Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

২৪৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষাদলের কাঠের রথকে 'হেরিটেজ' ঘোষণার দাবি

২৪৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী  মহিষাদলের কাঠের রথকে 'হেরিটেজ' ঘোষণার দাবিমহিষাদলের প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কাঠের রথকে 'হেরিটেজ' ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষ ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষকরা। ১৮০৪ সাল নাগাদ ওই…

 





 ২৪৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী  মহিষাদলের কাঠের রথকে 'হেরিটেজ' ঘোষণার দাবি

মহিষাদলের প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কাঠের রথকে 'হেরিটেজ' ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষ ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষকরা। ১৮০৪ সাল নাগাদ ওই রথ শুরু করে মহিষাদল রাজ পরিবার। তবে মহিষাদলের রথের নির্মাণ ও চালু করার দিনক্ষণ নিয়ে ইতিহাস গবেষকদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে। কারও মতে, মহিষাদলের রানি জানকী দেবী ১৭৭৬ সালে প্রথম রথযাত্রার সূচনা করেন। তবে মহিষাদল রাজবাড়ির উপর প্রামাণ্য দু'টি বই ভগবতীচরণ প্রধানের 'মহিষাদল রাজবংশ' এবং কে সি আইচের 'মহিষাদল রাজ এস্টেট' বই দু'টি ১৮০৪ সালকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ওই বছর রানি জানকীর পোষ্য মতিলাল পাঁড়ে (উপাধ্যায়) রথ শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে। সমস্ত সরকারি দলিল, রাজবাড়ির নথির উপর ভিত্তি করে ওই বইগুলি লেখা হয়েছিল। যদিও রাজ পরিবার মতিলাল পাঁড়েকে স্বীকার করে না। রাজ পরিবারের দাবি, ওই রথে এখনও দু'শো বছরের পুরনো শাল, সেগুন কাঠের ৭০-৮০ শতাংশই অক্ষত রয়েছে। তিন চারবার সংস্কার হলেও এত বছর ধরে মূল কাঠামোর কোনও পরিবর্তন হয়নি। রথের চাকাও কাঠের এবং এক্সেলগুলি কাঠ দিয়েই তৈরি।

রাজ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তৎকালীন বার্মা থেকে জাহাজে করে আনা শাল ও সেগুন কাঠ দিয়ে ছ'হাজার সিক্কা খরচ করে রথ তৈরি হয়েছিল। রথের 'ধুরি' এবং 'মুথুন' দুশো বছর ধরে অক্ষত। এগুলিই ৫০ ফুট উঁচু ১৩ চূড়া রথের মূল কাঠামো। এই ধুরি'র সঙ্গে সাতটি কাঠের এক্সেলের মাধ্যমে রথের ৩৪টি কাঠের চাকা যুক্ত। প্রতিটি চাকা চার খণ্ড কাঠ দিয়ে তৈরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মহিষাদলের সুউচ্চ কাঠের রথ দু'শো বছর ধরে সচল ও অক্ষত রয়েছে, এটি সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার। তাঁদের পরামর্শ, অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে এই রথের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ভীষণ জরুরি। রোদজলের মধ্যে সারাবছর রথ পড়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী রথ সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। এজন্য ঐতিহ্যবাহী মহিষাদলের রথকে সরকারিভাবে হেরিটেজ ঘোষণা করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ অধ্যাপক ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক হরিপদ মাইতি বলেন, ভারতে এতবড় প্রাচীন কাঠের রথ সম্ভবত আর নেই। ইতিহাস, দেশীয় ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল এবং পর্যটন সব দিকে তাকিয়ে এই রথকে হেরিটেজ ঘোষণা করে সংরক্ষণ করা দরকার। সংস্কার করে হয়তো আরও ৫০বছর চালানো যেতে পারে।

কিন্তু এই সুবিশাল অনুপম সুন্দর কাঠামো কোনও কারণে একবার নষ্ট হলে আর গড়া সম্ভব নয়। এজন্য নতুন কোনও ভাবনা প্রয়োজন। রথকে হেরিটেজ ঘোষণার জন্য বছর পাঁচেক আগেই জেলা প্রশাসনকে হেরিটেজ উপদেষ্টা কমিটির পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তীও রথকেহেরিটেজ ঘোষণার ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি বলেন, গত ৭-৮ বছরে দু'দফায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচে রথ সংস্কার হয়েছে। কাঠামো সংস্কার, রং করা এবং শিল্পীদের মাধ্যমে নতুন করে চিত্রায়িত করা হয়েছে। আগামী বিধানসভায় পর্যটন স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে হেরিটেজ করার দাবি রাখব। জানা যায়, প্রথমে ওই রথ ছিল ১৭ চূড়ার। পরে ১৮৬০ সালে রাজা লছমন প্রসাদ গর্গের ফরাসী বন্ধু মসিয়ে পেরু রথ দেখতে এসে রথ সংস্কারের একটি নকসা করেন। ওই রথের খিলানের উপর চারটি চূড়া বাদ দিয়ে ১৩ চূড়ার নকসা করেনএবং নতুনভাবে নির্মিত হয় রথ। সেই ১৩ চূড়ার রথই চলছে আজও। দেশীয় মিস্ত্রিদের সঙ্গে চিনা মিস্ত্রিরাও রথ তৈরির কাজ করেছিল সেদিন। ১৯৩২ সালে রথের মেলায় পিকেটিং ঘিরে স্বদেশীদের তীব্র অত্যাচার করে বৃটিশ পুলিস। তার প্রতিবাদে সেবার ২০০ হাত রথ টানার পর মানুষ রথ টানা বন্ধ করে দেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী নীলমণি হাজরার ডায়েরিতে সেকথা লেখাআছে। অধ্যাপক হরিপদ মাইতির গবেষণাগ্রন্থ 'মহিষাদল রাজপরিবার' রথের ইতিহাস নিয়ে বহু অজানা তথ্যের সন্ধান দেয়। মহিষাদলের রথ জগন্নাথদেবের রথ নয়। ওই রথে প্রথম ওঠেন রাজবাড়ির কুলদেবতা মদনগোপাল জিউ, এরপর শালগ্রাম শিলা শ্রীধরজিউ এবং শেষে ওঠেন জগন্নাথ জিউ। রাজবাড়ির রথে জগন্নাথদেবের ভোগকে কেন্দ্র করে 'মেলান ভাত', 'রাধার মানভঞ্জন' এর মতো নানা মজার প্রথা চালু রয়েছে। মহিষাদলের দু'শো বছরের পুরনো কাঠের রথ।

No comments