পথ দুর্ঘটনার হাত থেকে শ্রমিকদের বাঁচাতে সাইকেল ট্র্যাক শিল্প তালুক হলদিয়াতে!সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি অষ্টম বর্ষে পদার্পণ করেছে। এবং আগামী বছরেও পথ নিরাপত্তার ভাবনা ভেবেই এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ম…
পথ দুর্ঘটনার হাত থেকে শ্রমিকদের বাঁচাতে সাইকেল ট্র্যাক শিল্প তালুক হলদিয়াতে!
সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি অষ্টম বর্ষে পদার্পণ করেছে। এবং আগামী বছরেও পথ নিরাপত্তার ভাবনা ভেবেই এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেই কর্মসূচি হিসেবে সারা জলা জুড়ে চলছে সেভ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি এবং পথ নিরাপত্তা যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা।
বন্দর শহরে দুর্ঘটনা কমাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোডের পাশে শ্রমিকদের জন্য সাইকেল ট্র্যাক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে হলদিয়া পুর কর্তৃপক্ষ। হায়দরাবাদে সাইক্লিং ট্র্যাক ‘হেল্থওয়ে’র ধাঁচে হলদিয়ার এইচপিএল লিঙ্ক রোডের পাশে ওই সাইকেল ট্র্যাকের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটি রুফ টপ সোলার সাইকেল ট্র্যাক হিসেবে গড়তে চায় পুরসভা। নিরাপদে যাত্রা নিশ্চিত করতে ট্র্যাকে অ্যাক্সেস পয়েন্টগুলিতে সিসি ক্যামেরার নজরদারি থাকবে। পাশাপাশি থাকবে সাইকেল আরোহীদের জন্য স্ন্যাক্সের দোকান, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, বিশ্রামাগার, সাইকেল মেরামত কেন্দ্র। সিটিসেন্টার থেকে দুর্গাচকের ক্ষুদিরাম স্কোয়ার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের ওই সাইকেল ট্র্যাক তৈরি করা হবে। রাস্তার বাম পাশে তিন লেনের সাইকেল ট্র্যাক তৈরির জন্য জায়গা দেবে হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(এইচডিএ)। এজন্য এইচডিএর সঙ্গে বৈঠকে বসছে পুর কর্তৃপক্ষ। কয়েকমাস আগে হলদিয়ায় সাইকেল ট্র্যাক গড়ার জন্য নাগরিকদের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব আসে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। নির্বাচনের কারণে এবিষয়ে আলোচনা থমকে ছিল। ভোট মিটতেই পুর প্রশাসক ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে মিটিং করে সাইকেল ট্র্যাকের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছেন।
শ্রমিক সংগঠনগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মচারী সাইকেলে যাতায়াত করেন। বন্দর, আইওসি রিফাইনারি, পেট্রকেম, এক্সাইড, বিভিন্ন ভোজ্যতেলের কারখানা সহ ৪০-৫০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৭০ শতাংশ শ্রমিকই সাইকেলে যাতায়াত করেন। বাকি ২৫ শতাংশ শ্রমিক মোটরবাইকে এবং ৫ শতাংশ বাসে যাতায়াত করেন। কোভিডের সময় থেকে বাইকে যাতায়াত অনেকটা বেড়েছে। তবে, ৮-১০ কিলোমিটার দূরের শ্রমিকরা নিয়মিত সাইকেলেই যাতায়াত করেন। হলদিয়ায় আলাদা কোনও সাইকেল রুট নেই। ফলে দিনে রাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোড দিয়েই সাইকেল বা বাইকে চেপে শ্রমিকদের যাতায়াত করতে হয়। পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা বা ট্রাফিক আইন না মেনে চলার ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, হলদিয়ায় মূলত পথ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কারখানার শ্রমিক কর্মচারীরাই। দিনের চেয়ে রাতেই বেশি দুর্ঘটনায় পড়েন শ্রমিকরা। সারাদিন কাজ করার পর শরীর অবসন্ন থাকার কারণে দুর্ঘটনায় পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
হলদিয়ার মহকুমা শাসক তথা পুর প্রশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, শিল্পশহরে সাইকেল ট্র্যাক থাকা খুবই জরুরি। ট্র্যাক নির্মাণে খরচ করবে পুরসভাই। এবিষয়ে এইচডিএ’র সঙ্গে চলতি সপ্তাহেই বসছে পুরসভা। মিটিংয়ের পর এইচডিএ ও পুরসভা এইচপিএল লিঙ্ক রোডের পাশে যৌথভাবে জমি দেখতে যাবে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিল্প সংস্থাগুলি প্রতিবছর বড় অঙ্কের হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়। ফলে তাদের শ্রমিকদের প্রতি পুরসভার দায়বদ্ধতা থাকে। হোল্ডিং ট্যাক্সের অর্থে পুরসভা এবার শিল্পের জন্যও পরিকাঠামো গড়তে চায়। চলতি আর্থিক বছরে প্রথম চার মাসেই পুরসভা ৮৫ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে। সাইকেল ট্র্যাক গড়ার ক্ষেত্রে সেই অর্থ কাজে লাগাতে চায় পুরসভা। প্রথমে এইচপিএল লিঙ্ক রোড বেছে নেওয়ার কারণ শিল্পাঞ্চলের বড় অংশের শ্রমিকরা সাইকেল নিয়ে এপথে বাড়ি ফেরেন। তবে ওই রাস্তায় গত কয়েক বছরে ১০-১২ জন শ্রমিক সাইকেল ও বাইক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন।
No comments