Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বেঁচে থাকার জন্যে একটিমাত্র বছর - অ্যান্টনি বার্গেসের অনুপ্রেরণামূলক গল্প- আশিস কুমার পন্ডা

বেঁচে থাকার জন্যে একটিমাত্র বছর - অ্যান্টনি বার্গেসের অনুপ্রেরণামূলক গল্প- আশিস কুমার পন্ডা

জন অ্যান্টনি বার্গেস উইলসন ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এবং অন্যতম প্রতিভাবান এক সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তেত্রিশটি উপন্যাস, পঁচিশটি …

 




বেঁচে থাকার জন্যে একটিমাত্র বছর - অ্যান্টনি বার্গেসের অনুপ্রেরণামূলক গল্প- আশিস কুমার পন্ডা


 


জন অ্যান্টনি বার্গেস উইলসন ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এবং অন্যতম প্রতিভাবান এক সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তেত্রিশটি উপন্যাস, পঁচিশটি তথ্য ভিত্তিক রচনা, দুই খন্ডের আত্মজীবনীর, পাশাপাশি হাজার হাজার প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং পর্যালোচনা রচনা করেছিলেন। তাঁর সঙ্গীতের কৃতিত্বও ছিল অসাধারণ; তিনটি সিম্ফনি এবং আড়াইশোরও বেশি অন্যান্য সঙ্গীত তিনি রচনা করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি সমালোচক, পিয়ানোবাদক, সাংবাদিক, সম্প্রচারক, শিক্ষাবিদ, অনুবাদক এবং তেরটি ভাষায় ভাষাবিদ হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন। একজন সমালোচক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও, বার্গেস তার  সাহিত্যিক জীবন শুরু করেছিলেন অনেক দেরীতে। চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত, তার একটি মাত্র উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল এবং দুটি উপন্যাস প্রকাশকদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

১৯১৭ সালে, বার্গেস জন্মেছিলেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের শহরতলির এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে। ম্যানচেস্টারের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে  সঙ্গীত বিভাগে সুযোগ না পেয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের বেশিরভাগ সময়ে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর শিক্ষা বিভাগে কাজ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, এক দশক ধরে তিনি প্রায় তার নিজের দেশের এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং তারপর মালয় (বর্তমানে মালয়েশিয়া) চলে যান, যেখানে তিনি শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব নেন।  

বার্গেসের জীবনের এই অংশটি ১৯৫৯ সালের শেষের দিকের এক সকালে হঠাৎ করেই থমকে যায়, বার্গেস হঠাৎ করে ব্রুনেইতে তার ছাত্রদের পড়ানোর সময় অচৈতন্য হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।  ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পরিষেবা থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনি চিকিত্সার জন্য ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। চল্লিশ বছর বয়সী বার্গেসের মাথায় ধরা পড়ে এক টিউমার, যা অপারেশন করে বাদ দেওয়ার কোন উপায় ছিল না। ডাক্তাররা ভবিষ্যতবাণী করেন, বার্গেসের আয়ু, খুব বেশী হলে, আর মাত্র এক বছর। সেই সময়ে, তার ব্যাংকে এক পাউন্ডও জমা ছিল না, চাকরি করার মত শারীরিক অবস্থা বা সম্ভাবনা, কিছুই ছিল না । এদিকে মাথার উপর ঝুলছিল এক মানহানির মামলা, আর অদূর ভবিষ্যতে তার বিধবা স্ত্রী লিনের ভরণপোশনের চিন্তা। তিনি তার জীবনের শেষ কয়েকটা মাস এবং দিন গুনতে শুরু করলেন। তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “সময়টা ছিল ১৯৬০ সালের জানুয়ারি এবং রোগ নির্ণয় অনুসারে, আমার সামনে ছিল একটি শীত, একটি বসন্ত এবং একটি গ্রীষ্ম। সেই বছর, পাতা ঝরা শুরু হওয়ার সময়, আমারও বিদায় নেওয়ার কথা ছিল।” বার্গেস অতীতে কখনও পেশাদার ঔপন্যাসিকদের মতো লেখেননি; তবে তিনি সচেতন ছিলেন যে তার মধ্যে লেখক হওয়ার প্রতিভা রয়েছে। তাই, তার স্ত্রীর জন্য অন্তত কপিরাইটের কয়েকটি পাউন্ড রেখে যাওয়ার জন্যে, তিনি টাইপরাইটারে এক টুকরো কাগজ চড়িয়ে দিয়ে উপন্যাস লিখতে শুরু করলেন। তিনি কী লিখবেন বা তাঁর লেখা প্রকাশিত হবে কিনা- তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু তিনি এ ছাড়া অন্য কিছু করার কথা ভাবতে পারলেন না। ঝড়ের গতিতে এবং তাড়াহুড়ো করে, বছর শেষ হওয়ার আগে, বার্গেস সাড়ে পাঁচটি উপন্যাস লিখে ফেললেন। তাঁর সমসাময়িক ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, এডওয়ার্ড মরগ্যান ফরস্টার, সারাজীবনে প্রায় এতগুলি উপন্যাস লিখতে পেরেছিলেন এবং আমেরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন, জে ডি স্যালিঞ্জার তার সমগ্র জীবনে এর অর্ধেকই লিখতে পেরেছিলেন।

