পূর্ব মেদিনীপুরে রেমাল তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ঘরবাড়ি থেকে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশপ্রাণ ব্লক ও সুতাহাটায় ১০টি ত্রাণ শিবিরে আড়াইশো দুর্গত আশ্রয় নেন। জেলাজুড়ে ২৩৫টি বিদ্যুতের…
পূর্ব মেদিনীপুরে রেমাল তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ঘরবাড়ি থেকে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশপ্রাণ ব্লক ও সুতাহাটায় ১০টি ত্রাণ শিবিরে আড়াইশো দুর্গত আশ্রয় নেন। জেলাজুড়ে ২৩৫টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকায় বিদ্যুৎ দপ্তরের মেরামতির কাজ ব্যাহত হয়েছে। পাঁশকুড়া, হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, খেজুরি সহ বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন ছিল। বৃষ্টিতে তমলুক মেডিক্যাল কলেজের সামনে হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যায়। ইমার্জেন্সির সামনে জল জমে যাওয়ায় ব্যাপক ভোগান্তি হয়। জল পেরিয়ে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে রোগীদের হাসপাতালে যেতে হয়। শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং রূপনারায়ণ নদ তীরবর্তী বিভিন্ন জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় এলাকায় দাঁড়িয়ে থেকে জমা জল বের করার উদ্যোগ নেন।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলেই উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুরে সতর্কতা জারি হয়। এবারও রেমাল ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এই জেলার প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি নেয়। দীঘা ও হলদিয়ায় এনডিআরএফ টিম নামানো হয়। প্রায় ২৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছিল। ডিএম অফিসে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। রবিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। পূর্ব মেদিনীপুরে খেজুরি-২, নন্দীগ্রাম-১, দেশপ্রাণ, সুতহাটা, হলদিয়া, রামনগর-১ ও ২ প্রভৃতি ব্লকে প্রায় আড়াইশো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সোমবার সকালে মানুষজন শিবির থেকে ঘরে ফেরা শুরু করেন। কিন্তু, সুতাহাটা ও দেশপ্রাণে ১০টি শিবিরে দুর্গতরা ছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের খাবার সরবরাহ করা হয়। নাগাড়ে বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় জল জমে যায়। তাতে ভোগান্তি আরও বাড়ে।
খেজুরি-২ ব্লকের নিজকসবা, জনকা ও খেজুরি গ্রাম পঞ্চায়েতে ঘূর্ণিঝড়ে অনেক কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাত ১২টা নাগাদ নিজকসবা পঞ্চায়েতের মতিলালচক প্রাইমারি স্কুলে এলাকার ৭০ জন মহিলা, বয়স্ক, শিশুকে সরানো হয়। উপকূল এলাকার মানুষকে নিরাপদে সরানোর কাজে হাত লাগানো বিশ্বজিৎ বারিক বলেন, উপকূলবর্তী এলাকার অনেকের বাড়িঘর এখন কাঁচা। ফি-বছর সাইক্লোনের সময় আতঙ্ক নিয়ে তাঁদের বাঁচতে হয়। নদী ও সমুদ্রবাঁধের অবস্থা ভালো নয়। তাই বাঁধ ভেঙে জল লোকালয়ে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
বেলা গড়ালেও বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত থাকায় কয়েকজন নবান্নের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেন। নবান্ন থেকে এনিয়ে জেলায় যোগাযোগ করে দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৩৫টি ইলেক্ট্রিক খুঁটি ভেঙেছে। বেশকিছু ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক লাইন ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে। জরুরি অবস্থায় সারানোর কাজ চলছে বলে বণ্টন সংস্থার পূর্ব মেদিনীপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার রঞ্জিতকুমার মণ্ডল জানান।
এদিন তমলুক শহরে ২০নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি নালা আটকে জল বিভিন্ন জায়গায় জমে যায়। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা নিকাশি নালা সাফাই করে জমা জল বের করার ব্যবস্থা করেন। তমলুক পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরে নিকাশি সমস্যা মোকাবিলা এবং দু’টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য ৬কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন। নির্বাচনী বিধির কারণে কাজ শুরু হয়নি। ভোট মিটে যাওয়ার পরই টেন্ডার হবে। এরফলে শহরে নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
কৃষিদপ্তরের উপ অধিকর্তা(প্রশাসন) তীর্থঙ্কর মণ্ডল বলেন, বাদাম এবং ফুল চাষে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা তৈরি করে দপ্তরে পাঠিয়েছি।
No comments