ধনতেরাস উপলক্ষে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রুপোর জিনিস কেনায় ঝোঁক বেড়েছে সোনার দাম অত্যধিক চড়া হওয়ায় এবছর ধনতেরাস উপলক্ষে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রুপোর জিনিস কেনায় ঝোঁক বেড়েছে গ্রাহকদের। ধনতেরাসে রুপোর লক্ষ্মী-গণেশ ও কয়েন কেনার রীতি রয়েছে। …
ধনতেরাস উপলক্ষে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রুপোর জিনিস কেনায় ঝোঁক বেড়েছে
সোনার দাম অত্যধিক চড়া হওয়ায় এবছর ধনতেরাস উপলক্ষে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রুপোর জিনিস কেনায় ঝোঁক বেড়েছে গ্রাহকদের। ধনতেরাসে রুপোর লক্ষ্মী-গণেশ ও কয়েন কেনার রীতি রয়েছে। গত কয়েক বছরে অবাঙালিরা তো বটেই, শিল্পশহরের বাঙালি পরিবারের মধ্যে ধনতেরাসে রুপোর নানা ধরনের লক্ষ্মী-গণেশ কেনার চল দ্বিগুণ বেড়েছে। তার বাইরেও ধনতেরাতে রুপোর নানা আইটেম বিক্রি হয়। এবার ধনতেরাতে সোনার বদলে রুপোর নানা গিফট আইটেম ও ব্যবহারি জিনিসে বাড়তি বিনিয়োগ করছেন শহরের মধ্যবিত্তরা। অল্প বিনিয়োগেই রুপোর সুন্দর কারুকাজ করা নতুন ধরনের আইটেম মিলছে হলদিয়ায়। রুপোর তৈরি মানিব্যাগ, রুপোয় বাঁধানো গীতা, হনুমান চালিসা, গণেশ ঘড়ি, রিস্টওয়াচ, হাতি, খোঁপার ক্লিপের এবার ধনতেরাসে দারুণ চাহিদা। পুজোর দেড় দু'মাস আগে থেকেই সেই অর্ডার পড়েছে শিল্পশহরের নামী দোকানগুলিতে। দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া থেকেও ধনতেরাতে ক্রেতারা আসছেন হলদিয়ার টাউনশিপে রুপোর কারুকাজ করা অভিনব সব আইটেম কিনতে। তবে সোনা কেনায় কিন্তু ভাটা পড়েনি। বরং সোনার দাম ঊর্দ্ধমুখী হলেও ধনতেরাস উপলক্ষে সোনার গয়না কেনাকাটা নিয়ে আশাবাদী স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। দাম বেড়ে যাওয়ায় সৌখিন হালকা সোনার গয়না কেনাতে এবার ঝোঁক বেশি। সোনার সঙ্গে কম দামের মধ্যে হিরে বসানো গয়নাও কিনছেন মহিলারা। সেই অর্ডারও পড়েছে পুজোর আগে থেকেই।
হলদিয়ায় অবাঙালিদের পাশাপাশি ধনতেরাসে মাঙ্গলিক রীতির কারণে সোনা-রুপোর গয়না বা রুপোর লক্ষ্মী-গণেশ ও অন্যান্য আইটেমের বড় ক্রেতা এখন বাঙালি পরিবারগুলি। বন্দরশহরে বিভিন্ন শিল্পসংস্থায় অবাঙালি আধিকারিক ও কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ব্যবসায়িক কারণেও বহু অবাঙালির বসবাস হলদিয়ায়। গত ১০-১২ বছরে হলদিয়ায় ধনতেরাস ও দীপাবলির বড় বাজার তৈরি সোনা-রুপো, মিষ্টি, নতুন জামাকাপড় ও দশকর্মার জিনিস ঘিরে। হলদিয়ার টাউনশিপ মাখনবাবুর বাজারের মোহনা মার্কেট কমপ্লেক্সের একটি রুপো এম্পোরিয়ামের মালিক স্বপনকুমার সী