের বছর ২০ আগেও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা-সহ বহু সময়ে বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা থাকত 'রেজিস্টার্ড পোস্ট ওনলি।' বর্তমানে অনলাইন ও ক্যুরিয়রের ঘনঘটায় সে দিন গেছে চলে। নবীন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা নস্ট্যালজিয়া। প্রজন্ম হয়তো বা জানবেই না এর সঙ্গে কারণ তারা জানে স্পিড। আর সেই স্পিড ও টাইম বাঁচাতেই 'ইন্ডিয়া পোস্ট'-এর এই পদক্ষেপ।

পোস্ট মিলিয়ে দেওয়ায় খরচ কমবে, সময় বাঁচবে, দ্রুত কাজ হবে- এই সব যুক্তি সত্ত্বেও প্রশ্ন, রেজিস্টার্ড পোস্ট তো ইতিহাসের অংশ। এ দেশের লক্ষ লক্ষ মামলায় রেজিস্টার্ড চিঠি পাঠানোর তারিখ ও তা গ্রহণ করার তারিখ, প্রেরক ও গ্রহীতা সবই আইনি তথ্য-প্রমাণ হিসেবেও বিবেচিত হতো। তাই যে প্রশ্ন উকি বিশ্বাসযোগ্যতা আর আদৌ বহাল দিয়েছে, বর্তমানের এআই যুগে সেই থাকবে তো?

ডাককর্মীর কথায়, 'আমরা তো এখন ভারতীয় ডাক বিভাগের এক ভারতীয়ত্ব রক্ষায় সব থেকে বেশি রীতি আর ঐতিহ্যকেই গুরুত্ব ঐতিহ্য। আধুনিকীকরণের নামে তাকে দেওয়ার কথা বলছি। এ-ও তো এক চিরবিদায় জানানো আমার পছন্দ হয়নি।' তাঁর বক্তব্য, আবেগ ছাড়া তো মানুষও রোবট। তাই এমন বিদায়ে কষ্ট হয় বই কী।

No comments