Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ভারতের প্রথম আকুপাংচার সমিতির প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভারতের প্রথম আকুপাংচার সমিতির প্রতিষ্ঠাতার      জন্মদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি 
ডাঃ বিজয় কুমার বসু (জন্ম : ১ মার্চ, ১৯১২ - মৃত্যু : ১২ অক্টোবর, ১৯৮৬) ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ডা. অটলের নেতৃত্বে ভারত থেকে চীনে প্রেরিত পাঁচ-স…

 




ভারতের প্রথম আকুপাংচার সমিতির প্রতিষ্ঠাতার

      জন্মদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি 


ডাঃ বিজয় কুমার বসু (জন্ম : ১ মার্চ, ১৯১২ - মৃত্যু : ১২ অক্টোবর, ১৯৮৬) ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ডা. অটলের নেতৃত্বে ভারত থেকে চীনে প্রেরিত পাঁচ-সদস্যের মেডিক্যাল মিশনের অন্যতম সদস্য ও ভারতের প্রথম আকুপাংচার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন : 

ডা. বিজয় কুমার বসু'র জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের কামারগাঁ গ্রামে। পিতা চিকিৎসক অশ্বিনী কুমার বসু। বিজয়কুমার ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই.এসসি. পাশ করেন। এখানে পড়াশোনার সময়েই অনুশীলন সমিতির সদস্যদের সংস্পর্শে আসেন। চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য কলকাতায় আসেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্দিরা রায়কে বিবাহ করেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে এম.বি. পাশ করেন। ওই বছরেই তিনি নবগঠিত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন।

কর্মজীবন : 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে জাপানি আক্রমণে পর্যুদস্ত চীনের মানুষের সাহায্য করার জন্য জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসু'র উদ্যোগে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রচুর ওষুধ নিয়ে ডাঃ মদনমোহন লাল অটলের নেতৃত্বে পাঁচজন চিকিৎসকের এক মেডিক্যাল টিম চীনে পাঠায়। সেই মেডিক্যাল মিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন ডাঃ বিজয় কুমার বসু এবং এই মিশন উত্তর-চীনে কমিউনিস্ট অধিকৃত ইয়েমেনে অষ্টম চীনা স্থলবাহিনীর সামরিক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাঁদের দীর্ঘ পাঁচ বৎসরের সেবাকার্যের মাঝে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ কোটনিস চীনে মারা যান এবং ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বিজয় কুমার বসু দেশে ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হন। সাম্যবাদী চিন্তা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা এবং মানবতাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী তিনি বাংলার দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পঞ্চাশের দশকে বাংলার এই মন্বন্তরে তাঁর সেবাকার্য বিশেষভাব স্মরণীয়। অনেক জনকল্যাণমূলক কাজে তিনি নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। সহযোদ্ধা ডাঃ কোটনিসের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রাখতে গড়ে তুলেছিলেন সারা ভারত কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটি। এর আগেই ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ কোটনিসের উপর চলচ্চিত্র প্রস্তুত করতে তিনি খ্বাজা আহমেদ আব্বাস ও ভি শান্তারামকে সাহায্য করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংগঠনের কাজে পার্টির নির্দেশে তিনি ত্রিপুরায় যান। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে, তিনি আত্মগোপন অবস্থায় পার্টির বিপ্লবী কাজে নৃপেন চক্রবর্তী, দশরথ দেববর্মণ প্রমুখ নেতাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। পরে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে আসেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারত-চীন মৈত্রী সমিতি গঠন করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাই ভারত সফরে এসে মেডিক্যাল মিশনের প্রতিনিধিদের চীনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ বসু চীনে যান। সেই সফর চলাকালীন তাঁর সাইনুসাইটিস অসুখ বেড়ে যায়। চীনের চিকিৎসকেরা তাঁকে আকুপাংচার চিকিৎসায় সুস্থ করে তোলেন। ডাঃ বসু তখন কার্যতঃ বিনা খরচের চিকিৎসা আকুপাংচারের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আয়ত্ত করেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে কলকাতায় আকুপাংচার পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করেন। কলকাতার চিকিৎসক এবং পরে সাধারণ মানুষকেও এই চিকিৎসা পদ্ধতির শিক্ষা দেন। মূলতঃ তাঁরই প্রচেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গের কিছু সরকারি হাসপাতালে এই পদ্ধতির চিকিৎসা শুরু হয়। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে প্রথম আকুপাংচার সমিতি - 'Acupuncture Association of India' গঠন করেন এবং তিনি আমৃত্যু এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি ভারত ও চীন দুই দেশের সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দুই দেশের মানুষের কাছে সম্মানিত ছিলেন। চীনে মেডিক্যাল মিশন নিয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থ হল - "কল অফ ইয়েনান স্টোরি অফ দি ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল মিশন টু চায়না"। 

জীবনাবসান : 

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ই অক্টোবর ডাঃ বিজয় কুমার বসু শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে সেই সময় তাঁর স্ত্রী ইন্দিরা বসু তিন লক্ষ টাকা এবং বসতবাড়ি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দান করেন। সেটি বর্তমানে আকুপাংচার ইনস্টিটিউট-এর প্রধান কার্যালয়।


No comments