২৫২ বছরে প্রাচীন গঙ্গেশ্বর মন্দিরে মেলা শুরু হল বৈশাখী গাজন উৎসবে উপস্থিত বিডিও!
হলদিয়া বড় বাড়ি গ্রামের প্রায় ২৫২ বছরে প্রাচীন গঙ্গেশ্বর মন্দিরে মেলা শুরু হল বৈশাখী গাজন উৎসব দিয়ে। গাজন সন্ন্যাসীদের বটিঝাপের মধ্য দিয়ে …
২৫২ বছরে প্রাচীন গঙ্গেশ্বর মন্দিরে মেলা শুরু হল বৈশাখী গাজন উৎসবে উপস্থিত বিডিও!
হলদিয়া বড় বাড়ি গ্রামের প্রায় ২৫২ বছরে প্রাচীন গঙ্গেশ্বর মন্দিরে মেলা শুরু হল বৈশাখী গাজন উৎসব দিয়ে। গাজন সন্ন্যাসীদের বটিঝাপের মধ্য দিয়ে এই মেলা শুরু হয়। সোমবার এই মেলা উপস্থিত হয়েছিলেন হলদিয়া সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সৌরভ মাঝি জেলা পরিষদের সদস্য ভবতোষ পাত্র হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতি সহ সভাপতি সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ চলবে ৮ দিন ধরে এই মেলা।
শতাব্দীপ্রাচীন গঙ্গেশ্বরজিউ শিবমন্দিরের বৈশাখী চড়কমেলা ঘিরে হলদিয়ার গ্রাম-শহরের মানুষ আনন্দে মেতে উঠেছেন। প্রতিবছরের মতো এবারও অক্ষয় তৃতীয়ার আগে সোমবার হলদিয়ার বড়বাড়ি গ্রামে পাঁচদিনের চড়কমেলা শুরু হয়েছে। ব্রজলালপুর-চৈতন্যপুর সড়ক থেকে দেড়কিমি দূরে মনোরম গ্রামীণ পরিবেশে শতবর্ষপ্রাচীন গঙ্গেশ্বরজিউ শিবমন্দির রয়েছে। সেই মন্দির ও লাগোয়া বিশাল দিঘির চারপাশে মেলা আয়োজন হয়।মন্দির পর্যন্ত কংক্রিটের চওড়া রাস্তা রয়েছে। যোগাযোগের সুবিধা থাকায় এই গ্রামীণ মেলায় দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বাইক, টোটো, সাইকেলে আসেন। ভক্তদের কাছে এটি গঙ্গেশ্বরের অক্ষয় তৃতীয়ার মেলা নামে পরিচিত। মেলায় তরমুজ, কালো রঙের জলের কুঁজো ও তালপাতার রঙিন পাখা 'অনেকেই কিনে থাকেন। ভিনজেলা থেকে প্রচুর ব্যবসায়ী ও পুণ্যার্থী গঙ্গেশ্বরের চড়ক মেলায় আসেন। অক্ষয় তৃতীয়ার দু'দিন আগে থেকে গঙ্গেশ্বরজিউ শিবের পুজোপাঠ ও মেলা শুরু হয়েছে। এই বৈশাখী চড়কমেলার প্রধান আকর্ষণ বঁটি ঝাঁপ, দণ্ডিভাঙা, কালীনাচ ও শিবায়ন পালাগান। সোমবার বিকেলে সন্ন্যাসীরা বঁটি ঝাঁপদেন। পরদিন নীলের উপোসে শয়ে শয়ে পুণ্যার্থী কুঁকড়াহাটি নদীঘাট থেকে 'গঙ্গাবারি' এনে গঙ্গেশ্বরজিউকে নিবেদন করেন। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন চড়ক উৎসব হয়। শ্রীশ্রী গঙ্গেশ্বরজিউ মেলা ও মন্দির উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক বাদলচন্দ্র দাস বলেন, বড়বাড়ির বেরা ও মাইতি পরিবার গঙ্গেশ্বরজিউ শিবমন্দিরের সেবাইত। অশোককুমার বেরা, বিশ্বজিৎ মাইতি এবং দেবব্রত বেরা-এই তিনজন সেবাইত এখন মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছেন। পাঁচদিনের মেলা হলেও আদতে একসপ্তাহের বেশি সময় মেলা চলে। মন্দিরের অন্যতম সেবাইত অশোককুমার বেরা বলেন, প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো শিবমন্দির।
যতীন্দ্রনাথ বেরার পূর্বপুরুষরা এই মন্দির তৈরি করেছিলেন। পরে ১৯৫৭ সালে নতুন রূপে বর্তমান মন্দিরটি গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রায় দু'একর জমির উপর মন্দির ও দিঘি রয়েছে। দিঘির চারপাশে উঁচু জমিতে মেলা বসে। মেলা কমিটির সভাপতি শিবশঙ্কর ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ গোকুলচন্দ্র মণ্ডল বলেন, একসময় এখানে ২৫০জনের বেশি গাজন সন্ন্যাসী একসপ্তাহ ধরে উপোস করতেন। এবছর প্রায় ১৫০জন সন্ন্যাসী উপোস করে পুজোর সমস্ত কাজকর্ম করছেন। বহু ভক্ত শিবের কাছে মানত করেন। তাঁরা কুঁকড়াহাটির হুগলি নদী থেকে প্রায় ১২-১৪ কিলোমিটার হেঁটে গঙ্গাবারি এনে শিবের মাথায় ঢালেন।
মন্দিরে কয়েকহাজার মানুষের ঢল নামে। মন্দির চত্বরে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে মহিলা ভক্তরা দণ্ডি কাটেন। মেলা কমিটি জানিয়েছে, এবছর ২৫০-এর বেশি দোকান বসেছে। গঙ্গেশ্বর মেলার উদ্বোধন করেন বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী।
মন্দিরের উন্নয়ন ও নাটমন্দির তৈরির জন্য বিধায়কের কাছে আবেদন জানিয়েছে মেলা কমিটি। বড়বাড়ির বাসিন্দা আশিস মিশ্র, অচিন্তা বেরা বলেন, একসময় গঙ্গেশ্বর মেলাতেই হলদিয়ার প্রথম তরমুজ ট্রাকে করে আসত। মেলায় তরমুজের পাহাড় তৈরি হতো। এখন মেলার চরিত্র বদলে গেলেও ঐতিহ্যবাহী বহু জিনিসই এখানে মেলে।
No comments