হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজারের পুনরুজ্জীবনের আশা শেষ!
হলদিয়া বন্দরকে জমি ফেরত হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজারের পুনরুজ্জীবনের আশা শেষ!দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা পুনরুজ্জীবনে আগ্রহ দেখালেও হলদিয়ায় সেই সদিচ্ছা দেখায়নি কেন্দ্রের। যদিও…
হলদিয়া বন্দরকে জমি ফেরত হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজারের পুনরুজ্জীবনের আশা শেষ!
দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা পুনরুজ্জীবনে আগ্রহ দেখালেও হলদিয়ায় সেই সদিচ্ছা দেখায়নি কেন্দ্রের। যদিও দু’ দশকের বেশি সময় ধরে একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলদিয়ায় এসে রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশনের (এইচএফসি) বন্ধ সার কারখানা নিয়ে শুনিয়ে গিয়েছেন আশার বাণী। এবার সার কারখানার সমস্ত জমি হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ওই জমি হস্তান্তরের অর্ডার দিয়েছে কেন্দ্র। সত্তরের দশকে ওই জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজে এইচএফসিকে দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০০২ সালে সার কারখানা বন্ধ হওয়ার পর পড়েছিল জমি। পড়ে থাকা জমি ফেরত নিয়ে সার ও জাহাজ মন্ত্রকের দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে শুরু হয়েছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া। এই ঘটনা সার কারখানা পুনরুজ্জীবনের আশায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে। সম্প্রতি লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ এইচএফসির দুর্গাপুর ও হলদিয়া সার কারখানা পুনরুজ্জীবনে সরব হয়েছিলেন। তবে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় হলদিয়া এইচএফসি পুনরুজ্জীবনে আর কোনও সম্ভবনাই রইল না। এদিকে, টাউনশিপে এইচএফসি আবাসনে এখনও লিজ চুক্তিতে থাকেন দু› শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ওই কর্মীরা। তবে এইচএফসি কর্তৃপক্ষের তরফে ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার লিজ চুক্তি আরও ১১ মাস বাড়ানোর সার্কুলার পৌঁছনোর পর কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়েছে।
১৯৭২ সালে হলদিয়া এইচএফসি সার কারখানা গড়ার কাজ শুরু হয়। ৫০০ একরের বেশি জমিতে গড়ে ওঠা এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানা ছিল হলদিয়ার এইচএফসি। আশির দশকের গোড়ায় সার উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীকালে কেন্দ্রের বিভিন্ন সার পলিসির কারণে উৎপাদন কমে গিয়ে ধুঁকতে থাকে। শেষে ২০০২ সালে তৎকালীন বিজেপি সরকারের আমলে ওই সার কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এইচএফসির প্ল্যান্ট এরিয়ায় পড়ে থাকা জমির একাংশ ২০০৬ সাল নাগাদ দেওয়া হয় টাটাদের স্টিল ডিভিশনকে কোক ও পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির জন্য। বাকি ১৭৫ একর জমি রয়েছে আইওসি রিফাইনারির ঠিক পাশেই। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ এইচএফসির কাছে জমি ফেরত চাইছিল। প্ল্যান্ট এরিয়াতে ১৭৫ একর এবং টাউনশিপ আবাসন এলাকায় ৬৫ একর জমি রয়েছে এইচএসসির। টাউনশিপে সেক্টর এইট ও সেক্টর থার্টিন দুটি এলাকায় এইচএফসির এ, বি, সি ও ডি চার ধরনের আবাসন রয়েছে। এইচএফসির শুরুতে ৯০ বছরের চুক্তিতে জমি দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে সেই চুক্তির মেয়াদ কমে ৩০ বছর হয়।
এইচএফসি কারখানা বন্ধ হওয়ার পর ২০০৪ সাল পর্যন্ত লিজ বাড়ানো হয়েছিল। এরপর গত ২০ বছরে আর জমির লিজ মেয়াদ বাড়ানো হয়নি এইচএফসির। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাস বলেন, সার ও জাহাজ মন্ত্রকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে হস্তান্তর নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। অবশেষে হস্তান্তরের অর্ডার এসেছে। প্ল্যান্ট এরিয়াতে কারখানার কিছু কাঠামো আছে। সেগুলি ভেঙে আগামী অক্টোবর নাগাদ এইচএফসি জমি ফেরত দেবে। অন্যদিকে, আবাসন এলাকায় এইচএফসির কোয়ার্টারগুলি কোন কোন সংস্থাকে কীভাবে লিজ দেওয়া আছে, সেই তথ্য বিনিময়ের কাজ চলছে। এরপর ওই আবাসন সহ জমি বন্দরকে হস্তান্তর করবে এইচএফসি।
এইচএফসির হলদিয়া ডিভিশনের ইনচার্জ শুভেন্দু গোস্বামী বলেন, চলতি বছরেই এইচএফসি জমি ফেরত দেবে বন্দরকে। টাউনশিপে এইচএফসির ১১০০ ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে ২৪০টিতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা ভাড়ায় থাকেন। বাকি ৬০টি বিভিন্ন শিল্প সংস্থা ও সরকারি আধিকারিকদের ভাড়ায় দেওয়া আছে। হস্তান্তরের পর এইচএফসির আবাসনের বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলতে পারব না।
No comments