বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র হানা আসন্ন। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া এবং ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে। হাত গুটিয়ে বসে নেই রাজ্য সরকার। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগাম একগুচ্ছ ব্য…
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র হানা আসন্ন। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া এবং ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে। হাত গুটিয়ে বসে নেই রাজ্য সরকার। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগাম একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলি—এই ন’টি জেলায় আজ, বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এসব জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। সমুদ্র ও নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যে জেলাগুলিতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। কলকাতা সহ জেলায় জেলায় চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ডিভিসির বাঁধ থেকে জল ছাড়ার কারণে নিম্ন দামোদর অববাহিকা অঞ্চলে নতুন করে যাতে পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে ব্যাপারে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ কেন্দ্রের ক্যাবিনেট সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য পর্যটকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিবদের একাধিক জেলায় পাঠানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর কেন্দ্রের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাকে যেভাবে বঞ্চনা করা হয়েছে, এদিন সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে যে গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, সেটি আজ বুধবার শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য় পরিণত হবে। কাল, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়বে তীব্র ঘূর্ণিঝড়। ঠিক কোন জায়গায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল (আই) উপকূল অতিক্রম করবে, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তা নির্দিষ্টভাবে জানায়নি আবহাওয়া দপ্তর। তবে আবহাওয়া দপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথের যে ‘গ্রাফিক্স’ দেখাচ্ছে, তাতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল ওড়িশার ভদ্রকের আশপাশ দিয়ে স্থলভাগে ঢুকতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস জানান, ওড়িশা উপকূলে ল্যান্ডফল হলেও দক্ষিণবঙ্গে জোরালো প্রভাব পড়বে ‘ডানা’র। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা আগেই জারি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের অন্যত্রও কমবেশি বৃষ্টি চলবে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপকূল এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া শুরু হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরে হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার হতে পারে। সাগরদ্বীপ ও সুন্দরবন এলাকায় ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু এলাকায় ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।
No comments