Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

‘মৃত ঘোড়া’ তত্ত্ব :আশিস কুমার পণ্ডা

‘মৃত ঘোড়া’ তত্ত্ব :আশিস কুমার পণ্ডাএক ব্যস্ত শহরের উপকণ্ঠে, জোসেফ নামে এক ধনী ঘোড়া ব্যবসায়ীর এক বড় খামার ছিল। তার সংগ্রহে ছিল দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির নানা রকমের ঘোড়া। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল উন্নত প্রজাতির,  ডিউক নামে এক স…

 




‘মৃত ঘোড়া’ তত্ত্ব :আশিস কুমার পণ্ডা

এক ব্যস্ত শহরের উপকণ্ঠে, জোসেফ নামে এক ধনী ঘোড়া ব্যবসায়ীর এক বড় খামার ছিল। তার সংগ্রহে ছিল দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির নানা রকমের ঘোড়া। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল উন্নত প্রজাতির,  ডিউক নামে এক সাদা ঘোড়া। গতি আর শক্তিতে সে খামারের অন্য ঘোড়াদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। প্রায় ২০ বছর ধরে সে জোসেফকে নিয়ে হাজার হাজার মাইল একনাগাড়ে দৌড়েছে। কিন্তু, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার গতি কমে এলো, ঘাড়ের রেশমী কেসর পাতলা হয়ে গেল, চোখ ঘোলাটে হতে শুরু করলো। জোসেফও লক্ষ্য করলেন যে, ঘোড়াটি আর আগের মতো কাজ করতে পারছে না কিন্তু তিনি তা মানতে চাইলেন না। প্রতিবেশীরা বললেন, "ডিউক আর আগের মতো নেই, এখন তাকে বিশ্রাম দেওয়াই ভালো।" কিন্তু জোসেফ তাদের কথায় কান দিলেন না। তার কাছে, ডিউক এখনো সেই একই ঘোড়া, যাকে তিনি ছোট থেকে লালন-পালন করেছেন, এত বছর ধরে যার উপর তিনি আস্থা রেখে এসেছেন! জোসেফ তার প্রিয় ডিউকের জন্যে অনেক রকম চেষ্টা করলেন — উন্নত খাবার, উন্নত জুতো, উন্নত জিন (saddle), শক্তিশালী চাবুক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়; কোন কিছুতেই কাজ হলো না এবং ডিউকের অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হতে লাগলো। জোসেফ কিন্তু, হাল ছাড়লেন না। একজন পেশাদার ব্যবসায়ী হিসাবে তিনি আরও কিছু পদক্ষেপ নিলেন:

•       ডিউকের জন্যে একজন হালকা ঘোড়সওয়ার নিয়োগ করলেন

•       পুরানো ঘোড়সওয়ার কে প্রশিক্ষণের জন্য অন্য শহরের খামারে  পাঠিয়ে দিলেন

•       ডিউকের কার্যক্ষমটা বাড়িয়ে তোলার জন্যে, আরো টাকা বরাদ্দ করলেন

•       নতুন কোন পদ্ধতি আবিষ্কারের আশা নিয়ে, ম্যানেজারদের বিদেশ ভ্রমণে পাঠিয়ে দিলেন

•       বাইরের বিশেষজ্ঞদের ডেকে এনে এক কমিটি বানিয়ে দিলেন

দুর্ভাগ্যের বিষয়, এতো সব পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও, ঘোড়াটির অবস্থার কোন উন্নতি তো হলই না, বরং ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকল। এরপর, এক শীতের সকালে, জোসেফ ডিউককে নিথর এবং প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলেন। তবুও তিনি আশা ছাড়লেন না। কমিটি জোসেফকে দেখে অনুপ্রাণিত হলো। দীর্ঘ আলোচনা করার পর, কমিটির সদস্যরা মৃত ঘোড়াটিকে এক নতুন শ্রেণীতে স্থানান্তরণ করে তাকে "বেঁচে থাকতে অক্ষম” হিসেবে চিহ্নিত করলেন। কমিটি আরও জানালেন, ‘যেহেতু মৃত ঘোড়াটির কোন খাবারের প্রয়োজন নেই এবং তার জন্যে পরোক্ষ খরচ অত্যন্ত কম, তাই মৃত ডিউক, অন্যান্য জীবন্ত ঘোড়াদের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।‘ কমিটি, সেইমত এক আকর্ষণীয়  ব্যালেন্স শিট বানিয়ে চুড়ান্ত রিপোর্টে পরামর্শ দিল যে, ‘মৃত ডিউককে আস্তাবলে এইভাবে রেখে দেওয়া হোক।‘ ব্যবসায়ী  জোসেফ, কাগজে কলমে আস্তাবলের লাভের অংক দেখে খুশি হলেন।

মৃত ঘোড়ার এই গল্পটি এক অযৌক্তিক অতিরঞ্জন বলে মনে হলেও, আসলে এটি বহু প্রাচীন ‘মৃত ঘোড়া তত্বে’র এক চমৎকার রূপক। এই তত্বে বলা হয়েছে- ‘আপনি যদি আবিষ্কার করেন যে, আপনি এক মৃত ঘোড়ায় চড়ছেন, তখন সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত হবে, সেই ঘোড়া থেকে নেমে আসা।‘ কিন্তু, বাস্তবে এর ঠিক উল্টোটাই দেখা যায়! ভুল স্বীকার না করে, বাস্তবতা মেনে না নিয়ে, আমরা এক মৃত ঘোড়াকে চালানোর চেষ্টা করতে থাকি। ব্যক্তিগত, গোষ্ঠী, ব্যবসা বা এমনকি সমাজের বিভিন্ন স্তরে, নানা ধরনের ব্যর্থ প্রচেষ্টায় সময়, সম্পদ, এবং শক্তি অপচয় করতে দেখা যায়। জেনেশুনে এই ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে অনেক কারণ থাকে: কখনও তা অযৌক্তিক ধারণার প্রতি আবেগের বন্ধন, কখনও বা স্পষ্ট সত্য দেখার অক্ষমতা, অতীতের কোন ভুল বিনিয়োগের জন্য ন্যাহ্য়তা খোঁজা, শেয়ারহোল্ডার বা ঊর্ধ্বতনদের চাপ, সত্যের মুখোমুখি হওয়ার ভয়, অথবা শুধুমাত্র স্থিতাবস্থায় থাকার প্রবণতা।

‘মৃত ঘোড়া তত্ব’ আমাদের এগিয়ে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। এর জন্য, আমাদের চোখ খোলা রাখতে হবে এবং পরিস্থিতির বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। যে মূহুর্তে আমরা বুঝতে পারবো যে আমরা এক ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সেই মূহুর্তে আমাদের সেই কৌশল থেকে সরে গিয়ে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যদি আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই এক মৃত ঘোড়ার ওপর বসে থাকব, এবং মূল্যবান সময় ও সম্পদ অপচয় করে একই জায়গায় থেমে থাকব।

No comments