Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

"নো কষ্ট" পদ্ধতিতে সঠিকভাবে নদী ও খাল সংস্কার কি সম্ভব? বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবী!

"নো কষ্ট" পদ্ধতিতে সঠিকভাবে নদী ও খাল সংস্কার কি সম্ভব? বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবী!সংবাদদাতা-নারায়ণ চন্দ্র নায়ক:  বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেই গত ৬/৭ বছর পূর্বে সেচ দপ্তরের টাকায় নদী ও খাল সংস্কারের সময় প্রায়শই একটি অভ…

 



"নো কষ্ট" পদ্ধতিতে সঠিকভাবে নদী ও খাল সংস্কার কি সম্ভব? বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবী!

সংবাদদাতা-নারায়ণ চন্দ্র নায়ক:  বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেই গত ৬/৭ বছর পূর্বে সেচ দপ্তরের টাকায় নদী ও খাল সংস্কারের সময় প্রায়শই একটি অভিযোগ উঠত-ঠিকাদার ও শাসক দলের লোকেরা যোগসাজসে খাল ও নদী সংস্কারের মাটি বেআইনীভাবে বিক্রি করছে। ওই পরিপেক্ষিতে গত ২০২১ সালের বর্ষায় বন্যা পরিস্থিতির পর রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়-সেচ দপ্তরের টাকায় পারতপক্ষে আর কোন খাল বা নদী সংস্কার করা হবে না। ওই কাজ করবে সরকারেরই খনিজ দফতরের অধীনস্থ একটি কোম্পানি যার নাম হল-'ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড' সংক্ষেপে ডব্লিউ.বি.এম.ডি.টি.সি.এল.(WBMDTCL)। সেচ বা প্রশাসনিক দপ্তর স্কীম তৈরি করবে। টেন্ডার প্রসেসিং করবে ডব্লিউ বি এম ডি টি সি এল কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার সংস্কারের বালি বা মাটি বিক্রি করে তার খরচ সংকুলান ও লাভ যেমন করবে,পাশাপাশি সরকারকে রয়্যালিটি বাবদ মাটির কিছু অংশও দেবে। বাস্তবে ঠিকাদার ওই মাটি বিক্রি করে অর্থ হিসাবে টাকা দেবে সরকারী কর্তৃপক্ষকে। ফলস্বরূপ খাল বা নদী সংস্কারের জন্য সরকারের আর কোন অর্থ খরচ হবে না। বরং কিছু অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা পড়বে।

             এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি ও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন,উপরোক্ত পরিকল্পনাটা শুনতে খুব ভালো লাগলেও বাস্তবটা কিন্তু অতটা সহজ নয়। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই তা পরিষ্কার হবে--

১) ২০২১ সালে সরকারী ওই সিদ্ধান্তের পর সেচ দপ্তর পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ কেলেঘাই নদীর নিম্নাংশ নাঙলকাটা থেকে ঢেউভাঙ্গা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করার জন্য স্কীম করে পাঠিয়েছিল ডব্লিউ বি এম ডি টি সি এল কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু ওই কাজের জন্য একাধিকবার টেন্ডার নোটিশ করা সত্বেও কোনো ঠিকাদার '২২ থেকে '২৪ সাল পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা দেননি। সর্বশেষ ২০২৫ সালে একজন ঠিকাদার ওই কাজের খানিক অংশ সংস্কারের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে,গত দু/আড়াই মাস আগে। তারপর ওই ঠিকাদার দু/তিনটি মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করেছে। শুরুর দু'মাস পর কাজের অগ্রগতি হল-এক কিলোমিটার নদীর খানিক অংশে মাঝে/মাঝে একদিকে কিছু মাটি তোলা। মূলতঃ মাটি কেনার খরিদদার এলেই ঠিকাদার মাটি তুলে বিক্রি করে। 

২) পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গাখালি খাল। ওই একই নিয়মে ২০২৩ সালে খাল সংস্কারের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ,  ব্রিক ফিল্ডের এক মালিক ঠিকাদারের মাধ্যমে। আশ্চর্যের বিষয় এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ থাকলেও ২০২৫ সালেও এখনো পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি,শুধু তাই নয়-১০ কিলোমিটারও সংস্কার সম্পূর্ণ হয়নি। কবে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হবে কারুরই জানা নেই। 

