Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কার্তিক মাস ধরে চলছে দামোদর ব্রত

কার্তিক মাস ধরে চলছে দামোদর ব্রত
-----দামোদর কে?------ দামোদর ব্রত কী? ----প্রদীপ প্রজ্বলনের মাহাত্ম্য কী?---------আরতি নিবেদনের নিয়ম কী?.প্রশ্নঃ-বাংলা কোন্ কোন্ মাসে কোন্ কোন্ বৈষ্ণব মাস পড়ে ?
দামোদরঃ-পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আ…

 

কার্তিক মাস ধরে চলছে দামোদর ব্রত


-----দামোদর কে?

------ দামোদর ব্রত কী?

 ----প্রদীপ প্রজ্বলনের মাহাত্ম্য কী?

---------আরতি নিবেদনের নিয়ম কী?

.প্রশ্নঃ-বাংলা কোন্ কোন্ মাসে কোন্ কোন্ বৈষ্ণব মাস পড়ে ?


দামোদরঃ-

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম দামোদর। 'দাম' শব্দের অর্থ রশি এবং 'উদর' শব্দের অর্থ হচ্ছে কোমর। মা যশোদা কর্তৃক যাঁর উদরে দাম বা রশি বন্ধন হয়েছে, তিনিই দামোদর।

 দামোদর ব্রতঃ-

বৈদিক সংস্কৃতিতে সুপ্রাচীন কাল হতে কার্তিক ব্রত বা দামোদর ব্রত পালিত হয়ে আসছে। দামোদর ব্রতের সময়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় কর্পূর সমন্বিত ঘৃত বা তিল তেল দ্বারা প্রদীপ প্রজ্বলন করে ভগবানকে আরতি নিবেদন করতে হয় এবং দামোদর অষ্টকম্ পাঠ করতে হয়।

প্রদীপ প্রজ্বলনের মাহাত্ম্যঃ-

প্রজ্বলিত কর্পূর সমন্বিত দীপ দ্বারা আরতি করলে সপ্তকল্প যাবত ভগবদ্ধামে বাস হয়। মনোহর দৃশ্য প্রদীপ দ্বারা শ্রীহরির আরতি করলে কাম-ক্রোধাদি বিদূরিত হয় এবং পুনর্জন্ম হয় না। দীপের আলোতে ভগবানের মুখমণ্ডল দর্শন করলে ব্রহ্মহত্যাদি পাপ হতে মুক্ত হওয়া যায়। যে গৃহে দীপদান করা হয় তার সর্বদা ধন, যশ, পুত্র লাভ হয় এবং পূর্বপুরুষগণ সন্তোষ্ট হন।

আরতি নিবেদনের নিয়মঃ-

ঘৃত বা তিলের তৈল যুক্ত কর্পূর মিশ্রিত প্রদীপ দ্বারা ভক্তি সহকারে ভগবানের চরণে চার বার, নাভিদেশে দুই বার, মুখমণ্ডলে তিন বার এবং সর্বাঙ্গে সাত বার প্রদীপ ঘুরিয়ে আরতি করতে হয়। মাটির প্রদীপ একবারই ব্যবহার যোগ্য।

প্রশ্নঃ- সম্প্রতি আষাঢ় মাসে শুক্লপক্ষীয়া নির্জলা একাদশী ব্রত করলে কি লাভ হবে?* 


উত্তরঃ নির্জলা একাদশী ব্রত করলে পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে, ধনধান্য লাভ হবে, সুখ লাভ হবে, সৌভাগ্য লাভ হবে, বৈষ্ণবপদ লাভ হবে, বৈকুণ্ঠগতি লাভ হবে।


 প্রশ্নঃ- বৈষ্ণব পঞ্জিকা মতে প্রত্যেক মাসের নাম কি?* 


উত্তরঃ ১)বিষ্ণু, ২)মধুসূদন, ৩)ত্রিবিক্রম, ৪)বামন, ৫)শ্রীধর, ৬)হৃষীকেশ, ৭)পদ্মনাভ, ৮)দামোদর, ৯)কেশব, ১০)নারায়ণ, ১১)মাধব, ১২)গোবিন্দ- এই দ্বাদশ মাস। কোনও কোনও বছর মলমাস বা অধিকমাস উপস্থিত হয়, তার নাম পুরুষোত্তম মাস।


