জমি জটে আটকে আইওসির পেট্রকেম প্রকল্প, পুরনো প্ল্যান্ট সরানোর উদ্যোগ!
জমি জটেই আঁধারে হলদিয়া আইওসি রিফাইনারির পেট্রকেম প্রকল্প। প্রায় এক দশক ধরে ইন্টিগ্রেটেড প্টেকেম প্রকল্পের জন্য হলদিয়ায় জমি খুঁজছে আইওসি কর্তৃপক্ষ। বন্ধ এইচএফসি স…
জমি জটে আটকে আইওসির পেট্রকেম প্রকল্প, পুরনো প্ল্যান্ট সরানোর উদ্যোগ!
জমি জটেই আঁধারে হলদিয়া আইওসি রিফাইনারির পেট্রকেম প্রকল্প। প্রায় এক দশক ধরে ইন্টিগ্রেটেড প্টেকেম প্রকল্পের জন্য হলদিয়ায় জমি খুঁজছে আইওসি কর্তৃপক্ষ। বন্ধ এইচএফসি সার কারখানার পড়ে থাকা ১৭৫ একর জমি চেয়েছিল আইওসি। সেই জমি এখন বন্দরের হস্তগত। দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি নিয়ে আইওসি-বন্দরের টানাপোড়েন চলছে। কার্গো গ্যারান্টি না পেয়ে বা ব্যবসায়িক লাভ নেই দেখে কার্যত মুখ ফিরিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। করোনার আগে থেকে সেই জমিতে অন্য শিল্প গড়তে একাধিকবার টেন্ডার ডাকছে বন্দর। এদিকে বন্দর মুখ ফেরানোয় নয়া পেট্রকেম প্রকল্পের জন্য গত চার বছর ধরে মরিয়া হয়ে বিকল্প জমির সন্ধান শুরু করেছে আইওসি। রাজ্য সরকারের কাছে ১০৪ একর জমির আশ্বাস পেলেও তা হস্তান্তর হয়নি। ফলে ১০ হাজার কোটি টাকার পেট্রকেম প্রকল্পকে মাত্র আড়াই হাজারে নামিয়ে এনে জমির জন্য এইচডিএর কাছে আবেদন করে আইওসি। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এইচডিএর জমির উচ্চমূল্য। ফলে হলদিয়ায় আইওসির প্রকল্পগুলি সরে যাচ্ছে পারাদীপে। দিল্লিতে একের পর এক আইওসির বোর্ড মিটিংয়ে হলদিয়ার পেট্রকেম প্রকল্পের ছাড়পত্রই মিলছে না। এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দিল্লিতে হলদিয়ার আইওসির প্রতিনিধিদের দাপট কম। এবং হলদিয়ার জন্য এখানকার বিজেপি সাংসদ বা রাজ্যের কোনও জোরালো সুপারিশও নেই।হলদিয়ার রিফাইনারি বাঁচাতে দ্রুত ইন্টিগ্রেটেড পেট্রকেম প্রকল্প জরুরি হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের অন্যান্য আইওসি ইউনিটে সেকাজ জোর কদমে চলছে। শেষমেস জমি জটিলতা কাটাতে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর কাজ শুরু করেছে আইওসি। আইওসি রিফাইনারি এলাকার মধ্যেই পুরনো প্রকল্প সরিয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে আইওসি। একটি প্রপিলিন রিকভারি ইউনিট গড়ছে আইওসি। এটি কার্যত পেট্রকেম প্রকল্পের প্রথম ধাপ। এজন্য প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হতে চলেছে। এরফলে কর্মসংস্থান ও হলদিয়ায় বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। আইওসি রিফাইনারি সূত্রে এখবর জানা গিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে হলদিয়ায় পেট্রোকেমিক্যাল ক্ষেত্রে যাত্রা শুরু করবে আইওসি। রিফাইনারির পাশাপাশি নয়া উদ্যোগে সামিল হচ্ছে হলদিয়া আইওসি। ইতিমধ্যেই মথুরা রিফাইনারিতে আইওসি পেট্রকেম প্রকল্প শুরু করেছে। পানিপথ ও পারাদীপ রিফাইনারিতেও বড় আকারে পেট্রকেম প্রকল্প চালু হয়েছে। হলদিয়া রিফাইনারিও এবার এগচ্ছে সেই পথে। বন্দর শহরে কয়েক হাজার কোটি টাকার বড়মাপের পেট্রকেম প্রকল্প হাতে নিয়েছে হলদিয়া আইওসি কর্তৃপক্ষ।
হলদিয়া আইওসির রিফাইনারির এগজিকিউটিভডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) সুশান্তকুমার দাস বলেন, রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ প্রপিলিন রিকভারি ইউনিট নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই এর ফার্স্ট স্টেজ অ্যাপ্রুভাল বা বাজেট অনুমোদন হয়েছে। সেকেন্ড স্টেজ পুট-আপ হচ্ছে অর্থাৎ টেকনিক্যাল কাজকর্ম শুরু হচ্ছে। এজন্য সময় লাগছে। এছাড়াও আরও প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে। তবে সেগুলি চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আইওসি সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার প্রতিটি রিফাইনারির সঙ্গেই আইওসি পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্প গড়তে চাইছে। কারণ পেট্রলিয়াম ক্রন্ড অয়েল রিফাইনের পর শুধু পেট্রল বা ডিজেল তৈরি করে রিফাইনারি কর্তৃপক্ষকে বাজারে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। এজন্য পেট্রলিয়ামজাত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ভিত্তিক বিকল্প শিল্প অর্থাৎ পেট্রকেম শিল্পের দিকে ঝুঁকছে আইওসি রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ। পেট্রলিয়ামজাত পণ্যের ভ্যালু অ্যাডিশন করে অর্থাৎ গুণগতমান বাড়িয়ে বিক্রির সুযোগ তৈরি হবে পেট্রকেম শিল্পে। আধিকারিকরা বলেন, এতদিন রিফাইনারি ও পেট্রকেম দু'টি আলাদা শিল্প-প্রকল্প হিসেবে গণ্য হত। এখন আইওসি কর্তৃপক্ষ দু'ধরনের প্রকল্পের সমন্বয় করতে চাইছে। তাঁদের বক্তব্য, পেট্রকেমিক্যালস আগামীদিনের লাভজনক শিল্প। রিফাইনারির বাণিজ্যিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই একসঙ্গে পেট্রকেম প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
No comments