শ্রমিক অসন্তোষ রুখতে ভরসা হেল্পলাইন নম্বরে
কোন্দল আর দুর্নীতির অভিযোগ তীব্র আকার নিয়েছিল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে। তমলুক এবং দুর্গাপুরে আইএনটিটিইউসিতে (Indian National Trinamool Trade Union Congress) রদবদলের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন…
শ্রমিক অসন্তোষ রুখতে ভরসা হেল্পলাইন নম্বরে
কোন্দল আর দুর্নীতির অভিযোগ তীব্র আকার নিয়েছিল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে। তমলুক এবং দুর্গাপুরে আইএনটিটিইউসিতে (Indian National Trinamool Trade Union Congress) রদবদলের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ওই দুই জায়গায় শ্রমিক সংগঠনে সভাপতির পদের বিলোপ ঘটিয়ে কোর কমিটি ঘোষণা করে তৃণমূল। শ্রমিক অসন্তোষ এবং শিল্প কারখানা এলাকায় দুর্নীতি রুখতে এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে একটি হেল্পলাইন নম্বর (৬২৯২২৬২৪৬৩) চালু করলেন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নিমতৌড়িতে পূর্ব মেদিনীপুর আইএনটিটিইউসি-র কোর কমিটির প্রথম বৈঠকেই হেল্পলাইন নম্বরের কথা ঘোষণা করলেন ঋতব্রত।মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আইএনটিটিইউসি-র কোর কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির চেয়ারপার্সন করা হয়েছে ঋতব্রতকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন আস্তিক চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ দে, অসীম মাজি, শঙ্কর দণ্ডপাঠ, শ্যামল মাইতি, সুদীপ্ত ভক্তা, শেখ আলমগির এবং আলম জিলানি। সূত্রের খবর, জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি পদের জন্য ছিল প্রদীপ দে, শ্যামল মাইতি, প্রাক্তন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি চন্দন দে এবং প্রাক্তন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সম্পাদক টুটুল মল্লিকের নাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রমিক সংগঠনের রাশ জেলার কারও হাতেই থাকল না। জেলায় শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতির পদ তুলে দিয়ে কার্যত রাজ্যের হাতেই ক্ষমতা রাখল শাসকদল, তৃণমূল।
কিছু কলকারখানা আছে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের কোন্দলের জেরে বিভিন্ন সময়ে শিল্প এলাকায় গন্ডগোল হয়েছে। গত মার্চে মজুরি বৃদ্ধি-সহ একাধিক দাবিতে কোলাঘাটের একটি সিমেন্ট কারখানায় কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেছিল আইএনটিটিইউসি। আন্দোলন থামাতে রাজ্য নেতৃত্ব বাধ্য হন ওই সিমেন্ট কারখানার শ্রমিক সংগঠন ভেঙে দিতে। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং হলদিয়ার একাধিক কারখানা ও বন্দরেও বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজের অভিযোগ ওঠে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে ক্ষোভছড়ায় শিল্প মহলে। শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকায় শাসকদলের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছিল। দলীয় সূত্রের খবর, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শ্রমিক অসন্তোষ এবং দুর্নীতি যাতে মাথাচাড়া দিতে না-পারে, সেই কারণেই সভাপতির পদ তুলে দিয়ে কোর কমিটি গঠনের পথে হাঁটল তৃণমূল।
এ দিনের বৈঠকে ঋতব্রত জানান, শ্রমিকদের কোনও বক্তব্য থাকলে তাঁরা ওই হেল্পলাইন নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ওই শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করা হবে। গোটা রাজ্যের জন্য ওই হেল্পলাইন নম্বর চালু হলেও তমলুক সাংগঠনিক জেলার সমস্ত শিল্প কলকারখানা এবং দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এলাকার সমস্ত কারখানার সামনে ওই নম্বর টাঙিয়ে দেওয়া হবে। ঋতব্রতের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোনও রকম শ্রমিক অসন্তোষ এবং দুর্নীতি বরদাস্ত করবে না তাঁর তৃণমূল। সভাপতি পদের বিলোপ ঘটিয়ে কোর কমিটি গঠন তারই ইঙ্গিত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ঋতব্রত বলেন, 'সভাপতির পদ তুলে দিয়ে কেন কোর কমিটি গঠন করা হলো, সে ব্যাখ্যা দল দিতে পারবে। শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করবে। সেটাই প্রত্যাশিত। তার বাইরে সংগঠনের আর কোনও ভূমিকা নেই। বুধবার থেকে আমরা একটি হেল্লাইন নম্বর চালু করলাম। তমলুক সাংগঠনিক জেলা এবং দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায় এই নম্বর প্রতিটি কারখানার সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। শ্রমিকরা এ বার থেকে সরাসরি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। শিল্প এবং শ্রমিক সংক্রান্ত কোনও অনিয়ম দল বরদাস্ত করবে না।'
No comments