ডিভোর্স কেন হয়?প্রাজ্ঞরা বলেন, আমাদের সময়ে বিবাহবিচ্ছেদের কথা কেউ মনেই আনত না। এখন তো কথায় কথায় স্বামী ছেড়ে যাচ্ছে স্ত্রীকে, স্ত্রী ছেড়ে দিচ্ছে স্বামীকে। প্রশ্ন হল, সত্যিই কি তাই ঘটছে? কথায় কথায় বিয়ে ভাঙছে তাসের ঘরের মতো? এমনি…
ডিভোর্স কেন হয়?
প্রাজ্ঞরা বলেন, আমাদের সময়ে বিবাহবিচ্ছেদের কথা কেউ মনেই আনত না। এখন তো কথায় কথায় স্বামী ছেড়ে যাচ্ছে স্ত্রীকে, স্ত্রী ছেড়ে দিচ্ছে স্বামীকে।
প্রশ্ন হল, সত্যিই কি তাই ঘটছে? কথায় কথায় বিয়ে ভাঙছে তাসের ঘরের মতো? এমনিতে, বিশ্বের নিরিখে ভারতে বিবাহবিচ্ছেদের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তা সত্ত্বেও গত দুই দশকে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা অনেকখানিই বেড়েছে। তবে তা শুধু কমবয়সিদের ক্ষেত্রেই নয়, মাঝবয়সে পৌঁছানোর পরও ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে বইকি।
ডিভোর্সের ভালোমন্দ
কিছু জায়গা থাকে যেখানে ডিভোর্স হয়ে গেলেই হয়তো ভালো! বিশেষ করে আমরা যখন দেখি দম্পতিদের সম্পর্কে অনুপ্রবেশ ঘটছে দৈহিক আঘাত, মানসিক নির্যাতন, ড্রাগ সেবন, মদ্যপান সহ বহু ধরনের জটিলতা। অনেক চেষ্টার পরেও যা সংশোধন করা সম্ভব হয় না। সেইসব ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ হয়তো অনিবার্য শান্তিপূর্ণ সমাধান।
...ভালোবাসা গোলাপে ফোটে
তবে যত বেশি বিচ্ছেদ হয়, তার চাইতে পুনর্মিলন হয় অনেক বেশি। আসলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখি, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে দারুণ ভালোবাসেন! মুখ খুললেই ঘটে বিপত্তি। বিষোদগার শুরু করেন। কারণ তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে ততদিনে ঢুকে গিয়েছে একাধিক চাওয়া এবং পাওয়ার হিসেব। এই ধরনের দম্পতির বিচ্ছেদ আটকানোও যায় সামান্য মানসিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমেই। মানুষের জীবন টিকে থাকে দু’টি বিষয়ের উপর। এক. আমার এখনই একটি জিনিস চাই। (গাড়ি, বাড়ির মতো বস্তু বা অন্য কোনও ব্যক্তি)। দুই. আমি এমন একটা কাজ করছি যা থেকে এখনই হয়তো লাভবান হওয়া সম্ভব নয়, তবে পরে লাভ পেতে পারি। যে দম্পতির মধ্যে ‘এই মুহূর্তেই ভোগ্য বস্তুটি চাই, এখনই দরকার’— এই ভাবনা চেপে বসে, তাদের ক্ষেত্রে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি হয়। তবে ডিভোর্সের মতো জটিল সমস্যার এত সহজ সরলীকরণ হয় না। করা উচিতও নয়। দরকার আরও গভীর আলোচনার।
সামাজিক আচার-আচরণ
সোশ্যাল বিহেভিয়ার বা একজন ব্যক্তি অন্যের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন, অন্যকে কীভাবে প্রভাবিত করবেন, তা স্থির করে তার ভাবনার ধরন এবং কাজ করার অভ্যেসের উপর। এখন দু’টি বিষয়ই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। কারণ আমাদের মন অত্যন্ত সংবেদনশীল। দেখা গিয়েছে, কোনও ব্যক্তি অপরজনের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ভাবনা রোজ ভাবতে থাকলে ওই ব্যক্তির প্রতি তার আচরণও অশ্রদ্ধামূলক হয়ে যায়! তাই মনকে খুব সতর্ক হয়ে সামলাতে হবে। তাকে বেপথে চালনা করলেই বিপদ। সমস্যা হল, কম বয়সিদের মধ্যে বয়ঃসন্ধি থেকেই যৌবনে পদার্পণের সময়কালে বেঠিক নানা অভ্যেস ও কার্যকলাপ চরিত্র তৈরির ক্ষেত্রে ফেলছে কুপ্রভাব। যার ফল নজরে আসছে পরবর্তীকালে। বিয়ের পর দু’টি মানুষ একসঙ্গে থাকতে শুরু করার পরেই প্রকাশ্যে আসছে দ্বন্দ্ব!
