পোকা মাকড় কামড়ালে কি করবেন ?
১. মৌমাছির কামড় খাওয়ার পর জ্বালা যন্ত্রণা কমাতে কী কী করা যেতে পারে? কখন মৌমাছির কামড় বিপজ্জনক? ছোট শিশুর ক্ষেত্রে মৌমাছির কামড় কখন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে?• প্রাথমিক ভাবে বরফের টুকরো বা আইস প্যাক …
পোকা মাকড় কামড়ালে কি করবেন ?
১. মৌমাছির কামড় খাওয়ার পর জ্বালা যন্ত্রণা কমাতে কী কী করা যেতে পারে? কখন মৌমাছির কামড় বিপজ্জনক? ছোট শিশুর ক্ষেত্রে মৌমাছির কামড় কখন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে?
• প্রাথমিক ভাবে বরফের টুকরো বা আইস প্যাক চেপে রাখা যায় কামড়ের জায়গায়। কামড়ের জায়গা ঠান্ডা জলে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। পারলে আক্রান্ত অংশে ফুটে থাকা হুল বের করুন। মৌমাছির কামড়ে যন্ত্রণা তেমন হয় না। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য অ্যানাফাইল্যাকটিক রিয়্যাকশন ঘটে। সেক্ষেত্রে সমস্যা প্রাণঘাতী হতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মৌমাছির কামড়ে অ্যানাফাইল্যাকটিক রিয়্যাকশনের বিপদ বড়দের মতোই। তবে বাচ্চাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম, তাই বিপদ বড়দের তুলনায় বেশি। এছাড়াও বেশি সংখ্যক মৌমাছি কামড়ালে শরীরের বাইরের অংশে ফুলে গিয়ে রক্তসঞ্চালন সেই অংশে বেশি হওয়ায়, বাকি প্রয়োজনীয় শারীরবৃত্তীয় কাজে রক্ত সংবহনের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেখান থেকে দেখা দিতে পারে নানা স্বাস্থ্য সংকট।
২. বোলতার বিষ কি মৌমাছির চাইতেও বেশি বিপজ্জনক? শোনা যায় বোলতার কামড়ে নাকি জ্বর আসে? কতগুলি বোলতা কামড়ালে আক্রান্তকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভরতি করা দরকার? প্রাথমিক চিকিত্সা কী কী আছে?
• বিষের রাসায়নিক তারতম্য থাকলেও চিকিৎসাগত দিক থেকে সমান বিষাক্ত। দু’টি পতঙ্গেরই বিষ শরীরে হুলের মাধ্যমে ঢুকলে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থার সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে দু’টি পতঙ্গের কামড়েই জ্বর আসতে পারে। আসা যাক দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে। একটা বোলতার কামড়েও অ্যানাফাইল্যাক্টিক রিয়্যাকশন হওয়ার আশঙ্কা এড়ানো যায় না। আবার অনেক বোলতা কামড়ানোর পরেও মামুলি ব্যথা, যন্ত্রণা, ফোলা ছাড়া অন্য কিছু হয়নি— এমনও দেখা যায়। সবক্ষেত্রেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৩. ভীমরুল কি শুধু চাকে ঢিল মারলেই কামড়ায়? ভীমরুলের কামড় কি প্রাণঘাতী? ভীমরুল কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে কী করণীয়?
• ভীমরুল শুধু চাকে ঢিল ছুঁড়লেই কামড়ায় না। স্বভাবগত ভাবে ভীমরুল নিজের যাতায়াতে বাধাপ্রাপ্ত হলেও কামড়াতে পারে। ভীমরুলের বিষ, বোলতা মৌমাছির থেকে পরিমাণে বেশি। তাই ভয়াবহতাও বেশি। তবে বোলতা, মৌমাছির মতো ভীমরুল সাধারণত একযোগে আক্রমণ করে না।
৪. বাড়ির সাধারণ মাকড়শা কামড়ালে কী করা উচিত? ট্যারেন্টুলা কামড়ালে কী কী করা যায়? ভারতে ট্যারেন্টুলা আছে? চিকিত্সা কী?
• বাড়ির সাধারণ মাকড়শা কামড়ালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামুলি ব্যথা, ফোলা, অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হলেও, কিছু মাকড়শার আক্রমণে কামড়ের জায়গায় মারাত্মক সেলুলাইটিস হওয়ার আশঙ্কা এড়ানো যায় না। সাধারণ মাকড়শা কামড়ালে প্রাথমিকভাবে কামড়ের জায়গায় বরফের সেক দিলে রক্তসংবাহীনালীগুলি সংকুচিত হয়ে বিষের ছড়িয়ে পড়া আটকে দেয়। তাই বরফের সেকই প্রাথমিক কর্তব্য। এবার আসা যাক খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরে— হ্যাঁ, ভারতে প্রায় ৯ ধরনের ট্যারেন্টুলার প্রজাতি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র কাইলোব্র্যাকিস ও সেলেনোকসোমিয়া গ্রুপের ট্যারেন্টুলা রয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে কাইলোব্র্যাকিস এবং উত্তরবঙ্গে সেলেনোকসোমিয়া গ্রুপের ট্যারেন্টুলা বেশি দেখা যায়। কাইলোব্র্যাকিসের বিষ প্রধানত মায়োটক্সিক। এদের লোমগুলি শরীরে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন করে, এবং কামড়ের ক্ষেত্রে বিষ শরীরে ঢুকে কোষগুলি ধ্বংস করতে থাকে। এই দুই মিলিত প্রভাবের মাঝে সুযোগসন্ধানী ব্যাকটেরিয়াও থাবা বসায়। ফলে মারাত্মক সেলুলাইটিস হতে পারে। মূলত অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টামিনিক, অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি দিয়েই চিকিৎসা করতে হলেও, দেরিতে চিকিৎসা শুরু হলে সেপ্টিসেমিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
৫. অনেকসময় গায়ে কালো দাগ হয়ে যায়, ঘায়ের মতো হয়, রস বেরর যাকে আমরা ‘পোকায় চেটেছে’ বলি। কোন পোকায় চাটলে এমন হয়?
• গুবরে পোকা গোত্রের কিছু রোভ বিটল (পেডেরাস) পোকামাকড় আছে, যাদের সংস্পর্শে এলে পেডেরিন গোত্রের একধরনের ফ্লুইডের কারণে ত্বকে ইরিট্যান্ট বা অস্বস্তিকর কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হয়। আসলে আদৌ পোকাটি চেটে দেয় না। পতঙ্গটি ত্বকের সংস্পর্শে এলে অসাবধানতাবশত আমরা পোকাটিকে চাপড় দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করি বা হাত দিয়ে ঘষে দিই। সেই সময় পেডেরিন বিষে ত্বকের সংস্পর্শে আসে ও এই ধরনের ডার্মাটাইটিস হয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সাবান দিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার ঠান্ডা জলে ধুয়ে দিন। এরপর বরফ দিয়ে আক্রান্ত জায়গাটি চেপে রাখুন। তারপর অ্যান্টিবায়োটিক, ট্রপিক্যাল স্টেরয়েড মলমের প্রয়োগ করতে হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
No comments