স্পন্ডাইলোসিস এখন বহু কম বয়সি ব্যক্তিকেই আক্রমণ করছে। কীভাবে চিনবেন অসুখের লক্ষণ? কী করলে রোগ ভালো থাকবেন? নানা সময়েই পরিচিত মানুষ, আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই ঘাড়ে ব্যথার ভয়ঙ্কর উপসর্গ দেখা যায়। রোগী ডাইনে-বামে ঘাড় ঘোরাতে পারেন না। কোন…
স্পন্ডাইলোসিস এখন বহু কম বয়সি ব্যক্তিকেই আক্রমণ করছে। কীভাবে চিনবেন অসুখের লক্ষণ? কী করলে রোগ ভালো থাকবেন?
নানা সময়েই পরিচিত মানুষ, আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই ঘাড়ে ব্যথার ভয়ঙ্কর উপসর্গ দেখা যায়। রোগী ডাইনে-বামে ঘাড় ঘোরাতে পারেন না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঘাড়ের যে কোনও মুভমেন্টেই সমস্যা দেখা যায় এবং রোগী ঝুঁকে কাজ করতে গেলে ব্যথার চোটে চোখে অন্ধকার দেখেন! কখনও কখনও সঙ্গে যোগ হয় হাতের দিকে ব্যথা। এগুলিই হল সাধারণভাবে স্পন্ডাইলোসিসের লক্ষণ।
স্পন্ডাইলোসিস সাধারণত দুই রকম— ১) চিকিত্সকরা সাধারণভাবে যাকে স্পন্ডাইলোসিস বলি তা হল ক্ষয় জনিত অসুখ, ২) আর একধরনের সমস্যা হল অটো ইমিউন সমস্যা বা কোনও রোগ বা চোট থেকে সমস্যা।
ডিজেনারেটিভ বা ক্ষয়জনিত স্পন্ডাইলোসিস:
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডে যে অস্থিসন্ধিগুলি আছে সেখানে ক্ষয় হতে থাকে। আবার ভারী কাজ বা পেশাজনিত কারণে ভুল শারীরিক ভঙ্গিমায় কাজ করার জন্যও ঘাড়ের দু’টি অস্থিসন্ধির মাঝখানে যে ডিস্ক থাকে তার ক্ষয় হয় বা তা নষ্ট হতে থাকে। ফলত ডিস্ক-এর মধ্যে যে জলীয় অংশ থাকে তা কমে যেতে থাকে। আর চাপ পড়ে দুটি ভার্টিব্রার সংযোগকারী অস্থিসন্ধির উপর। ফলে শুরু হয় ব্যথা। ক্ষয় আরও বেশি হলে নার্ভের উপর চাপ পড়ে আর ব্যথা হাতের দিকে নেমে আসতে থাকে।
উপসর্গ
ঘাড়ে ব্যথা, • ঘাড় ঘোরাতে কষ্ট হয় • হাতে অবশভাব বা ঝিনঝিন ভাব থাকে • একই জায়গায় একভাবে বসে কাজ, ল্যাপটপে সবসময় কাজ করতে করতে কম বয়সেও এমন জটিলতা তৈরি হতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে।
অটোইমিউন সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সমস্যার কারণেই এই ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। এই রোগের নাম অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস। এক্ষেত্রে জিন অনেকখানি দায়ী থাকে। অর্থাত্ মা অথবা বাবার পরিবারের কারও এই অসুখ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মেও এই রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অনেক সময় জিন টেস্ট করে তা বোঝা যায়।
প্রশ্ন হল এই অসুখে হয়টা কী? দু’টি ভার্টিব্রার মাঝে যে লিগামেন্ট থাকে তাকে আপন স্থানে আটকে রাখে তাদের পাশে থাকা বিভিন্ন লিগামেন্ট।
অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসে লিগামেন্টগুলি ক্রমশ অনমনীয় হয়ে পড়ে ও হাড়ের মতো শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে ঘাড়ে এমনই অনমনীয় ভাব তৈরি হয় যে ঘাড় আর ঘোরে না। ঘাড় ঘোরাতে হলে সমগ্র শরীরকেই ঘোরাতে হয়।
বিশেষ উপসর্গ
সকালের দিকে ব্যথার উপদ্রব বেশি হয়। যত সময় যায়, চলাফেরা করতে করতে ব্যথার উপশম হতে থাকে। অসুখ শুরু হয় কোমরে ব্যথা দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে রোগ ওপরের দিকে উঠতে থাকে। তবে সবসময় যে একইরকমভাবে রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এমন নয়। ঘাড়েও অনমনীয় ভাব তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগী ক্রমশ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন বা মাথা উপরের দিকে আটকে যায়, তাই হাঁটাচলা কররা সময় বারংবার হোঁটট খাওয়ার আশঙ্কা ও সেখান থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।।সারা শরীরের মুভমেন্টেই বিশেষ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। এছাড়া রোগীর জ্বর, চোখে ইউভিআইটিস-এর মতো সমস্যাও দেখা যেতে পারে। অসুখের খুব ভালো চিকিৎসা রয়েছে। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করালে অসুখের উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মনে রাখবেন
সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস ক্ষয়জনিত অসুখ। তাই মোটামুটি ৩০ বছর বয়সের পর অসুখ শুরু হতে দেখা যায়। অন্যদিকে অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস জেনেটিক ডিজিজ, তাই অসুখের বহিঃপ্রকাশ অনেক আগেই হতে পারে। সাধারণত ২০ বছরের আশপাশে রোগের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
চিকিৎসা
সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস-এ তীব্র ব্যথার সময়ে চিকিত্সা হল বিশ্রাম এবং ওষুধ খাওয়া। ভালো থাকতে হলে প্রয়োজন শরীরের ভঙ্গিমা সঠিক করা ও ঘাড়ে নিয়মিত কলার পরা ও ফিজিওথেরাপিও করানো। নার্ভে চাপ পড়ে বিশেষ অসুবিধা হলে তখন অপারশেনর কথা ভাবা যেতে পারে। অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। বর্তমানে অনেক ওষুধ আছে। চিকিত্সকের পরামর্শে সেই ওষুধ খেলে অনেক জটিলতা আটকানো যেতে পারে বা উপসর্গমুক্ত থাকা যায়।
No comments