নতুনকে স্বীকার করুন
আসলে একেকটি মানুষ, তার পরিবারের নিজস্ব কিছু আদব-কায়দা থাকে। ব্যক্তিবিশেষে বিশ্বাসও আলাদা হয়ে যায়। বিয়ের অর্থ শুধু একজনের শরীরকে বিয়ে করা নয়। একজন আস্ত মানুষের বিশ্বাস, তাঁর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকেও স্বীকার করে নেওয়া। তাই স্বামী ও স্ত্রী তাঁদের মনের দরজা জানালাগুলো খোলা না রাখলে বিপদ। ‘লাভ’ হোক বা ‘অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ’— মতানৈক্য হবেই যা ক্রমশ দু’জনের রাস্তাই আলাদা করে দেবে। তাই সবসময় ভাবুন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছে কিছু শেখার আছে কি না।
সম্পর্কের ভিত্তি
সম্পর্ক পরিণত হয় কতকগুলি সাধারণ চাওয়া-পাওয়ার ধাপ পেরিয়ে। প্রথম ধাপে থাকে বেসিক নিড বা প্রাথমিক চাহিদা। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, ছোট একখানি বাহন...। এই চাহিদা পূর্ণ হয়ে গেলে মন যায় তখন নিরাপত্তার দিকে। আরও বড় ঘর, বড় গাড়ি, বাগান ইত্যাদি। সেসব চাহিদা পূরণের পরেও স্বামী ও স্ত্রীর সংযুক্তিতে সমস্যা হলে বুঝতে হয় আগের দুটো ধাপের মধ্যে কোথাও একটা গোলযোগ দেখা দিয়েছে। এখানেই উঠে আসে প্রশ্ন— এতদিন একসঙ্গে পথ চলার পরেও স্বামী ও স্ত্রীর চেতনা কি আদৌ জাগ্রত হয়েছে? তাঁরা কি শুধুই চাহিদা বা প্রবৃত্তির বশবর্তী? নাকি তাঁরা জানে যে ‘চাহিদা’, ‘নিরাপত্তা’র মতো বিষয় সদা পরিবর্তনশীল। যাবে আর আসবে! ‘পার্থিব নানা ভোগ্যবস্তু’, ‘অন্য কারও প্রতি শারীরিক মোহ’ কেটে যাবে যদি চিন্তাভাবনা সঠিক পথে থাকে। এই ভাবনা দম্পতির মনে প্রবেশ করলে বুঝতে হবে ওই দম্পতি প্রবেশ করেছেন আশাবাদী মনোজগতে। তাঁদের দাম্পত্যে বাইরের ঝড়ঝাপটা সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গন্ডির বাইরে তাঁদের ভাবনার জগত।
শেষ কথা
এখন অসংখ্য মানুষ নানা মানসিক অসুখে ভুগছেন। শুধু মিথ্যা সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন না। ভাবছেন অন্যেরা কী বলবে! মানসিক অসুখের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সম্পর্কে! অথচ সাইকিয়াট্রিস্টের সামান্য মানসিক সহায়তা নিলেই দম্পতিরা পাড়ি দিতে পারেন দূর যাত্রা। আসলে বুঝতে হবে মানুষ যেভাবে ভাবে, সেভাবেই কাজ করে। ভুল পথে ভাবলে সঙ্কট বাড়বে বই কমবে না। কারণ ‘থট’ এবং ‘অ্যাকশন’ আলাদা নয়। তাই ভাবনা বদলান। জীবনও বদলে যাবে।
No comments