 প্রশ্নঃ- বাংলা কোন্ কোন্ মাসে কোন্ কোন্ বৈষ্ণব মাস পড়ে তা জানতে চাই।


উত্তরঃ 

১)অগ্রহায়ণ মাসে— কেশব,

২)পৌষে— নারায়ণ, 

৩)মাঘে— মাধব,

 ৪)ফাল্গুনে— গোবিন্দ, 

৫)চৈত্রে— বিষ্ণু, 

৬)বৈশাখে— মধুসূদন, 

৭)জ্যৈষ্ঠে— ত্রিবিক্রম, 

৮)আষাঢ়ে— বামন, 

৯)শ্রাবণে— শ্রীধর, 

১০)ভাদ্রে— হৃষীকেশ,

১১)আশ্বিনে— পদ্মনাভ ও 

১২)কার্তিকে— দামোদর মাস।


 প্রশ্নঃ- শাস্ত্রে পাই, কারও একাদশী তিথিতে মৃত্যু হলে তার প্রতি যমদূতের অধিকার থাকে না। আজ রাতে একাদশী তিথি চারটায় শেষ হলে পরদিন পারণের পূর্বে মৃত্যু হলো, তার কোন্ গতি হবে?* 


উত্তরঃ একাদশী ব্রত করে যদি কেউ মারা যায় সেইদিনে, কিংবা পরদিনে পারণের পূর্বে, তার বৈকুণ্ঠ গতি হয়।


 প্রশ্নঃ-  একাদশীর দিন শ্রাদ্ধকার্য অনুষ্ঠান করা যায় কি ?* 


উত্তরঃ না, একাদশী ব্রতের দিন শ্রাদ্ধকার্য অনুষ্ঠান করা কখনই উচিত নয়। একাদশীতে শ্রাদ্ধ করলে কিংবা করালে পিতৃদেবগণ সহ নিজেরাও নরক গমন করে থাকে।


 প্রশ্নঃ- অসুস্থতার কারণে ডাক্তারের নির্দেশে স্নান না করে, একাদশী তিথি বা অন্য বৈষ্ণব তিথি পালন করা যায় কি ?* 


উত্তরঃ আচমন করা যেতে পারে। মানস স্নান, মন্ত্র স্নান, জল স্নান, বায়ু স্নান ইত্যাদি কত রকমের স্নান আছে। অসুস্থতার কারণে প্রচুর জল সর্বাঙ্গে ঢেলে স্নান করতে হবে এমন নয়। একাদশী ইত্যাদি ভক্তিপ্রদ তিথি অবশ্যই পালন করতে হয়।


 প্রশ্নঃ- একাদশী তিথি পালন কিভাবে করতে হয়?* 


উত্তরঃ বলা হয়, “মাধব-তিথি ভক্তি-জননী যত্নে পালন করি।' অর্থাৎ একাদশী হচ্ছে ভক্তির জননী। একাদশী ব্রত পালন করলে হৃদয়ে কৃষ্ণভক্তির উদয় হয়।


আমাদের সমাজে কেউ আজ কেউ কাল এভাবে একাদশী পালন করেন। সাধারণ নিয়ম হলো যেদিন ভোরে একটু দশমী তিথি তারপর সারা দিন রাত একাদশী তিথি, ভক্তরা ঐদিন ব্রত পালন করেন না। দশমী বিদ্ধা একাদশী বর্জনীয়। বরং পরদিন ভোরে একটুখানি একাদশী বাদবাকী সারাদিন দ্বাদশী তিথি হলেও ঐ দ্বাদশী বিদ্ধা একাদশীই পালন করা কর্তব্য।


