Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তারকেশ্বরের শিবলিঙ্গ

তারকেশ্বরের শিবলিঙ্গ
ইতিহাস বলে রাজা ভরমল্ল তারকেশ্বরের কাছে জঙ্গলে একটি শিবলিঙ্গের স্বপ্নে দেখেন। এরপর তিনি এই স্বয়ম্ভু লিঙ্গটি খুঁজে বের করেন, মন্দির  প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কিছু মানুষের ধারনা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বিষ্ণুদাস ন…

 




তারকেশ্বরের শিবলিঙ্গ


ইতিহাস বলে রাজা ভরমল্ল তারকেশ্বরের কাছে জঙ্গলে একটি শিবলিঙ্গের স্বপ্নে দেখেন। এরপর তিনি এই স্বয়ম্ভু লিঙ্গটি খুঁজে বের করেন, মন্দির  প্রতিষ্ঠা করেন। 

কিন্তু কিছু মানুষের ধারনা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বিষ্ণুদাস নামের এক শিবভক্ত ,তারকেশ্বরে বাবা তারকনাথের মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা । খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে, জৌনপুরের ডোভি পরগণার গোমতী নদীর তীরস্থ হরিপুরের রাজা বিষ্ণুদাসের সাথে কাশীর রাজা বলবন্ত সিংহের সংঘর্ষ হলে, প্রায় ৫০০ অনুচর-সহ বিষ্ণুদাস হুগলি অঞ্চলে চলে আসেন এবং হুগলির জঙ্গলাকীর্ণ হরিপালের রামনগরে বসতি স্থাপন করেন। এই সময় বাংলার নবাব মুর্শিদকুলী খানের অনুমতি নিয়ে তিনি জমিদারির পত্তন করেন। মুর্শিদকুলী খান তাঁর জমিদারী জন্য প্রাথমিকভাবে পাঁচশত বিঘা জমি দান করেছিলেন। আসলে রাজা বিষ্ণুদাসের ভাই ভারমল্লা এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন। অযোধ্যা প্রদেশের অন্তর্গত জেলা জৌনপুরের ডোভী পরগণার তারকেশ্বরের কাছে রামনগর গ্রামে তিনি কয়েকজন ব্রাহ্মণের সঙ্গে এসে বসবাস করছিলেন। 

যাইহোক ১৭২৯ সালে মন্দিরটির সংস্কার করেন মল্ল রাজারা বলার কারণ।লোককথা অনুযায়ী  বিষ্ণুদাসের ভাই দেখেছিলেন স্থানীয় একটি জঙ্গলে একটি কালো পাথরের ওপর গরুরা নিয়মিত দুধ দিয়ে আসে। এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখার পরেই তিনি তার দাদা বিষ্ণুদাসকে জানান পুরো ব্যাপারটা। তবে বিষ্ণুদাসও  স্বপ্নাদেশ পেয়ে ওই পাথরটিকে শিবজ্ঞানে পুজো করা শুরু করেন ।যদিও   তিনি এই লিঙ্গটি উত্তর প্রদেশে বা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সব চেষ্টা ব্যার্থ হয়। কারণ সাধারণ ধারণা অনুযায়ী বাংলায় গঙ্গা সমভূমিতে এই রকম পাথর থাকা সম্ভব নয়। তাই এটি নিজে থেকে পাতাল থেকে উঠে এসেছে ধরে নেওয়া হয়।

সেই থেকে গড়ে ওঠে শিব মন্দির। শিবের তারকেশ্বর রূপ অনুসারে এই মন্দিরের এবং এই অঞ্চলের  নাম হয় তারকেশ্বর। ১৭২৯ সালে মন্দিরটিকে মল্ল রাজারা নতুন করে সংস্কার করেন।বাবা তারাকনাথের বর্তমান আটচালা মন্দিরটি মল্লরাজাদেরই তৈরি বলে ধরে নেওয়া হয়।

কিন্তু সুধীর মিত্র তাঁর 'হুগলী জেলার ইতিহাস' (১৯৪৮, পৃষ্ঠা ৮১৪) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে,"১৭৭৯-১৭৮১ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত বঙ্গদেশের মানচিত্রে তারকেশ্বরের অস্তিত্ব নাই। তবে ১৮৩০-১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে বাঙ্গালা সরকার বঙ্গদেশের যে জরীপ করাইয়াছিলেন, তাহাতে 'তারেশ্বরী' নামক একটি স্থানের উল্লেখ আছে দেখিতে পাওয়া যায়।" লোক কথা অনুযায়ী যাই বলা হোক এই মন্দিরটি প্রাচীনত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে আদি মন্দিরটি ভেঙে গেলে বর্ধমানের রাজা এর সংস্কার করেন। পরে পাতুল-সন্ধিপুর অঞ্চলের গোবর্ধন রক্ষিত এর পুনরায় সংস্কার করেন। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে (১২০৮ বঙ্গাব্দ) বালিগড়ের রাজা চিন্তামণি দে এই মন্দিরে প্রার্থনা করে আরোগ্য লাভ করার পর, মন্দিরের সামনে নাটমন্দির তৈরি করে দেন।সে সময়ে এই মন্দিরে যাওয়ার জন্য তখন একমাত্র হাঁটা পথ ছিল। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে (১২৯২ বঙ্গাব্দ) নীলকমল মিত্রের উদ্যোগে শেওড়াফুলি থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মিত হয়।

কিন্তু তারকেশ্বর মন্দির নিয়ে নানা কিংবদন্তি থাকলেও এই মন্দিরটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেকখানি।স্বামী সচ্চিদানন্দ। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু , শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং চিত্তরঞ্জন দাশ সকালেই  তারকেশ্বরের গিয়েছিলেন ।১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুন (মঙ্গলবার ২৭শে জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ) থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, আনুষ্ঠানিকভাবে তারেকেশ্বর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।

তবে এই শিব লিঙ্গ এখানে হঠাৎ করে কিভাবে এলো এ নিয়েও একটি কাহিনী আছে।ধরিত্রী মায়ের গর্ভে থাকাকালীন,শিশু ভোলানাথ এর ইচ্ছা হয়েছিল , পৃথিবীর স্বরূপ দর্শন করার, তাই তিনি ধরিত্রীর গর্ভ থেকে উঁকি দিয়েছিলেন। তখন তিনি  দেখেছিলেন দুঃখে জর্জরিত বিশ্ববাসীকে। এতে তিনি  শোকে পাথর হয়ে গেলেন। সেই সময় থেকেই তিনি তারকেশ্বরে ঐ পাথর রূপে অবস্থান করছেন। 

বাবার মূল মন্দিরের বাঁ দিকে রয়েছে একটি পুকুর। এই পুকুরকে সকলে দুধপুকুর বলে চেনে। সেই দুধপুকুরকে নিয়েও প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা ও বিশ্বাস। এখনও হাজার হাজার মহিলা সন্তান কামনায় বা সন্তানের মঙ্গল কামনায় তারকেশ্বর মন্দিরে ছুটে আসেন। মনস্কামনার জন্য মন্দিরের বিভিন্ন দিকে মানুষ ঢিল বেঁধে আসেন। মন্দির লাগোয়া একটি কালী মন্দিরও রয়েছে।


No comments