যাইহোক, বার্গেস বেঁচে থাকার জন্য মাত্র এক বছর সময় পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু তিনি মারা যাননি। অলৌকিকভাবে তার ক্যান্সার প্রথমে পিছু হটতে থাকে এবং একসময়ে একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার টাইপরাইটার কিন্তু থামলো না, তিনি একই গতিতে উপন্যাস লিখে চললেন। 'অ্যান্টনি বার্গেস', ‘জোসেফ কেল’ এবং ‘জন বার্গেস উইলসন’; এই তিন ছদ্মনামে তাঁর বর্ণাঢ্য লেখকজীবন আরও সাড়ে তিন দশক ধরে চলেছিল। ১৯৯৩ সালে ৭৬ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যান্সারে তাঁর মৃত্যু হয়। তার সর্বাধিক পরিচিত উপন্যাস হলো 'এ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ' যা ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং পরে এক অত্যন্ত বিতর্কিত চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছিল।

বার্গেস হয়তো এতোগুলি উপন্যাস লিখতেন না, যদি না তার জন্যে ক্যান্সারের  মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হোত।

আমাদের অধিকাংশই অ্যান্টনি বার্গেসের মতো; দৈনন্দিন জীবনের গোলকধাঁধায় আমরা এতটাই আটকা পড়ে যাই যে, গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিই আমাদের চোখের আড়ালে চলে যায়। ‘আজ নয় কাল’, ‘এখন নয় তখন’, বলে আমরা অনেক কাজ ভবিষ্যতের জন্যে জমিয়ে রাখি। এই মানসিকতা আশাবাদী হলেও, এক বাস্তবতাকে অস্বীকার করে যে 'আগামীকাল কখনও নিশ্চিত নয়'। এ কোন হতাশার বার্তা নয়, আমাদের জীবনের অনিশ্চয়তাকে আর একবার মনে করিয়ে দেওয়া। আমরা যতই পরিকল্পনা করি বা ভবিষ্যদ্বাণী করি না কেন, ভবিষ্যত সত্যিই আমাদের নাগালের বাইরে। অতীত কেবলমাত্র স্মৃতির জন্য, আগামীকাল স্বপ্নের জন্য, কিন্তু আজকের দিনটি আপনার জন্যে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার। এক উন্মুক্ত হৃদয় এবং জরুরী বোধের সঙ্গে জীবনের ছোট-বড় প্রতিটি সুযোগকে উপহার হিসাবে আলিঙ্গন করে আজকের দিনটিতে  সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন।

সবশেষে বলি, আপনার সময়কে সন্মান জানান এবং আগামীকালের জন্যে কাজ মুলতুবী রাখা বন্ধ করুন। আগামীকাল আপনার জীবনে নাও আসতে পারে, কারণ আপনি জানেন না পরের মুহূর্ত, বা আপনার পরবর্তী নিঃশ্বাস কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে। আগামীকাল যদিও বা আসে, সুযোগ আপনার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবে না। জীবনের বাস্তবতা কেবল ‘বর্তমান মুহূর্ত’। বর্তমানের মধ্যে গভীরভাবে বাঁচুন, সত্যিকার অর্থে কী গুরুত্বপূর্ণ তা ফোকাস করুন এবং আপনার স্বপ্ন এবং লক্ষ্যপূরণের জন্য লড়াই করুন। পৃথিবীতে আপনার সময় সীমিত। সেই সময়কে এমন কিছুতে বিনিয়োগ করুন যা আপনাকে অমর করে রাখবে।

No comments