বলেন, সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার ধনতেরাতে রুপো কেনাতে আগ্রহ বেড়েছে। ক্রেতারা সাধ্যের মধ্যে নতুন আইটেমের খোঁজ করছেন। লক্ষ্মী-গণেশের বদলে লক্ষ্মীর আর একটি রূপ কমলেকামিনী কিনছেন কেউ, অনেকেই কালীমূর্তি সহ রামকৃষ্ণ-সারদা মা কিনছেন। রুপোর রাধাকৃষ্ণের চাহিদাও বেড়েছে। স্বপনবাবুর দোকানে রুপো বাঁধানো গীতা, হনুমান চালিসার এবার দারুণ চাহিদা। শুধু রুপোর তৈরি দেবদেবতার মূর্তি নয়, অনেক ক্রেতার আবার সৌখিন জিনিস কেনা বা সংগ্রহে ঝোঁক বেশি। ধনতেরাসের সময়ই তাঁরা রুপোর খড়ম, কেউ পানপাত্র কেনার জন্য আগাম অর্ডার দিয়েছেন। ধনতেরাসে ২০০ টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকার রুপোর দারুণ আইটেম মিলছে টাউনশিপে।
ধনতেরাসের আগেই সোনার দাম আশি হাজার পার করায় মাথায় হাত পড়েছে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, পুজোর এক মাসের মধ্যে সোনার দাম ১০ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে। মজুরিতে যতটা সম্ভব ছাড় দিয়ে ক্রেতা টানার কৌশল নিয়েছে সবাই। হলদিয়ার টাউনশিপের ল্যান্ডমার্ক সংলগ্ন একটি জুয়েলারি দোকানের মালিক চিত্তরঞ্জন কামিলা বলেন, ধনতেরাসের দিনে সোনা বা রুপো কেনা শুভ মনে করেন অনেকে। সোনার দাম বাড়লেও অনেক ক্রেতাই আগে থেকে সোনার গয়নার অর্ডার করে রাখেন। তাঁরা দামও প্রায় মিটিয়ে রাখেন। ওই বিশেষ দিনেই তাঁরা সোনা বা রুপোর গয়নাটি ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে সংগ্রহ করেন। এই ট্রেন্ড এখন খুব চালু হয়েছে। কারণ এরপরই অঘ্রাণ মাসে বিয়ে, অন্নপ্রাশনের সিজন শুরু হয়। তার আগেই ধনতেরাসের শুভ দিনে সোনা কিনে রাখেন। তিনি বলেন, এবার ধনতেরাসে ১২-১৪ হাজার টাকার মধ্যে গলায় হাল্কা সোনার চিক বা চোকারের চাহিদা বেড়েছে। বঙ্গীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির হলদিয়া শাখার সম্পাদক মধুসূদন কুইলার দুর্গাচক টাউনে বড় দোকান রাজলক্ষ্মী জুয়েলারি ওয়ার্কস রয়েছে। তিনি বলেন, সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় পুরনো সোনা বদল করে সোনা কিনছেন ক্রেতারা। তবে ধনতেরাসে ছাড় দেখে সোনা কিনতে শুরু করেছেন মানুষ। এদিকে, দীপাবলি ও ধনতেরাস উপলক্ষে ১০দিন আগে থেকেই শিল্পশহরের দোকানগুলি সেজে উঠেছে বাংলার লৌকিক ডিজাইনের পোড়ামাটির প্রদীপ এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের রঙবাহারি দেওয়ালি প্রদীপে। টাউনশিপের একটি দশকর্মা ভাণ্ডারের ব্যবসায়ী সুভাষ রথ বলেন, এই সময়ে শুধু টাউনশিপেই ৫০ হাজারের বেশি মাটির প্রদীপ বিক্রি হয়। তবে এবার বৃষ্টির কারণে মাটির প্রদীপের যোগান কম এবং দামের চড়া।
No comments