Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

জেলিংহ্যাম এখন স্রেফ নদীর চর আর ধ্বংস স্তুপের নানা সাক্ষ্য বহনকারী

জেলিংহ্যাম এখন স্রেফ নদীর চর আর ধ্বংস স্তুপের নানা সাক্ষ্য বহনকারী বিকেল গড়িয়ে নদীর পাড়ে এই জায়গাটা বেশ রোমান্টিক।নদীতে চর। পাড় গিলে খাচ্ছে নদী। এপারে নন্দীগ্রাম। নিরিবিলি , নির্জন চারপাশ। ধার দিয়ে চলে যাচ্ছে একটার পর একটা জ…

 



জেলিংহ্যাম এখন স্রেফ নদীর চর আর ধ্বংস স্তুপের নানা সাক্ষ্য বহনকারী

 বিকেল গড়িয়ে নদীর পাড়ে এই জায়গাটা বেশ রোমান্টিক।নদীতে চর। পাড় গিলে খাচ্ছে নদী। এপারে নন্দীগ্রাম। নিরিবিলি , নির্জন চারপাশ। ধার দিয়ে চলে যাচ্ছে একটার পর একটা জাহাজ। আর তার ঠিক পেছনেই একটু আড়াআড়ি ডায়মণ্ডহারবার।  আলোক ঝলমলে। 

অষ্টাদশ লোকসভা ভোটের বাজারে প্রচারের আলো পড়া এই ভূমিতে জমি রক্ষার আন্দোলন দেশ তো বটেই ভারতের বাইরেও বহুচর্চিত ।

   কিন্তু তার আগেও, এই জায়গাটা ছিল অনেক বেশি আলোচিত এবং ভূমি রক্ষার আন্দোলন ও স্থানীয়দের চাকরির দাবিতে উত্তাল হওয়া এলাকা। জেলিংহাম । নামই যথেষ্ট। এখানেই হওয়ার কথা ছিল জাহাজ মেরামতির একটি প্রকল্প। যার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল আজ থেকে প্রায় চার দশক  আগে। সেই সময়ে জমি আন্দোলন শুরু করেছিলেন এখানকার মানুষ। ঝরেছিল রক্তও। এবং বাকিটা ইতিহাস। এবং তার পর সেখানেই প্রায় ২০০ কোটির টাকা রেল ওয়াগন তৈরি ও মেরামত প্রকল্প গড়ার কথা হয়েছিল ২০১০ সাল নাগাদ। তাও তলিয়ে গিয়েছে নদীর জলে। জাহাজ মেরামতির প্রকল্প গড়তে কাজ এগিয়েছিল অনেকটাই। তার সব যন্ত্রাংশ চুরি গিয়েছে। জেলিংহ্যাম এখন স্রেফ নদীর চর আর ধ্বংস স্তুপের নানা সাক্ষ্য বহনকারী। শিল্পায়নের বধ্যভূমি।


 নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া বাজার থেকে খানিকটা উত্তর দিকে এগোলে জেলিংহাম। গ্রামের ভেতর দিয়ে পাকা রাস্তা ধরে অনায়াসে পৌঁছানো যায়। নিরাপত্তার বালাই নেই। তালা ঝোলানো লোহার দরজার পাশ দিয়ে অনায়াসে ঢোকা যায় বন্ধ কারখানায়। আছেটাই বা কি!  দুষ্কৃতীরা নিয়ে যেতে পারেনি, এরকম ওয়াগনের কঙ্কাল আর কিছু মরচে ধরা লোহার পাত। বিপুল অঙ্কের লোহা এবং যন্ত্রাংশ উধাও। এসব হয়েছে বামেদের সময়ে। জাহাজ প্রকল্পের জন্য যে অফিস ঘর এবং একাধিক আবাসন গড়ে উঠেছিল সেগুলো প্রায় সবকটি আগাছায় ঢাকা পড়েছে। ২০০৬ সাল নাগাদ সেই বামেদের শেষের দিকে কেমিকেল হাব গড়ে নন্দীগ্রামকে ‘দ্বিতীয় হলদিয়া’ করার চেষ্টা হয়। বিস্তীর্ণ এলাকায় জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা হয়েছিল। জমি হারাতে চাননি নন্দীগ্রামের বাসিন্দারা। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী আন্দোলন। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করতে বাধ্য হন, জমি অধিগ্রহণ হবে না। তারপরও চলে জমি আন্দোলন।

