Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

হোমওয়ার্ক ভেবে লেখা হলো ইতিহাস: আশিস কুমার পণ্ডা

হোমওয়ার্ক ভেবে লেখা হলো ইতিহাস: আশিস কুমার পণ্ডা!১৯৩৯ সালের এক সাধারণ দিন। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ প্রফেসর জর্জি স্প্লাভা-নেইম্যান–এর ক্লাসে ছাত্রছাত্রীরা যথারীতি বসে পড়েছে। ক্লাস শুরু হতেই…

 




হোমওয়ার্ক ভেবে লেখা হলো ইতিহাস: আশিস কুমার পণ্ডা!

১৯৩৯ সালের এক সাধারণ দিন। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ প্রফেসর জর্জি স্প্লাভা-নেইম্যান–এর ক্লাসে ছাত্রছাত্রীরা যথারীতি বসে পড়েছে। ক্লাস শুরু হতেই, প্রফেসর বোর্ডের একপাশে দু’টি জটিল অঙ্কের সমস্যা লিখে ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন—“শুরুতেই জানিয়ে রাখি, এগুলো আজকের হোমওয়ার্ক নয়। শুধু উদাহরণ হিসেবে তোমাদের দেখাচ্ছি। এই সমস্যাগুলো এতটাই জটিল যে, আজ পর্যন্ত বিশ্বের সেরা গণিতবিদেরাও এর সঠিক সমাধান খুঁজে পাননি।” এরপর তিনি মূল বিষয় পড়ানো শুরু করেন। ঠিক তখনই, প্রায় ছুটতে ছুটতে ক্লাসে ঢোকে জর্জ বার্নার্ড ডান্টজিগ নামে এক মেধাবী ছাত্র। সেদিন সে কোন কারণে একটু দেরি করে ফেলেছে। বোর্ডে লেখা অঙ্কগুলো দেখে এবং কোন প্রেক্ষাপট না জেনেই, সে ধরে নেয় এগুলো বুঝি আজকের হোমওয়ার্ক। কিছু না বলেই সে তাড়াতাড়ি অঙ্কগুলো নিজের খাতায় টুকে নেয় এবং মনোযোগ দেয় ক্লাসে। এটা খুবই সাধারণ ঘটনা—একজন মেধাবী ছাত্র দেরি করে ক্লাসে এলেও চেষ্টা করে পিছিয়ে না পড়তে। সেদিন সন্ধ্যায় ডান্টজিগ “হোমওয়ার্ক” নিয়ে বসে আর সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারে—এই অঙ্কগুলো একেবারেই সাধারণ নয়; খুবই কঠিন, জটিল এবং বিভ্রান্তিকর। কিন্তু ডান্টজিগ ভয় পায় না। হাল না ছেড়ে, সে আরও গভীরে যায়—লাইব্রেরিতে গিয়ে বিভিন্ন বই পড়ে, দিনরাত পরিশ্রম করতে থাকে। কয়েক দিনের প্রচেষ্টায়, সে দুটি সমস্যারই সমাধান বের করে ফেলে।

সমাধানগুলো খাতায় লিখে সে প্রফেসরের কাছে জমা দেয়, আর লজ্জা-লজ্জা মুখে বলে—“স্যার, হোমওয়ার্কটা করতে একটু সময় লেগে গেল… অঙ্কগুলো বেশ কঠিন ছিল।” এরপর কেটে যায় কয়েক সপ্তাহ। হোমওয়ার্কের খাতা আর ফেরত আসে না! ডান্টজিগ চিন্তায় পড়ে যায়—প্রফেসর আদৌ তার খাতা দেখেছেন তো?

প্রায় ছয় সপ্তাহ পরে, এক সকালে হঠাৎ প্রফেসর নেইম্যান হন্তদন্ত হয়ে ডান্টজিগের বাড়িতে এসে হাজির—খুশি আর উত্তেজনায় তিনি ভরপুর।  প্রিয় ছাত্রকে বললেন—“জর্জ! তোমার সমাধানগুলো এতটাই অভিনব হয়েছে যে, এর মধ্যে একটির জন্য আমি ইতিমধ্যেই একটি ভূমিকা লিখে ফেলেছি। এখন সেটা বিশ্বব্যাপী প্রকাশের জন্য পরিসংখ্যান জার্নালে পাঠাচ্ছি!” ডান্টজিগ তখনো বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা এত বড়। প্রফেসর জানালেন—“তুমি যেটাকে হোমওয়ার্ক ভেবেছিলে, ওগুলো আসলে ছিল পৃথিবীজোড়া বিখ্যাত, অমীমাংসিত অঙ্কের সমস্যা! ডান্টজিগের এবার অবাক হওয়ার পালা! সে অজান্তে যা করেছে, তা ছিল অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার ইতিহাস। এই দুটি সমস্যার সমাধান পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয় এবং ডান্টজিগের ডক্টরেট থিসিস হিসাবেও গৃহীত হয়।

এই গল্প আমাদের কী শেখায়?

ডান্টজিগ যা করেছিল, সেটা বড় বড় গণিতবিদরাও পারেননি।

সে পেরেছিল, কারণ কেউ তাকে বলেনি যে, ‘এটা অসম্ভব’।

সে ভেবেছিল—“হোমওয়ার্ক তো! চেষ্টা করলেই হবে।” সে সফল হয়েছিল কারণ সে ভয় নিয়ে শুরু করেনি—শুরু করেছিল চেষ্টা করার জেদ নিয়ে।

এই গল্প শুধু নবীনদের জন্য নয়, তাঁদের পথপ্রদর্শকদের জন্যও এক বার্তা দেয়। নবীনরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়—কখনো কঠিন পড়ার বিষয়, কখনো নিজের উপর সংশয়, কখনো বাইরের চাপ। কিন্তু অনেক সময় সবচেয়ে বড় বাধা আসে বাইরে থেকে—তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকেই। কারো কারো মুখে শোনা যায়—“এটা তোমার জন্য একটু বেশি কঠিন”, বা “বাস্তববাদী হও” বা “এটা বাদ দিয়ে সহজ কিছু করো।” এসব কথা ভালবাসা থেকে এলেও, অজান্তেই  তরুণ মনে এক ধরনের সীমাবদ্ধতা গড়ে তোলে। ভাবুন তো, যদি ডান্টজিগকে কেউ বলে দিত, “এটা অসম্ভব”—তাহলে কি সে চেষ্টা করতো? হয়তো, না। কিন্তু কেউ তাকে বাধা দেয়নি, তাই সে নিজেকে বিশ্বাস করেছিল—আর সেটাই ছিল তার জয়ের চাবিকাঠি।

তাই, নবীনদের জন্যে সীমারেখা তৈরি না করে দিয়ে তাদের পথ দেখান, নিরুত্সাহ না করে তাদের সাহায্যের আশ্বাস দিন, তাদের ব্যর্থতাকে আড়াল না করে সাহসের সঙ্গে চেষ্টা করতে উৎসাহ দিন। কারণ, প্রত্যেক অসাধারণ আবিষ্কারের পেছনে থাকে একজন সাহসী চেষ্টা করা মানুষ—আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন, যিনি বিশ্বাস করেন, সে পারবে।

No comments