তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ তছরুপের অভিযোগহলদিয়ার সুতাহাটা ব্লকের হোড়খালি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ১০ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। তছরুপ ও দুর্নীতির ঘটনা…
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ তছরুপের অভিযোগ
হলদিয়ার সুতাহাটা ব্লকের হোড়খালি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ১০ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। তছরুপ ও দুর্নীতির ঘটনায় আঙুল উঠেছে হোড়খালির তৃণমূল প্রধান অঞ্জুমা বিবির দিকে। ওই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে সুতাহাটায়। অভিযোগ, পঞ্চায়েতের সাধারণ সভা না ডেকে প্রধান একক ভাবে সিদ্ধান্ত নেন। অস্তিত্বহীন এজেন্সির মাধ্যমে উন্নয়নের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রধানের বকলমে তাঁর স্বামীই মূলত পঞ্চায়েতে ছড়ি ঘোরান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আত্মীয়স্বজনকে লক্ষ লক্ষ টাকার কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। বিরোধীদের পাশাপাশি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশও প্রধানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। টেন্ডার প্রক্রিয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরে প্রধানের সঙ্গে তাঁদের মতবিরোধও প্রকাশ্যে এসেছে। এবার বিরোধী ৮ বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য ও শতাধিক গ্রামবাসী মহকুমা শাসক ও জেলাশাসকের কাছে প্রধান ও তৃণমূলের বোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত দাবি করে চিঠি দিয়েছেন। বিডিও দেবলীনা দাস বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। হোড়খালির প্রধান আঞ্জুমা বিবি বলেন, বিজেপির অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। বিডিওকে এ বিষয়ে তথ্য পাঠিয়েছি। আমার স্বামী সহযোগিতা করেন ঠিকই, কিন্তু অফিসের কাজে নাক গলান না।
হোড়খালির বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যরা যে প্রকল্পগুলিতে অর্থ তছরুপ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলির এজেন্সির নাম, অ্যাক্টিভিটি কোড, ভাউচার নম্বর সহ যাবতীয় তথ্য উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে। ওই অভিযোগের নিশানায় রয়েছে এমএম এন্টারপ্রাইজ, তামান্না এন্টারপ্রাইজ, তৃষা ইনফো সার্ভিসেসের মতো একাধিক এজেন্সির নাম। অভিযোগ, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২৯ জানুয়ারি ইলেকট্রিক ইন্সট্রুমেন্ট মেন্টেনান্সের নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে ৫০ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। হোড়খালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সভায় এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কোনও কাজ না করেই ওই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে। ২৯ ফেব্রুয়ারি ওই একই এজেন্সির মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কস্ট দেখিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১২ জুন ওই একই এজেন্সির মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের ইলেকট্রিফিকেশনের নাম করে ৫১ হাজার ৫২০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এছাড়া টিউবওয়েল মেন্টেনান্সের নাম করে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। কম্পিউটার মেন্টেনান্স ও কমিউনিটি অ্যাসেটের নাম করে অন্য একটি এজেন্সির মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ১৭০ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে।
পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা বিজেপির অসিতকুমার দাসের অভিযোগ, হোড়খালির প্রধান আঞ্জুমা বিবি ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের সরকারি ওন ফান্ডের টাকা তছরুপ করেছেন। ওন ফান্ডের কাজের খতিয়ান জানাতে চাননি। প্রধানকে পরিচালনা করেন তাঁর স্বামী। তিনি প্রধানের পাশের আসনে বসে নির্দেশ দেন বলে দাবি বিরোধী নেতার। তিনি বলেন, স্বচ্ছ ভারত মিশনের ফান্ডের টাকাও তছরুপ করেছে তৃণমূল বোর্ড। ওই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ নিয়ে গত মার্চ মাসে বিডিওকে অভিযোগের পরও তার সুরাহা হয়নি। কৃষি সরঞ্জাম ও সামগ্রী বিলিতেও চূড়ান্ত স্বজনপোষণ চলছে পঞ্চায়েতে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ মহাপ্রসাদ দাসও প্রধানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, গত এক বছরে তৃণমূল বোর্ডের প্রধান সহ কয়েকজনের কাজকর্মের প্রভাব পড়েছে লোকসভা ভোটে। লোকসভা ভোটে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি ১৩৮০ ভোটের লিড পেয়েছে।
No comments