নন্দীগ্রামের সেই রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিল তৃণমূলকে। ২০০৭-এর ১৪ মার্চ পুলিশের গুলিতে ১৪ জন  শহিদ হন। কেটে গিয়েছে ১৭ বছর। নন্দীগ্রামে এখন চলছে ভোটের প্রচার। বিজেপি এবং তৃণমূল , দু’তরফে উসকে দেওয়া হচ্ছে জমি আন্দোলনের স্মৃতি। তবে বাসিন্দাদের আশা, যারাই ক্ষমতায় আসুক চালু হোক জেলিংহাম। বাজুক সাইরেন। সবার হাতে কাজ থাকুক। সবার পেটে ভাত জুটুক।

পোর্ট ট্রাস্ট জেলিংহামের জমি অধিগ্রহণ করেছিল ১৯৭৮ সালে। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা চালু করে। কয়েক বছেরের মধ্যে ধারাবাহিক বাম আন্দোলনে তা বন্ধ হয়ে যায়। যা আজও খোলেনি। অনেক পরে রেলমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন এখানে রেলের ওয়াগন তৈরি হবে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১০ সালে মমতা দেশপ্রাণ-নন্দীগ্রাম ১৭ কিলোমিটার রেলপথের শিলান্যাস করেছিলেন। জমি অধিগ্রহণ করে মাটি ভরাটের কাজটুকু হয়েছে।নন্দীগ্রামে রেলওয়ে স্টেশন তৈরির কাজও হয়েছে কিছুটা। ঘোলপুকুরিয়ায় রেলসেতু তৈরি শুরু হলেও শেষ হয়নি। নন্দীগ্রামের অধরা স্বপ্নগুলির জন্য রাজ্যের তরফে অভিযোগের আঙুল তোলা হয় কেন্দ্রের দিকে। তৃণমূলের বক্তব্য, তাদের সরকার ও হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থা নন্দীগ্রামে রাস্তা, আলো ও পরিকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নয়ন করেছে। তবে ভারী শিল্প আসেনি। 

এখন সেখানে নামমাত্র ভেসেল অ্যাসেম্বল করা হয়। হাতে গোনা কয়েকজন ঠিকাকর্মী। আছেন কয়েকজন স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মী। বন্ধই থাকে জেলিংহাম। উড়িষ্যা র বাসিন্দা জনৈক কর্মী র কথায়,"নন্দীগ্রামে এসেছি বছর তিনেক।  হাতেগোনা দু একটা ভেসেল আর ছোট জাহাজ মেরামত করা হয়।" জেলিঙহ্যামের পরিত্যক্ত জমিতে এক পাশে গড়ে উঠেছে বন দফতরের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। তার ঠিক সামনেই পরপর দুটি চায়ের দোকান। দুপুরবেলা সেখানেই বসে ছিলেন দুই প্রবীণ। তারা জানালেন,"এবার ভোটে যেই জিতুক, জেলিংহ্যামে ভোঁ বাজুক।" 

নদীর ওপারে আলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস আর নয়, এখানকার আলোয় ঝলমল করুক নদীর পাড়-এমনটাই চাইছে সোনাচূড়া সহ নন্দীগ্রামের বাসিন্দারা।

*আরো নিত্য নতুন আপডেট খবর দেখতে

আমাদের whatsapp চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন*

WhatsApp channel link - https://whatsapp.com/channel/0029VaCqqNUGk1FyEgWxaZ2r



No comments