৩) পূর্ব মেদিনীপুর জেলারই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাল-১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সোয়াদিঘী খাল। ওই খালেরও সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে ২০২৪ সালে ডব্লিউ বি এম ডি টি সি এল এর নিয়ন্ত্রনে। প্রায় এক বছর পূর্বে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হলেও জেলা

শাসকের ধমকানিতে এখনো অর্ধেক অংশের একদিকেরও কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। উল্লেখ্য ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কংসাবতীর পাঁশকুড়া ব্লক এলাকার কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর বন্যার জল বের হতে থাকে সোয়াদিঘী খাল হয়ে। কিন্তু সোয়াদিঘী খাল মজে থাকার কারণে ওই জল বের হয় চার মাস ধরে। 

৪) বহু চর্চিত "ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান" এর অন্তর্গত শিলাবতী নদীর নিম্নাংশ সংস্কারের জন্যও টেন্ডার আহ্বান করেছিল-পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। প্রথম টেন্ডারে কোনো ঠিকাদার কাজের জন্য আবেদন করেনি। 

          অন্যদিকে ২০২৪ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলা শাসক রাজ্য সরকারের বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ওই একই পদ্ধতিতে জেলা পরিষদের দ্বারা টেন্ডার করিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু করে জেলার বেশ কয়েকটি খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেন। সেই খালগুলির সংস্কারের অবস্থাও অনুরূপ।

           নারায়ণবাবু জানান,"নো কষ্ট" পদ্ধতিতে খাল বা নদী সংস্কারের কাজের পর্যালোচনা করে যেটা দেখা যাচ্ছে-প্রথমতঃ খাল সংস্কারের জন্য সরকারী কোনো অর্থ লাগবে না,এটা ঠিকই। কিন্তু পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করতে গেলে ঠিকাদারের লভ্যাংশ ও খরচ যুক্ত করে মাটির যে দাম হবে,সেই দামে এই বিশাল পরিমাণ মাটি বিক্রির খদ্দেরের অভাব। কিছু এলাকায় কিছু খদ্দের পাওয়া গেলেও অনেক এলাকাতেই সেই দামে মাটি কেনার খরিদ্দারের অভাব রয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ খাল বা নদী থেকে তোলা সব মাটি বিক্রি করে দিলে ওই খাল বা নদীর বাঁধগুলি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলস্বরূপ নদী বা খাল পার্শ্ববর্তী এলাকায় বন্যার সম্ভাবনা প্রকট হবে। অবশ্যই এক্ষেত্রে খাল বা নদীর বাঁধ শক্তপোক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি রেখে বাকি মাটি বিক্রি করার বন্দোবস্ত করতে হবে। 

তৃতীয়তঃ সেচ দপ্তর যখন তাদের নিয়ন্ত্রিত ঠিকাদারকে সরকারী অর্থ দিয়ে খাল সংস্কার করায়,যেভাবে খালের ডিজাইন মেন্টেন করে,এই পদ্ধতিতে কাজের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ এজেন্সি কাজের দায়িত্বে না থাকার ফলে খালের নির্দিষ্ট ডিজাইন মেন্টেন হচ্ছে না। 

চতুর্থতঃ যে কারণে জন্য ডব্লিউ বি এম ডি টি সি এল কে দিয়ে "নো কষ্ট" পদ্ধতিতে খাল সংস্কারের এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে -সেক্ষেত্রেও কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে,শাসকদল যে যেখানে ক্ষমতায় আছে তাদের দলের কিছু কিছু নেতারা ঠিকাদারের সাথে যোগ-সাজসে একইভাবে মাটি বিক্রির সাথে যুক্ত হচ্ছেন। 

পঞ্চমতঃ খাল সংস্কারের সময় খালের জোয়ার জলকে নির্ভর করে যে যে এলাকায় চাষের কাজ হয়ে থাকে,সেখানে ওই পিরিয়ডে চাষ বন্ধ রাখতে হয়। ওই পদ্ধতিতে খাল সংস্কার দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে এক একটি খাল এলাকায় বেশ কয়েক বছর ওই চাষ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

         নারায়নবাবুর দাবী-কোনও কোনও ক্ষেত্রে ছোট ছোট খাল ঐ পদ্ধতিতে সংস্কার করা গেলেও বড় খাল বা নদী সংস্কার কি ওই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে? সব মিলিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।



No comments