দ্বিতীয়ত, কিছু আহার না করা ভালো। অসমর্থ হলে জল পান, তাতেও অসমর্থ হলে আলু-কাঁচকলা-পেঁপে সবজি, আলুভাজা, চীনা বাদাম ভাজা বা সেদ্ধ, ফল-মূল, দুধ বা দুধজাতীয় খাবার শ্রীভগবানকে ভোগ নিবেদন করে গ্রহণ করবেন।


তৃতীয়ত, ধান-গম-ভুট্টা-ডাল-সরিষা জাতীয় কোনও খাবার গ্রহণ করা যাবে না। কেননা একাদশীর দিন পাপ-পুরুষকে ভগবান শস্যাদিতে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সরষের তেল গায়ে মাখাও নিষিদ্ধ। শিম বরবটী জাতীয় খাবারও নিষিদ্ধ।


চতুর্থত, বেশী করে হরিনাম জপ, গীতা-ভাগবত বা অন্যান্য ভক্তিগ্রন্থাদি পাঠ বা শ্রবণ করতে হয়। গঙ্গা বা অন্য পবিত্র নদীতে স্নান, অন্যথায় গঙ্গা গঙ্গা উচ্চারণ ও স্মরণ করেই স্নান করতে হয়।


পঞ্চমত, একাদশী তিথি হচ্ছে ভগবান শ্রীহরির তিথিরূপে এক বিশেষ প্রকাশ। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি অর্থাৎ পাঁচ জ্ঞান-ইন্দ্রিয়, পাঁচ কর্ম-ইন্দ্রিয় ও এক অন্তরিন্দ্রিয় মন- এই একাদশ ইন্দ্রিয়কে শ্রীহরির প্রতি নিবিষ্ট করার দিন। সব দিনই ভক্তের কাছে ভগবানকে স্মরণ করার ও সেবা করার দিন। কিন্তু একাদশী তিথি হচ্ছে গত দু'সপ্তাহ 'আমি কি ভুল, কি ঠিক করেছি সে সবের' আত্ম সমীক্ষার দিন হিসাবে ধার্য করেন কোনও কোনও ভক্ত।


যষ্ঠত, একাদশী ব্রতের রাত্রিতে জাগরিত থেকে হরিকথা শ্রবণ কীর্তন স্মরণ হরিনাম জপ প্রভৃতিতে যুক্ত থাকা ভালো। তাকে বলে হরিবাসর করা। কিন্তু পরদিন যাতে বেশি না ঘুমিয়ে পড়েন, সেইজন্য পরিমিত বিশ্রাম বাঞ্ছনীয়।


সপ্তমত, একাদশী ব্রত দিনে চুলকাটা, নখকাটা, সাবান মাখা প্রভৃতি কর্ম না করাই উচিত।


অষ্টমত, একাদশী ব্রতের পরদিন পারণ সময় নির্ধারিত থাকে। সেই সময়ে কমপক্ষে একদানা শস্যজাতীয় প্রসাদ গ্রহণ করতে হয়। সবচেয়ে ভালো, শ্রীহরিকে আগে ভোগ নিবেদন করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করে নিজে প্রসাদ পাওয়া।


নবমত, দ্বাদশী তিথিতে তুলসী চয়ন নিষিদ্ধ। সেজন্য অর্চনের জন্য তুলসী পাতা সংগ্রহ আগের দিন করে রাখতে হয়। ভুলে গেলে ঝরা তুলসী পাতা নিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রশ্নঃ-  অনেকে বলছেন যে, একাদশী ব্রত বিধবা মহিলারা করবে, অন্যরা করবে না। এই কথাটি ঠিক কিনা ?* 

উত্তরঃ পাপাচারে অভ্যস্ত ব্যক্তিরাই এরকম শাস্ত্রবিরুদ্ধ নিজেদের মনগড়া কথা বলে অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে থাকে। কোথাও নির্দেশ নেই যে, একাদশী ব্রত কেবল বিধবারাই করবে আর সধবা বা কুমারী ব্রতহীন হয়ে থাকবে। বিধবা অধবা সধবা এবং পুরুষেরাও একাদশী ব্রত তিথি পালন করবে। একাদশী তিথিকে বলা হয় ভক্তিজননী। একাদশী ব্রত পালনে হৃদয়ে কৃষ্ণভক্তি জাগ্রত হয়। পদ্মপুরাণের উত্তরখণ্ডে শিব পার্বতীকে বলছেন-

