Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

দশম আপেল: আশিস কুমার পন্ডা

দশম আপেল: আশিস কুমার পন্ডা
একবার এক শিকারি হরিণের পিছনে ছুটতে ছুটতে জঙ্গলের গভীরে পথ হারিয়ে ফেললেন। তার সমস্ত দিক নির্ণয়ের দক্ষতা কাজে লাগিয়েও তিনি তিনি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোন উপায় খুঁজে পেলেন না। এইভাবে তিন দিন তিন রাত কে…

 





দশম আপেল: আশিস কুমার পন্ডা


একবার এক শিকারি হরিণের পিছনে ছুটতে ছুটতে জঙ্গলের গভীরে পথ হারিয়ে ফেললেন। তার সমস্ত দিক নির্ণয়ের দক্ষতা কাজে লাগিয়েও তিনি তিনি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোন উপায় খুঁজে পেলেন না। এইভাবে তিন দিন তিন রাত কেটে গেল, খাওয়ার মতোও তিনি কিছু খুঁজে পেলেন না। ক্ষুধা তৃষ্ণায় প্রাণ একেবারে ওষ্ঠাগত। সব আশা যখন তিনি হারিয়ে ফেলেছেন, ঠিক তখনই তার চোখে পড়ল একটি আপেল গাছ। আর তাতে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল রঙের অজস্র আপেল। শিকারী তার ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। গোটা দশেক আপেল গাছ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে এক গাছের ছায়ায় বসে তিনি ফল খাওয়া শুরু করলেন। প্রথম আপেলটিতে কামড় দিতেই তার মনে হলো, এমন সুস্বাদু খাবার তিনি জীবনে কখনও খান নি। তার আনন্দের সীমা রইলো না এবং নিজেকে তিনি সৌভাগ্যশালী মনে করলেন, তার মন কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠলো। তিনি জীবনকে ধন্যবাদ জানালেন, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। প্রথম আপেলটিকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে, দ্রুত দ্বিতীয় আপেল এবং তারপর তৃতীয় আপেলটি খেয়ে ফেললেন। যে কোন কারণেই হোক, প্রতিটি আপেল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, তার আনন্দ কমতে শুরু করলো এবং তার  কৃতজ্ঞতা বোধও কমতে শুরু করলো। প্রথম কয়েকটি আপেল খেয়ে নেওয়ার পরে, বাকি আপেলগুলোতে দুটি বা তিনটি কামড় দিয়ে তিনি সেগুলিকে ফেলে দিতে শুরু করলেন। তিনি তৃপ্ত হতে শুরু করেছিলেন এবং পরের আপেলগুলিকে আর প্রথম কয়েকটির মতো সুস্বাদু মনে হচ্ছিল না। তিনি যখন দশম আপেল খেতে শুরু করলেন, তখন তিনি বিরক্ত বোধ করলেন এবং অভিযোগ করতে লাগলেন। তিনি উঠে দাঁড়ালেন, আধ-খাওয়া আপেলটি দূরে ছুঁড়ে দিয়ে হারিয়ে যাওয়া হরিণের সন্ধানে পা বাড়ালেন।


কিন্তু কেন এমমনটা হলো? দশম আপেলের সঙ্গে কি সমস্যা ছিল?


গভীর জঙ্গলে, ক্ষুধার্ত এবং অনাহারে থাকা একজন ব্যক্তির কাছে দশ-দশটি আপেলের উপহার এক লটারী পাওয়ার মতো সৌভাগের কথা। এই গল্পে, শিকারী তার প্রথম আপেল থেকে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি বা "উপযোগিতা" আহরণ করেছিলেন। পরের আপেলগুলি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ক্ষুধা নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ, তার তৃপ্তির মাত্রা কমে যায়। দশম আপেলে কামড় দেওয়ার সময় তার একেবারেই ক্ষুধা ছিল না। দশম আপেল, শিকারীর কাছে তার সমস্ত 'মূল্য' বা 'উপযোগিতা' হারিয়ে ফেলেছিল। দশম আপেল বিস্বাদ ছিল না, বা তার ক্ষুধা মেটানো ক্ষমতার অভাব ছিল না তবে একমাত্র অভাব ছিল জঙ্গলের মাঝখানে খাবার খুঁজে পাওয়ার জন্য শিকারীর কৃতজ্ঞতা। সহজ কথায়, আমরা জীবনে যা পাই, সেগুলিকে আমাদের প্রাপ্য বলে ধরে নিই। মনস্তাত্বিকরা এর নাম দিয়েছেন দশম আপেলের প্রভাব (10th apple effect)। বাস্তবে শিকারী আমাদের প্রতীক এবং আপেল সেই জিনিসগুলির প্রতীক যা জীবন আমাদের উপহার দেয়। আমরা যত বেশি পরিমাণে জীবনের উপহারগুলি পেতে থাকি, আমাদের সেই উপহারগুলি পাওয়ার আনন্দ কমতে থাকে।


