Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মা-জিরাফের লাথি -আশিস কুমার পন্ডা

মা-জিরাফের লাথি -আশিস কুমার পন্ডা
মা-জিরাফ যখন দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জিরাফ শাবকের জন্ম দেয়,  পৃথিবী যেন কেঁপে ওঠে। প্রায় ৫০ থেকে ৭০ কিলোগ্রাম ওজনের জমির সবচেয়ে উঁচু নবজাতক মায়ের গর্ভ থেকে প্রায় ছয় থেকে সাত ফুট উচ্চতা থেকে …

 




মা-জিরাফের লাথি -আশিস কুমার পন্ডা


মা-জিরাফ যখন দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জিরাফ শাবকের জন্ম দেয়,  পৃথিবী যেন কেঁপে ওঠে। প্রায় ৫০ থেকে ৭০ কিলোগ্রাম ওজনের জমির সবচেয়ে উঁচু নবজাতক মায়ের গর্ভ থেকে প্রায় ছয় থেকে সাত ফুট উচ্চতা থেকে পিঠের উপর ভর দিয়ে মাটিতে অবতরণ করে। পতনের ধাক্কা নবজাতককে তার প্রথম শ্বাস নিতে সাহায্য করে। মায়ের গর্ভের উষ্ণ আশ্রয় ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে তার কষ্ট হয়। অসহায় শাবকটি  শরীরের নিচে পা ভাঁজ করে নিথর হয়ে কুঁকড়ে শুয়ে থাকে। এই অবস্থান থেকে সে অচেনা বিশ্বকে অনুভব করার চেষ্টা করে। মা-জিরাফ মাথা নিচু করে শাবকটিকে দেখে নেয় এবং প্রথমবার তার বাচ্চাকে চুমু খায়। এরপর সে তার সন্তানের সঙ্গে এক নির্মম আচরণ করে।

শাবকের পাশে সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রায় এক মিনিটের জন্য অপেক্ষা করে এবং সবচেয়ে অযৌক্তিক এক কাজ করে। লম্বা পা দুলিয়ে সে তার শাবককে সজোরে এক লাথি মারে। বেচারা শাবক, বাতাসে কিছুটা উড়ে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না, ব্যাথা পেয়ে তার পাগুলো এলোমেলো ছুঁড়তে থাকে। মা-জিরাফ এই সহিংস প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করে চলে। শাবকটি ধীরে ধীরে শিখে নেয় যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কিছু না করলে, এই লাথি কখনই থামবে না। শাবকটি তখন দাঁড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে এবং প্রতিটি ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে, সে দাঁড়ানোর লক্ষ্য অর্জনের কাছে একটু একটু করে পৌঁছে যায়। একসময়, শাবকটি তার পা ছড়িয়ে দেয় এবং প্রথমবারের মতো তার টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ায়। মা-জিরাফ তার সন্তানকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দেখে খুশি হয় এবং তারপরে সবচেয়ে অসাধারণ কাজটি করে। আগের মতই সে আরও একবার শাবকটিকে লাথি মারে। শাবকটি আবার ছিটকে পড়ে, কিন্তু, এবার সে দেরি না করে উঠে দাঁড়ায় এবং দৌড়াতে শুরু করে। এবার কিন্তু মা-জিরাফ তার শাবকের কাছে এসে দাঁড়ায় এবং আদর করে, চুমু খায়, গলায় গলা মেলায়।

কিন্তু, মা-জিরাফ কীভাবে তার নবজাতকের প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারে? আপাতদৃষ্টিতে মা-জিরাফকে হৃদয়হীন বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এক বিশেষ কারণে সে এই নিষ্ঠুর কাজটি করে। জঙ্গলের মধ্যে, জিরাফ শাবক মোটেই নিরাপদ নয়। সিংহ, হায়েনা, চিতাবাঘ এবং অন্যান্য শিকারি পশুরা এর নরম মাংস তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে। তাই নবজাতককে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উঠে দাঁড়াতে হবে এবং নিরাপত্তার জন্যে জিরাফের দলের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলাফেরা করতে হবে। দায়িত্বশীল মা-জিরাফ নিশ্চিত করতে চায় যে তার নবজাতক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শিখে নিয়েছে; 'তুমি যতই খারাপভাবে পড়ে যাও না কেন, হাল ছেড়ে দিও না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উঠে দাঁড়াও এবং প্রস্তুত হও।‘ তাই, মা-জিরাফের তার শাবককে লাথি মারার মধ্যে নিষ্ঠুরতা নেই, তার উদ্দেশ্য কেবল সন্তানের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করা এবং বন্য জীবনের বিপদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শাবককে আরামের অঞ্চল থেকে বের করে আনা।  

প্রকৃতির মধ্যে কার্যকরী অভিভাবকত্বের সেরা উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের সন্তান যখন এই পৃথিবীতে জন্ম নেয়, তখন বন্য শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নবজাতককে জিরাফ শাবকের মতো শারীরিকভাবে লাথি মারার দরকার পড়ে না। কিন্তু এই পৃথিবী জঙ্গলের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বন্য প্রাণীদের মতো, মানব পিতামাতারও শিশুদের শিক্ষা দিতে হয়, তাদের ভবিষ্যতের কঠিন বিশ্বের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হয়। তাই, যদি কখনও মনে হয় যে তোমার বাবা-মা, শিক্ষক, পরামর্শদাতা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তোমাকে কঠিনভাবে শাসন করছেন, তার জন্যে বিরক্ত হয়ো না। মা-জিরাফের মতো, তারা নিশ্চয়ই তোমাকে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কোন পাঠ শেখানোর চেষ্টা করছেন! তোমার জীবনের সেই সব ব্যক্তিদের জন্য কৃতজ্ঞ থাক যারা তোমাকে জীবনের শিক্ষা এবং সহায়তা দিচ্ছেন। অনেক ব্যক্তি তাদের জীবনে এমন ব্যক্তিদের আশীর্বাদ পান না যারা প্রতিবার পড়ে যাওয়ার পরে তাদের হাত ধরে উঠে দাঁড়াতে শেখান। তাই, যখন তারা ব্যর্থ হন, তারা হাল ছেড়ে দেন। সফল হওয়ার জন্য কেউ তাদের আরামের জায়গা থেকে বের করে আনেন না।

সবশেষে, জীবনে সাফল্যের যে কোনও স্তরে পৌঁছানোর জন্য, কখনও কখনও তুমি বারবার প্রত্যাখ্যাত হবে, বছরের পর বছর ধরে ধাক্কা খেতে থাকবে, কিন্তু, তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। তবে প্রতিবারই  যখন তুমি মুখ থুবড়ে পড়বে, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সাফল্য পরিমাপ করা হয় তুমি কতবার জিতেছ তা দিয়ে নয় বরং তুমি কতবার ছিটকে যাওয়ার পরে ফিরে এসেছ তা দিয়ে। ছিটকে যাওয়ার পরে তুমি যখনই উঠে দাঁড়াবে, তোমার মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা ও অধ্যবসায় তৈরি হবে। বিশ্বের সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়লে তাদের মধ্যে একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাবে। তারা সবসময় সমস্ত কিছুতে সফল হতে পারেননি। তাদের সকলের চরিত্রের মধ্যে একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, যখনই তারা পড়ে গিয়েছেন, জিরাফ শাবকের মত তারা আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন!

No comments