দুর্নীতি করলেই পরিণতি গ্রেপ্তার
দুষ্টু গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’—এই প্রবাদই মননে গেঁথে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটে বিপুল সাফল্য পরবর্তী পর্বে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। দুর্নীতি এবং দুর্নীতিগ্রস্…
দুর্নীতি করলেই পরিণতি গ্রেপ্তার
দুষ্টু গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’—এই প্রবাদই মননে গেঁথে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটে বিপুল সাফল্য পরবর্তী পর্বে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। দুর্নীতি এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে সেই অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ‘ব্রত’ ২১ জুলাইয়ের শহিদ তর্পণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর তাতে যোগ্য সঙ্গত দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিলেন, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে নিজের এলাকায় হেরে যাওয়া এবং গা এলিয়ে থাকা জনপ্রতিনিধিদের এতটুকু রেয়াত করবে না দল।
এদিন মমতার সতর্কবার্তা—‘আমি চাই, সামাজিক বন্ধু হবে তৃণমূল। বিত্তবান নয়, বিবেকবান চাই। এমএলএ, এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, কাউন্সিলার, পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্য, টাউন এবং ব্লকের সভাপতি—কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নেব। কোনও অভিযোগ যেন না আসে!’ এহেন নিদানের সঙ্গেই মমতার হুঙ্কার—‘দুর্নীতি করলেই পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে। গ্রেপ্তার করাতেও পিছপা হব না। আপনারা দেখেছেন, অন্যায় করলে আমি ব্যবস্থা নিই। কাউকে রেয়াত করি না।’ এই পর্বেই তাঁর হুঁশিয়ারি—‘জানবেন, যত জিতব, ততই নম্র হতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছেন। মানুষকে পরিষেবা দেওয়া সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। যাঁরা নির্বাচিত হয়েও মানুষকে সেবা দেবেন না, তাঁদের দল অনুমোদন দেবে না।’
অগ্নিকন্যার একের পর এক তোপ দাগাকে কখনও সম্মিলিত হর্ষধ্বনি, আবার কখনও করতালিতে স্বাগত জানিয়েছে ধর্মতলার কালো মাথার ভিড়। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ—খেটে খাওয়া, সাধারণ মানুষের সেই জমাট ভিড় এদিন বারবার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে প্রকৃতিকে। শ্রাবণের বারিধারা হাজার চেষ্টা করেও ভেজাতে পারেনি সমাবেশস্থল ঘিরে থাকা রাজপথকে। দুর্নীতি আর দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সায়কে ‘হাতিয়ার’ করেছেন মমতাও। তাই যখনই লাখো ভিড়ের জমায়েতকে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন—‘দুর্নীতি রুখবেন তো? যারা কাজ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে লড়বেন তো?’ সমুদ্রগর্জনে জবাব ফিরে এসেছে—‘রুখব দিদি, লড়ব দিদি’। নাগাড়ে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজেই বক্তৃতা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেছেন, ‘বৃষ্টি থেমে যাবে। দলের যে কর্মী-সমর্থকরা বন্দুক-গুলিকে ভয় পায় না, তারা বৃষ্টিকে ভয় পাবে কেন! জানবেন, বৃষ্টি ক্লান্তি-গ্লানি ধুয়ে দিলেও, এমন কিছু নোংরা-ময়লা আছে, যা লাগলে গা থেকে মোছা যাবে না।’
সভার অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন ৪৫ দিনের ‘সাময়িক বিরতি’র পর সদর্পে ফিরে আসা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন ছিলেন এই বিরতিতে? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাতে ‘কম্পন’ও শুরু হয়েছে জোড়াফুল শিবিরের একাংশের মধ্যে। অভিষেক বলেছেন, ‘এই দেড়মাস ধরে দল পর্যালোচনা করেছি। পঞ্চায়েত, পুরসভার দায়িত্বে এমন লোকজন রয়েছেন, তাঁরা নিজেরা জিতলেও, বিধানসভা-লোকসভায় দলের ফল খারাপ হয়েছে।’ অভিষেকের হুঁশিয়ারি—‘নিজের ভোটটা করব, অন্য ভোটগুলো দল এসে করে দেবে, এমনটা হবে না। এঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। পঞ্চায়েত, পুরসভার যে জনপ্রতিনিধিই হোন না কেন, মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব পালন না করলে এবং দলকে গুরুত্ব না দিলে ফল ভুগতেই হবে। অপেক্ষা করুন, তিন মাসের মধ্যে দেখতে পেয়ে যাবেন।’
No comments