এই বিশ্ব দুহাত উজাড় করে আমাদের সবকিছু দিয়েছে। মানুষ হিসাবে, আমাদেরকে যে সব উপহার দেওয়া হয়েছে, সেগুলি অন্য যে কোনও জীবের চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি এবং গুণগতভাবে শ্রেষ্ঠ; যেমন আমাদের শক্তি, বৃদ্ধির জন্য প্রেরণা, উদারতা, ভালবাসা, আবেগ, সম্পর্ক, ক্ষমা, যুক্তিতর্কের শক্তি, বাছাই করার ক্ষমতা এবং আমাদের জীবনকে গভীরভাবে পরিবর্তন করার ক্ষমতা। বিনামূল্যে পাওয়া এই উপহারগুলিকে মঞ্জুর করে নেওয়া (take for granted) খুব সহজ, কিন্তু আমাদের কাছে যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা খুব কঠিন। আমরা অল্প সময়ের জন্য উপহারগুলির প্রশংসা করি, কিন্তু তারপরে শিকারীর দশম আপেলের মতো সেগুলিকে মূল্যহীন মনে করা শুরু করি। তারপরে শুরু হয় আমাদের অভিযোগ; আশপাশের মানুষ, চাকরি, সরকার, ট্রাফিক, খাবার, আবহাওয়া এবং আরও অনেক কিছু। এইভাবে আমরা আমাদের জীবনের ভাল জিনিসগুলিকে লক্ষ্য না করে এবং স্বীকার না করে সারাজীবন শুধু অভিযোগ করে কাটিয়ে দিই।


কৃতজ্ঞতার আবেগের শক্তি এবং অধিকার অপরিসীম। কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এটি আমাদের অবাঞ্ছিত চাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং সুখ আমাদের জীবনের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এটি উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে, আমাদের আত্মসম্মান বাড়িয়ে তোলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের আরও উদার এবং ক্ষমাশীল করে তোলে। কৃতজ্ঞতা যে কোন সাধারণ দিনকে এক সুন্দর দিনে রূপান্তরিত করতে পারে, দৈনন্দিন কাজগুলিকে আনন্দে পরিণত করতে পারে এবং সাধারণ সুযোগগুলিকে আশীর্বাদে পরিণত করতে পারে। মহাবিশ্বের নিয়ম হলো, আপনি যখন আপনার কাছে থাকা জিনিসগুলির জন্য কৃতজ্ঞ হন, তখন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য আরও অনেক কিছু আসতে থাকবে। অন্যদিকে, অকৃতজ্ঞ মানুষদের জীবন যতই ভালো যাক না কেন তারা কখনই খুশি হতে পারেন না। জীবনে যতই প্রাপ্তি আসুক না কেন তাদের চাহিদার কোন সীমা থাকে না। তাদের মধ্যে অকারণে জন্ম নেয় রাগ, নিজের জীবন এবং তার চারপাশের লোকেদের প্রতি ভয়ানক বিরক্তি। কৃতজ্ঞতাহীন লোকেরা সাধারণত স্বার্থপর হন, জবাবদিহির তোয়াক্কা করেন না, শুধুই অভিযোগ করেন এবং নিজেই নিজের অবমূল্যায়ন করেন।


আমাদের জীবনের দশম আপেলও প্রথম আপেলের মতই মিষ্টি ও সুস্বাদু। যদি দশম আপেল আমাদের প্রথম আপেলটির মতো আনন্দ দিতে ব্যর্থ হয় তবে আপেলের কোনও দোষ নেই; যিনি আপেল খাচ্ছেন,  দোষ তার। তাই ‘দশম আপেলের প্রভাবে’ আপনাকে জীবনের বিনা মূল্যে পাওয়া উপহারগুলির অবমূল্যায়ন করবেন না। জীবনের কোন কৃতজ্ঞতাকে কখনই হারিয়ে যেতে দেবেন না। আপনার জীবনের সমস্ত উপহার; আপনার পরিবার, বন্ধু, বাসস্থান, খাবার, প্রকৃতি, আপনার চারপাশে থাকা প্রতিটি জিনিস, প্রতিটি নতুন সকাল, প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, সবকিছুর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ মনে করুন। সুখী থাকুন, ইতিবাচক থাকুন এবং নম্র থাকুন।




*আরো নিত্য নতুন আপডেট খবর দেখতে

আমাদের whatsapp চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন*

WhatsApp channel link - https://whatsapp.com/channel/0029VaCqqNUGk1FyEgWxaZ2r


No comments