৬২ বছর ধরে যে রেকর্ড অক্ষুণ্ণ, তা কি স্পর্শ করতে পারবেন নরেন্দ্র মোদি? শনিবার দুপুরে জাতীয় নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করামাত্র উস্কে গিয়েছে সেই জল্পনা। নজিরবিহীনভাবে এবার ৪৭ দিন ধরে চলবে নির্বাচন-পর্ব। আগামী ১৯ এ…
৬২ বছর ধরে যে রেকর্ড অক্ষুণ্ণ, তা কি স্পর্শ করতে পারবেন নরেন্দ্র মোদি? শনিবার দুপুরে জাতীয় নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করামাত্র উস্কে গিয়েছে সেই জল্পনা। নজিরবিহীনভাবে এবার ৪৭ দিন ধরে চলবে নির্বাচন-পর্ব। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত সাত দফায় হবে ভোটগ্রহণ। একইসঙ্গে চারটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং ১৩টি রাজ্যে উপ নির্বাচনও ঘোষণা করা হয়েছে। ফলাফল প্রকাশ আগামী ৪ জুন। এদিন থেকেই জারি হয়ে গেল আদর্শ আচরণবিধি। প্রচার পর্ব মিলিয়ে আগামী প্রায় তিন মাসব্যাপী এই ভোট-উৎসব কার্যত মোদির অগ্নিপরীক্ষা। কারণ, সংসদ থেকে সমাবেশ, সর্বত্র যাঁর সমালোচনাই বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় ইস্যু, সেই জওহরলাল নেহরুর তিনবার মসনদে বসার রেকর্ড স্পর্শের চ্যালেঞ্জ এখন তাঁর সামনে। নেহরুর দৌহিত্র রাজীব গান্ধীর চারশো পারের নজিরও কি ছুঁতে পারবেন মোদি? প্রধানমন্ত্রীর নিত্যদিনের ভাষণ এখন ‘আব কী বার, চারশো পার’। এনডিএকে তিনি একক ক্যারিশমায় চারশো পার করাতে সক্ষম হবেন তো? যে নেহরু-গান্ধী পরিবারকে সবথেকে অপছন্দ করেন তিনি, তাদের সমকক্ষ হওয়ার এটাই শেষতম সুযোগ।
বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে লড়াই করবে ইন্ডিয়া জোট। তা সত্ত্বেও এই লোকসভা ভোট আদতে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের সবথেকে বড় পরীক্ষা। কেন? কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায়, এম কে স্ট্যালিন তামিলনাড়ুতে, তেজস্বী যাদব বিহারে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লি ও পাঞ্জাবে, পিনারাই বিজয়ন কেরলে প্রাণপণে লড়াই দেবেন। এঁদের অনেকেই নিজেদের রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের বিজয়রথ যে আটকে দিতে সক্ষম, সেটা সর্বজনবিদিত। কিন্তু রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, অসমে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হবে। বিগত ১০ বছরে দু’টি লোকসভা ভোটে প্রতিটি রাজ্যেই পর্যুদস্ত হয়েছে হাত শিবির। এবার বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া তারা আটকে দিতে পারবে কি না, তা দেখার জন্য মুখিয়ে গোটা দেশ।
শুধু ব্যক্তি নন, এবার অগ্নিপরীক্ষা ইস্যু বনাম ইস্যুরও। একদিকে রামমন্দির, চন্দ্রযান, জি-২০ সম্মেলন, হিন্দুত্ব, উগ্র জাতীয়তাবাদ, উজ্জ্বলা গ্যাস, বিনামূল্যের রেশন, কৃষকদের ভাতা, ইডি, সিবিআই এবং সবথেকে ক্ষমতাশালী অস্ত্র নরেন্দ্র মোদি ফ্যাক্টর। অন্যদিকে বিরোধীদের প্রচারের হাতিয়ার বেকারত্ব, মূ্ল্যবৃদ্ধি, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি, ইলেক্টোরাল বন্ড, কর্পোরেট স্বজনপোষণ এবং ভারতের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে বদলে দেওয়ার মোদি-প্ল্যান। কোন প্রচার জয়ী হবে? রাহুল গান্ধী পুঁজি করেছেন ভারতকে যুক্ত করার ন্যায় যাত্রাকে। আর মোদির বাজি রামরাজ্য। বিজেপি বনাম বিরোধীদের এই লড়াইয়ে সাধারণ ভোটাররা কী ভাবছেন? প্রায় ২০ কোটি যুব ভোটার এবার অনেকটাই নির্ণায়ক। ৪৭ কোটি নারী ভোটার যে কোনও রাজ্যে ফলাফল পাল্টে দিতে পারেন। রাহুল গান্ধীর নয়া জাতি রাজনীতিকে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ কতটা মান্যতা দেবে? এই একঝাঁক প্রশ্ন আর কৌতূহল নিয়ে অবশেষে ভারতের দুয়ারে ভোট!
No comments