পন্য পরিবহনে বড়সড় ধাক্কা, হলদিয়া বন্দরের হিসেবে গরমিলের অভিযোগ! কয়লা আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি আর্থিক বছরে পণ্য পরিবহণে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই বন্দরের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকার অর্থনীতিতেও এর - ২০২৩-২৪ …
পন্য পরিবহনে বড়সড় ধাক্কা, হলদিয়া বন্দরের হিসেবে গরমিলের অভিযোগ!
কয়লা আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি আর্থিক বছরে পণ্য পরিবহণে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই বন্দরের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকার অর্থনীতিতেও এর - ২০২৩-২৪ সালে অর্থাৎ গত আর্থিক বছরে বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৯.৫৪ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহণ হয়েছিল। এবার ২০২৪-২৫ অর্থ বর্ষে পণ্য পরিবহণ এক ধাক্কায় অনেকটা নেমে গিয়েছে। মার্চ মাসের মধ্যে বন্দরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার হলদিয়ায় প্রায় ৫০ লক্ষ টন পণ্য কম হ্যান্ডেলিং হবে, বন্দর সূত্রে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। বিভিন্ন এজেন্সি বা বন্দর ক্রিং ব্যবহারকারী শিল্প সংস্থাগুলির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে 'লোভনীয় ছাড়' ঘোষণার কে পরও ব্যাপকহারে কমে গিয়েছে পণ্য পরিবহণ। করোনার সময়েও এতবড় ধস নামেনি বন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে। শেষমেশ জাহাজ মন্ত্রকের কাছে মুখরক্ষার খাতিরে বন্দরের পণ্য পরিবহণের হিসেবে 'জল মেশানো'-র অভিযোগ উঠেছে। জাহাজে ওঠানামা করছে না যার এমন পণ্যকেও হিসেবের মধ্যে এনে এবছরের পণ্য পরিবহণকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ। বন্দরের বাইরে রেলওয়ে সাইডিংয়ে ওঠানামা করা পণ্যও বন্দর কার্গো হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে বলে কোনও কোনও মহল অভিযোগ করেছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হলদিয়া বন্দর সূত্রে পণ্য পরিবহণের একটি তুলনামূলক হিসেব মিলেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্দরে পণ্য পরিবহণ হয়েছিল ৪৫.৪৭ মিলিয়ন টন। এবছর ফেব্রুয়ারিতে তা হয়েছে ৪১.১১ মিলিয়ন টন, যা গতবারের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন টন কম। অভিযোগ, বন্দরের ওই হিসেবের মধ্যে রেলওয়ে সাইডিংয়ের প্রায় ২০ লক্ষ বা ২ মিলিয়ন টন কার্গো যুক্ত করা হয়েছে। ওই কার্গো কোনওভাবেই বন্দরের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে বন্দর বিশেষজ্ঞদের দাবি। হলদিয়ার দুর্গাচক এবং পাতিখালি এলাকায় রেলওয়ে সাইডিংয়ে দুটি বেসরকারি সংস্থার কয়লা ওঠানামা করেছে। একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং একটি কোক প্ল্যান্ট। ভিন রাজা থেকে ওই কয়লা রেলের রেকে আসার পর তা ট্রাকে করে ওই সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। বাইরে থেকে জাহাজে করে ওই কয়লা আনা হয়নি। তারপরও কীভাবে ওই কয়লার হিসেব বন্দরের পণ্য পরিবহণের হিসেবে যুক্ত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ওই অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাসের দাবি, ওই রেলওয়ে সাইডিং বন্দর এলাকায়, সেজন্য সেখানে কার্গো হ্যান্ডেলিংও একধরনের বন্দর ফেসিলিটি হিসেবে গণ্য করা হয়। জাহাজে সরাসরি হ্যান্ডেলিং না হলেও বন্দরের কার্গো হিসেবেই এটি ধরা হয়।
জিএম প্রবীণকুমার দাস বলেন, এতদিন কার্গো হ্যান্ডেলিং এই ধরন বা হিসেবের নিয়ম বিভিন্ন বন্দরে একেক রকম ছিল। কলকাতা হলদিয়ার মতো দেশের মেজর পোর্টগুলিতে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের এই নিয়ম একজাতীয় করার জন্য জাহাজমন্ত্রক সম্প্রতি একটি কমিটি তৈরি করেছে। ওই কমিটি মেজর পোর্টগুলিকে একটি খসড়া নিয়মাবলী পাঠিয়েছে। তার লক্ষ্য হল, সমস্ত নিয়মের ঐক্যসাধন করে সুসংহত একটি পোর্ট পারফরম্যান্স প্যারামিটার তৈরি করা। এজন্য বন্দরগুলিকে ১১টি নিয়মের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেখানে নদী বন্দর হওয়ার কারণে হলদিয়ার কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের ধরন কয়েকটি ক্ষেত্রে একটু আলাদা। রেলওয়ে সাইডিংয়ের বিষয়টিও তার অন্যতম। চূড়ান্ত বিষয়টি জাহাজ মন্ত্রকের বিবেচনাধীন। হলদিয়া বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে গত বছরের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সহায়ক না থাকায় বন্দরে পণ্য কমেছে। দেশে প্রচুর পরিমাণে চিনা স্টিল আমদানি হচ্ছে। দেশে স্টিলের উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি কমে গিয়েছে। তবে হলদিয়ায় কন্টেনার কার্গো পরিবহণ গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে।
No comments