হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশি জাহাজকে গ্রেফতার করলো
নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্য হলদিয়া বন্দরে নামিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল একটি বিদেশি জাহাজ। হাইকোর্টের নির্দেশে সেই জাহাজকে ‹গ্রেপ্তার› করে রাখা হল বন্দরের ডক এরিয়ার ৩ নম্বর বার্থে। নষ্ট হ…
হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশি জাহাজকে গ্রেফতার করলো
নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্য হলদিয়া বন্দরে নামিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল একটি বিদেশি জাহাজ। হাইকোর্টের নির্দেশে সেই জাহাজকে ‹গ্রেপ্তার› করে রাখা হল বন্দরের ডক এরিয়ার ৩ নম্বর বার্থে। নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্যের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ কোটি টাকা জমা দিলে তবেই ছাড় পাবে জাহাজটি। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার ফুটন বন্দর থেকে কলকাতার একটি সংস্থার জন্য আট হাজার মেট্রিক টন উডপাল্প নিয়ে এসেছিল এমভি পিএইচ জিয়াং মিন নামের ওই জাহাজটি। পানামার পতাকাবাহী জাহাজটি হলদিয়া বন্দরে এসেছিল গত ২৫ জুলাই সন্ধে নাগাদ। হলদিয়া বন্দরের ৯ নম্বর বার্থে ২৭ জুলাই মর্নিং শিফ্ট থেকে পণ্য খালাস শুরু হয়। প্রায় ৪৬ কোটি টাকার উড পাল্প নিয়ে এসেছিল বিদেশি জাহাজটি। ওই উড পাল্প নিউজ প্রিন্ট ও কাগজ তৈরির কাজে লাগে। তিন দিনে ওই পণ্য নামিয়ে জাহাজটির ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পণ্যের একাংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। জাহাজে থাকা পণ্যের মধ্যে ১ হাজার ৩১২ টন উড পাল্প নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। এর ভারতীয় টাকায় যার বাজার মূল্য ৮ কোটি ৪৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৮০ টাকা। ওই জাহাজে বন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিং এজেন্সির এক কর্মী বলেন, জাহাজের হ্যাচে রাখা উড পাল্পের একাংশ খুবই খারাপ ছিল। এক একটি উড পাল্পের ব্লক দু› টন ওজনের ছিল। ব্লকগুলি মোটা তার দিয়ে বাঁধা ছিল। কিন্তু নামানোর সময় ক্রেনের হুকে আটকাতে গিয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছিল। ফলে ধীরে ধীরে নামাতে ৩ দিনের জায়গায় ৬-৭ দিন লেগে গিয়েছে। এদিকে, পণ্য নষ্ট হওয়ার দায় পরিবহণ সংস্থা না জাহাজ কর্তৃপক্ষের এনিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে কলকাতার ওই পেপার সংস্থা জাহাজ সংস্থার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ না দিয়েই জাহাজটি ৫ আগস্ট সোমবার হলদিয়া বন্দর ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করছিল। সোমবার আদালত শুরুর আগেই যেহেতু জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যেত, তাই রবিবার রাতেই জরুরি ভিত্তিতে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের আবেদনের শুনানির সিদ্ধান্ত নেয়। ৪ আগস্ট রবিবার রাত ৯টায় বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে শুনানি শুরু হয়। জাহাজটির হলদিয়া বন্দর ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিতে আবেদন করেছিল কলকাতার ওই সংস্থা। আমদানিকারী সংস্থা আদালতে জানায়, জাহাজ বন্দর ছেড়ে চলে গেলে নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্যের ক্ষতিপূরণ আদায় কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। শুনানির পর হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাহাজটি হলদিয়া ছাড়তে পারবে না। আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে পেপার সংস্থাকে নষ্ট হওয়া পণ্যে দায় জাহাজ কর্তৃপক্ষের, এই বিষয়টিও প্রমাণ করতে হবে। পরবর্তী শুনানি হবে ১২ আগস্ট। হাইকোর্টের অর্ডার হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশের পর বন্দরে কার্যত ‹গ্রেপ্তার› করে রাখা হয়েছে জাহাজটিকে।
হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাস বলেন, একটি বিদেশি জাহাজের পণ্য নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। হাইকোর্টের অর্ডার এসেছে, জাহাজটিকে আটকে রাখার জন্য। ওই জাহাজটিকে অন্য বার্থে সরিয়ে রাখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে হলদিয়া বন্দরের একটি অয়েল জেটি ধাক্কা মেরে ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে একটি জাহাজ সংস্থার বিরুদ্ধে। ওই জাহাজটি হলদিয়া থেকে পালিয়ে গেলেও মাঝ সমুদ্রে তাকে আটক করা হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। সেই ক্ষতিপূরণের মামলা এখনও চলছে।
No comments