বর্ণানামাশ্রমাণাং চ স্ত্রীণাং চ বরবর্ণিনি।

একাদশ্যপাবাসস্তু কর্তব্যো নাত্র সংশয়ঃ ॥


'হে সুন্দরি! ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র এই বর্ণ ও ব্রহ্মচারী-গৃহস্থ-বাণপ্রস্থ- সন্ন্যাসী এই আশ্রম এবং স্ত্রীগণের পক্ষে একাদশী ব্রত উপবাস কর্তব্য। এতে কোনও সন্দেহ নেই।'


সধবাগণ অবশ্যই একাদশী ব্রত পালন করবে। এই সম্বন্ধে বিষ্ণুধর্মোত্তর শাস্ত্রে বলা হয়েছে–


সপুত্রশ্চ সভার্যাশ্চ স্বজনৈর্ভক্তিসংযুতঃ। একাদশ্যামুপবসেৎ পক্ষয়োরুভয়োরপি ॥


"ভক্তি সংযুক্ত হয়ে স্ত্রী, পুত্র ও স্বজনদের সঙ্গে শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশীতে উপবাসী থাকা কর্তব্য।”


একসময় পৃথিবীতে রুক্সাঙ্গদ নামে এক ধর্মপ্রাণ রাজা রাজত্ব করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন 'আমার অধিকার মধ্যে যাদের বয়স আট থেকে আশি বছরের মধ্যে তারা হরিবাসরে অর্থাৎ একাদশী ব্রত দিনে আহার করলে আমি সেই সমস্ত পাতকীকে সংহার করবো।' এই কথা বলে নারদীয় পুরাণে নির্দেশ করা হয়েছে-


কুর্যান্নরো বা নারী বা পক্ষয়োরুভয়োরপি ।।


'উভয় পক্ষীয়া একাদশী ব্রত নর-নারী সকলেরই কর্তব্য।'

 প্রশ্নঃ- একাদশীতে উপবাস করার কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা তো উপবাস  করি না, আমরা ফল মূল সবজী ভোজন করে থাকি। এতে কি দোষ হয় না ?* 

উত্তরঃ মহাভারতে উদ্যোগ পর্বে বলা হয়েছে—

অষ্টৈাতান্যব্রতয়ানি আপো মূলং ফলং পয়ঃ। 

হবির্ব্রাহ্মণকাম্যা চ গুরোর্বচনমৌষধম্ ॥

জল, ফল, মূল, দুধ, ঘি, ব্রাহ্মণ কামনা, গুরুদেবের বচন এবং ঔষধ - এই আটটি বস্তু ব্রতনাশক হয় না।'

তবে শ্রীহরির শয়ন, পার্শ্ব পরিবর্তন ও উত্থান একাদশীতে এবং নির্জলা পাণ্ডবা একাদশীতে ফল জল ইত্যাদি খাই খাই ভাব ভালো লক্ষণ নয়। ফল মূল খাওয়ার প্রতি মন নিযুক্ত হলে হৃদয়ে সঞ্চিত অপরাধ মার্জিত হয় না। সমস্ত একাদশী ব্রতের পালনে আমাদের কোন না কোন ত্রুটি নির্জলা পাণ্ডবা একাদশীর উপবাস পালনে মার্জিত হয়ে যায়।


কলিযুগের মানুষ নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধিতে জর্জরিত। কিন্তু হরি তুষ্টির জন্য ব্রত পালনে শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে যথাসাধ্য হরিনাম জপ, হরিকথা শ্রবণ বা পাঠ, হরিসেবাপরায়ণ হয়ে একাদশীর অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করছেন, তাতে শ্রীহরির বহু কৃপা লাভ হবে।


No comments