শ্রমিক বিক্ষোভে ৮ ঘণ্টা কাজ বন্ধ! বন্দর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে নাইট শিফট থেকে কাজ শুরু হলশ্রমিক বিক্ষোভের জেরে দু’মাসের মাথায় ফের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল হলদিয়া বন্দরে। শ্রমিকদের বেতন থেকে পিএফের টাকা কেটে নেওয়া ঘিরে শনিবার ১০ ই ফে…
শ্রমিক বিক্ষোভে ৮ ঘণ্টা কাজ বন্ধ! বন্দর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে নাইট শিফট থেকে কাজ শুরু হল
শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে দু’মাসের মাথায় ফের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল হলদিয়া বন্দরে। শ্রমিকদের বেতন থেকে পিএফের টাকা কেটে নেওয়া ঘিরে শনিবার ১০ ই ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে বন্দরে শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। বন্দরের একাংশে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জাহাজে পণ্য ওঠানামা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রেলের রেকে পণ্য বোঝাই করার কাজ। ট্রাকে এবং ডাম্পারে লোডিং করার কাজও থমকে গিয়েছিল। অচলাবস্থার জেরে নতুন করে কয়লার জাহাজ বন্দরে আনার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, বিক্ষোভরত শ্রমিকরা বন্দরের একটি কার্গো হ্যান্ডেলিং সংস্থার অধীনে রয়েছেন। ওই সংস্থাই প্রধানত বন্দরের ডক এরিয়ায় সিংহভাগ বার্থে পণ্য ওঠানো নামানোর কাজ করে। গত ১২ ডিসেম্বর পিএফের টাকা কেটে নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথম বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকরা। দু’দিন ধরে বিক্ষোভের পর ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের আশ্বাসে বিক্ষোভ ওঠে।
জানা যায়, বেতনের বেসিকের উপর ভিত্তি করে শ্রমিকদের যে অতিরিক্ত পিএফ কেটে নেওয়া হচ্ছে, মূলত সেবিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল শ্রমিকদের মধ্যে। ডিসেম্বর মাসে বেতনের পে-স্লিপ পাওয়ার পর শ্রমিকদের মধ্যে ওই বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল।
শ্রমিকদের দাবি, ওই কার্গো হ্যান্ডেলিং সংস্থা তাঁদের বঞ্চিত করেছে। পে-স্লিপে তাঁদের ১৫ হাজার টাকা বেসিক ইনকাম লেখা হলেও আদপে তাঁরা সিওডি’র ক্যাটিগরি অনুযায়ী আট থেকে সাড়ে ন’হাজার টাকা পান। এরিয়ার হিসেবে বকেয়া টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দাবি করেন তাঁরা। ওই সময় শ্রমিক সংগঠন ও সংস্থার কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর বিক্ষোভ উঠেছিল। শ্রমিকদের বক্তব্য, দু’মাস কেটে গেলেও ওই হ্যান্ডেলিং এজেন্ট সংস্থা পিএফ নিয়ে সমস্যা মেটায়নি। এদিন ১০ ই ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে ওই সংস্থার তরফে শ্রমিকদের কাছে বিভিন্ন বার্থ এলাকায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, তা মেটানোর জন্য পরামর্শ চাওয়া হয়। একই সঙ্গে শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়ে কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়। ওই সময় উল্টে শ্রমিকরা ফের পিএফ নিয়ে সরব হন।
এদিকে, কাদের নেতৃত্বে ওই শ্রমিক বিক্ষোভ হচ্ছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আইএনটিটিইউসির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি চন্দন দে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি বলে এড়িয়ে যান। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব শ্রমিক বিক্ষোভের পিছনে ভোটের মুখে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে। বন্দরে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে কৌশলে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ করা হচ্ছে।
হলদিয়া শহর তৃণমূলের সভাপতি মিলন মণ্ডল বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির পাশে রয়েছি। কিন্তু কোনও বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (ট্রাফিক) অভয়কুমার মহাপাত্র বলেন, শ্রমিক বিক্ষোভে ২, ৮ ও ১৩ নম্বর বার্থে কাজ বন্ধ রয়েছিল। ওইগুলি থেকে পণ্য নামিয়ে রেলের রেকে বোঝাই করা হতো। পুরো কাজই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বার বার বন্দরে এভাবে কাজ বন্ধ হওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বন্দরের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নষ্ট হচ্ছে। হ্যান্ডেলিং এজেন্সিকে গতবার কড়া সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছিল। আগামীতে পেনাল্টিও করা হতে পারে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসন, রাজ্য শ্রম দপ্তর ও সেন্ট্রাল লেবার কমিশনকে এদিন সন্ধেয় ইমেল করেছে বন্দর। তবে ওই হ্যান্ডেলিং এজেন্সিকে বার বার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেনি। এসেছি মন্তর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার সংস্থা এবং শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা করেন এবং নাইট শিফট থেকে পুনরায় কাজ শুরু হয়। রিপ্লে ঠিকাদার সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে একটি সার্কুলার দেওয়া হয় আগামী ১৬ অথবা ১৭ ফেব্রুয়ারি সমস্ত শ্রমিকদের নিয়ে বসবেন রিপ্লাই কোম্পানি কর্ণধার এবং তার আগে কাজ শুরু করার জন্য আবেদন করেন। সেই সার্কুলার আসতেই শ্রমিকরা কাজের যোগদান করলেন। সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদার সংস্থা আশ্বাস দিলে শ্রমিকদের বিক্ষোভ উঠে যায়। দীর্ঘ আট ঘন্টা কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় হলদিয়া বন্দরে কাজ শুরু হলো স্বস্তি ফিরে এলো শ্রমিকদের মধ্যে।
No comments