সুতাহাটা থানা চত্বর যেন এক মিনি চিড়িয়াখানা!
জয়পুর নয়। নয়কো মরু শহর জয়শলমীর। কিন্তু লাইন দিয়ে উট। তাও তারা মুখটি তুলে চলছে নাকো। বাঁধা। নেহার লক-আপে জায়গা হবে না তাই। না হলে তো সেখানেই রাখতে হত। বাজেয়াপ্ত করা বলে কথা। তাই সবই কয়েছ…
সুতাহাটা থানা চত্বর যেন এক মিনি চিড়িয়াখানা!
জয়পুর নয়। নয়কো মরু শহর জয়শলমীর। কিন্তু লাইন দিয়ে উট। তাও তারা মুখটি তুলে চলছে নাকো। বাঁধা। নেহার লক-আপে জায়গা হবে না তাই। না হলে তো সেখানেই রাখতে হত। বাজেয়াপ্ত করা বলে কথা। তাই সবই কয়েছে থানা চত্বরে। যাদের নিয়ে হিমশিম দশা সুতাহাটা থানার পুলিশ কর্মীদের। তাই তাদের দেখভালের জন্য রাখা হয়েছে চিকিৎসক।
কারও মন ভালো নেই। রুচি হচ্ছে না। ফলে ঠিকমতো খাচ্ছে না। পায়ের পেশী ফুলে গিয়ে কোনওটির আবার শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের সুতাহাটা থানা চত্বরে আটক থাকা উটেদের এমনই সব সমস্যা দেখা দিয়েছে। পশু চিকিৎসকদের ৫ জনের মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে চলছে নিরন্তন পরিচর্যা। সেই সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ এবং সুতাহাটা থানা পুলিশ বেআইনি উটকারবারিদের চক্র ধরতে তদন্ত চালাচ্ছে। সোম এবং মঙ্গলবার দু'দিনে স্থানীয় দূর্বাবেড়িয়া এবং উত্তর বাশুলিয়া গ্রাম থেকে দশটি উট আটক করেছে সুতাহাটা থানার পুলিশ। সেই সমস্ত উটেদের আশ্রয় এখন থানার পুলিশ ব্যারাকের পাশে। সেখানে যেন এক মিনি চিড়িয়াখানা। উট দেখার জন্য আগ্রহী মানুষের আনাগোনাও রয়েছে থানা চত্বরে। কেউ আবার সেলফিও তুলছেন। ২০১৫ সালের অ্যানিমেল অ্যাক্ট অনুযায়ী, উট ধরা, মাংস কেটে বিক্রি করা, খাওয়া সবটাই নিষিদ্ধ। কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা মন্ত্রক এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিক্রির অভিযোগ পেয়ে পুলিশ উটগুলিকে আটক করেছে। কিন্তু আইন মেনে আটক করা হলেও পরিবেশগত সমস্যায় পড়েছে ওই উটগুলি। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে পরিবেশ তাদের শরীরের সঙ্গে মানানসই। কিন্তু এই বাংলার উপকূল এলাকার নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে তাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। পশু চিকিৎসকরা তেমনটাই জানাচ্ছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পশু চিকিৎসা দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর উত্তমকুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, "আমাদের এখানকার আবহাওয়ায় ওদের শরীরের মাংসপেশী ফুলে যাচ্ছে। আমরা ওদের শরীর ঠিক রাখার কাজ করে চলেছি। খাবারে অনীহা রয়েছে ওদের। যাতে খাবারের রুচি আসে, সেই জন্য ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ওদের দেখভালের জন্য পশু চিকিৎসক, দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে পাঁচজনের মেডিক্যাল টিম গড়ে দেওয়া হয়েছে।" ছোলা, গুড় তো আছেই। সেইসঙ্গে নিমপাতা, বাবলাপাতা, কাঁঠালপাতা গুরা খেতে পছন্দ করে। এই সমস্ত খাবা দেওয়ার পাশাপাশি কখনও মেস খাবার দেওয়া হচ্ছে। শরীর ঠিক রাখতে কখনও আবার দেওয়া হচ্ছে ভিটামিন। প্রতিদিন এই পরিচর্যার জন্য পশু চিকিৎসা দপ্তরের
৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী জানিয়েছেন, "আমরা উটগুলি যাতে ভালো থাকে, সেই জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি এই বেআইনি কারবারের সঙ্গে যারা যুক্ত আছে, তাদের খোঁজ করছি।" জানা গিয়েছে, উটগুলিকে দ্রুত রাজস্থানে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অ্যানিমেল রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগকে পুলিশের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলা পশু চিকিৎসা দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর উত্তমবাবু আরও জানিয়েছেন, "উলগুলিকে দ্রুত রাজস্থানে পাঠাতে পারলে ভালো থাকবে। আমাদের জেলার এই আবহাওয়া ওদের পক্ষে মোটেই উপযুক্ত নয়।"
No comments