Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

রুইলির কয়েকজন নীরব নায়িকা: আশিস কুমার পন্ডা

রুইলির কয়েকজন নীরব নায়িকা: আশিস কুমার পন্ডা
২০২৫ সালের ২৮ মার্চ, স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৫০:৫৪ মিনিটে, মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল দেশটির অন্যতম প্রধান শহর মান্দাল…

 




রুইলির কয়েকজন নীরব নায়িকা: আশিস কুমার পন্ডা


২০২৫ সালের ২৮ মার্চ, স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৫০:৫৪ মিনিটে, মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল দেশটির অন্যতম প্রধান শহর মান্দালয় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এবং ১০ কিলোমিটার গভীরে।   পৃথিবী প্রবলভাবে কেঁপে উঠেছিল, যেন তার হাড়গুলো একে অপরকে পিষে দিচ্ছিল। ভূমিকম্পের প্রথম ধাক্কা, মাত্র এক মিনিট সময়ের জন্যে স্থায়ী হয়েছিল, কিন্তু যারা সেই অভিশপ্ত মুহূর্তে আটকে পড়েছিলেন, তাদের কাছে এই এক মিনিট মনে হয়েছিল এক অন্তহীন সময়। ভূমিকম্পটি এক শক্তিশালী ঢেউ তৈরি করে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল এবং বহুতল বাড়িগুলিকে দোলনার মত দুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। মানুষেরা আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন; কোথায় যাবেন বা কী করবেন তাদের জানা ছিল না। শিশুরা তাদের মায়ের জন্য চিৎকার করছিল, পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের সুরক্ষার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন।


এই বিপদের মধ্যে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৪২ কিলোমিটার দূরে, চীনের ইউনান প্রদেশের রুইলি শহরে একটি বিশেষ দৃশ্য দেখা গেল। এক মাতৃসদনের নার্সরা তাদের সকাল বেলার দায়িত্ব প্রায় শেষ করে ফেলেছেন, ঠিক এমন সময় এই বিদ্ধংসী ভূমিকম্প শুরু হয়। বহুতল হাসপাতালটি ভূমিকম্পের তীব্রতায় গুড়গুড় আওয়াজ করে তীব্রভাবে কাঁপতে শুরু করে। এই ভয়ংকর অস্থিরতায় সময়, বেশিরভাগ মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হলো; বিপদের জায়গা থেকে পালিয়ে যাওয়া, নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়া এবং নিজের জীবন রক্ষা করা। কিন্তু, নবজাতকদের ঘরের কর্তব্যরত নার্সরা, যারা মমতা, কোমলতা, দয়া, সংবেদনশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষতা এবং ক্ষিপ্রতায় প্রশিক্ষিত, তারা নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নেন: তাঁরা নবজাতকদের পাশে থাকবেন এবং মায়ের স্নেহ ও যত্ন দিয়ে তাদের আগলে রাখবেন। অসীম সাহস এবং সহানুভূতি দেখিয়ে, তারা রক্ষা করতে এগিয়ে যান সেই সব নবজাতকদের, যাদের সেই মূহুর্তে মায়েদের উষ্ণতার একান্ত প্রয়োজন ছিল। ভূমিকম্পের ঢেউ নার্সদের দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব করে দিলেও, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে শিশুদের ট্রলিগুলিকে এমনভাবে সুরক্ষিত করে রাখেন যাতে তাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি না হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি কমে গিয়ে একসময় থেমে যায়, কিন্তু নার্সরা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। মাতৃসদনে তখন শুধু শিশুদের কান্না এবং মায়েদের আর্তনাদ! নার্সরা নিরলসভাবে তাদের কাজ করে যান; প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মায়েদের আশ্বস্ত করেন, তাদের নবজাতকদের শান্ত করেন।  

সেই ভয়াবহ মুহূর্তগুলিতে, যখন মনে হচ্ছিল সব কিছু হারিয়ে গেছে, এই বীরাঙ্গনা নার্সদের সাহস এবং কর্তব্যনিষ্ঠা আমাদের কয়েকটি অমূল্য শিক্ষা দিয়ে যায়:

আসল প্রতিশ্রুতি তখন নয়, যখন পরিস্থিতি অনুকূল এবং কাজ  করা সুবিধাজনক, আসল প্রতিশ্রুতি তখনই, যখন সব কিছু অজানা এবং অনিশ্চিত।

লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেও সঠিক কাজ করে যাওয়াই হলো প্রকৃত সততা।

যখন নিজের জীবন সবচেয়ে বেশি অনিশ্চিত, তখন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের কল্যাণে কাজ করে যাওয়াই হলো প্রকৃত আত্মত্যাগ।

এই নার্সরা কোন পুরস্কার, কোন স্বীকৃতি, কোনো শিরোনাম বা করতালির আশা না করেই তাদের কর্তব্য, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গিয়েছিলেন। নার্সদের এই কাজের মধ্যে ছিল এক ধরনের নিরব নায়কত্ব, যা সবাইকে প্রাভাবিত করেছিল। সবচেয়ে দুর্বল মূহুর্তে, তাদের সাহসিকতা আমাদের শেখায় যে সবচেয়ে সাহসী কাজ হলো সেই কাজ যা আড়ম্বরহীন, অদৃশ্য, অস্বীকৃত, কিন্তু তবুও অন্যের জীবনকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

No comments