কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সংস্কৃত অভয়ামঞ্চে ডাক্তারবাবুদের বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্কনাগরিক প্রতিবাদের আগুন গত এক মাস দেখেছে মহানগর। তার আঁচ পৌঁছেছে জেলাতেও। আর জি কর-কাণ্ডে সুবিচারের দাবি এ বছর বিভিন্ন পুজো মণ্ডপেও দেখা গিয়েছে।কোথাও থিমে…
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সংস্কৃত অভয়ামঞ্চে ডাক্তারবাবুদের বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্ক
নাগরিক প্রতিবাদের আগুন গত এক মাস দেখেছে মহানগর। তার আঁচ পৌঁছেছে জেলাতেও। আর জি কর-কাণ্ডে সুবিচারের দাবি এ বছর বিভিন্ন পুজো মণ্ডপেও দেখা গিয়েছে।কোথাও থিমে, কোথাও নিহত চিকিৎসকের স্মরণে অনুষ্ঠান করে, আবার কোথাও 'অভয়া মঞ্চ' গড়ে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন আমজনতা। এই আবহে এ বার পুজো মণ্ডপের প্রতিবাদ মঞ্চকে ব্যবসায়িক প্রচারে ব্যবহার অভিযোগ উঠল। বাধল বিতর্ক। ঘটনাস্থল হলদিয়া।
হলদিয়া শিল্পাঞ্চল লাগোয়া শিবরামনগরে লক্ষ্মীপুজো বরাবর জাঁকজমক করে হয়। এলাকার ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘের ৪৮তম বর্ষের পুজোয় আর জি কর-কাণ্ডকে সামনে রেখে নারীর দুর্গতি মুক্তির আহ্বানে 'দ্রোহের উৎসব' পালন হচ্ছে। পুজোর থিম- 'আমরা করব জয়'। মেয়েদের নানা বিষয়, অসহায়তার নানা দিক মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে। আর মণ্ডপেরপাশেই রয়েছে সাংস্কৃতিক মঞ্চ। আর জি করে নিহত নির্যাতিতার স্মরণে তার নাম 'অভয়া মঞ্চ'। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে চিকিৎসক তরুণীর প্রতীকী ছবি, তার হাতে মোমবাতি এবং সঙ্গে লেখা জাস্টিস। এই ব্যানারের দু'পাশেই মঞ্চ আলো করে রয়েছে একটি ডায়াগনিস্টিক সেন্টার তথা 'ডাক্তার চেম্বারে'র বিজ্ঞাপনী প্রচার। সেখানে চিকিৎসা সংক্রান্ত কী পরিষেবা কোন কোন চিকিৎসক দেন, তার উল্লেখ রয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ঘাটতি পূরণে যেখানে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন ঘিরে নাগরিক প্রতিবাদের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, সেখানে 'অভয়া মঞ্চে' চিকিৎসা পরিষেবা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনী প্রচার দেখে অনেকেরই প্রশ্ন করছেন, আবেগকে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ ব্যবসায়িক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে না তো? একদিকে বলা হচ্ছে নির্যাতিতার বিচার চাই, অন্য দিকে, ক্লাব কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদী মঞ্চকে বিজ্ঞাপনী প্রচারে ভরিয়ে তুলছেন। এ তো দ্বিচারিতা!
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চৈতন্যপুর শাখার সম্পাদক চিকিৎসক বিধান রায়েরঅভা মঞ্চ কোজাগরী উৎসবে , "এটা একদমই কাম্য নয়। অভয়া মঞ্চ যে কেউ করতে পারেন। কিন্তু অভয়া মঞ্চ ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আমার মনে হয় অভয়া মঞ্চে বিজ্ঞাপনের ব্যাপারটি চিকিৎসকদের না জানিয়েই করা হয়েছে।"
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, ওই ক্লাবের সদস্যরা বামমনস্ক। সঙ্গে কুণালের কটাক্ষ, "কিছু বাম, অতি বাম সমর্থক অভয়া মঞ্চকে ব্যবসায়ী স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে। আর জি কর হাসপাতালে যে ঘটনা ঘটেছে, তার শাস্তির দাবি তো তৃণমূলও করেছে।কিন্তু এভাবে বিষয়টি নিয়ে ব্যবসা হোক, তা অন্তত নাগরিক সমাজ চায় না।” তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পরিতোষ পট্টনায়ক বলছেন, "নাগরিক সমাজের প্রতিবাদকে বামেদের ভূত দেখছে তৃণমূল। নিজেদের দোষ চাপা দিতে বামেদের উপর দায় চাপাচ্ছে সরকার।" ক্লাব কর্তৃপক্ষ অবশ্য চাঁদা, মনে করাচ্ছে, সদস্যদের শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান, বিজ্ঞাপন, স্মরণিকা- প্রধানত এই চারটি ক্ষেত্র থেকে উৎসবের অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ক্লাব সম্পাদক বলেন, "এবার প্রথমে ঠিক হয়েছিল প্রতিবাদের উৎসব হবে। তবে অভয়া মঞ্চে বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রের বিজ্ঞাপন কিছু ভেবে দেওয়া হয়নি। প্রতি বছরই কোনও না কোনও প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেয়। এতে আলাদা কোনও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নেই।" যে সংস্থা ওই বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তার কর্ণধার গৌতম হাজরার দাবি, "ক্লাব কর্তৃপক্ষকে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। তাঁরা কোথায় প্রদর্শন করবেন, সেটা ক্লাবের দায়িত্ব। অভয়া মঞ্চে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে, তা আমাকে জানানো হয়নি।"
No comments