স্বপ্নের প্রকৃত অর্থ বুঝবেন কীভাবে?পরামর্শে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক ডাঃ দিলীপ মণ্ডল।
স্বপ্ন নিয়ে মানুষের কৌতূহল অপার। সকলের প্রশ্ন— স্বপ্ন আসলে কী? ফ্রয়েড সাহেবের কথা বলি। তিনি …
স্বপ্নের প্রকৃত অর্থ বুঝবেন কীভাবে?
পরামর্শে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক ডাঃ দিলীপ মণ্ডল।
স্বপ্ন নিয়ে মানুষের কৌতূহল অপার। সকলের প্রশ্ন— স্বপ্ন আসলে কী? ফ্রয়েড সাহেবের কথা বলি। তিনি ছিলেন একজন নিউরোলজিস্ট। অথচ তাঁর বড় কাজগুলিই তাঁকে সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। উনিই প্রথম স্বপ্নের ভাবানুবাদ করেছিলেন। সেইসময় লন্ডনে বিত্তশালীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল তাঁর কাছে গিয়ে স্বপ্নের অর্থ উদ্ধারের জন্য।
এই যদি হয় পশ্চিমী দেশের জনগণের অবস্থা, তাহলে প্রাচ্য আবার স্বপ্নের সঙ্গে মিলছে অলৌকিকতার যোগ! পঞ্জিকা বলে দিচ্ছে কোন স্বপ্নের কী ফল হয়! আমরা পড়ছি সাপের স্বপ্ন দেখলে বংশ বৃদ্ধি হয়। কেউ কেউ আবার স্বপ্ন দেখে পান বাতের ওষুধ! মোট কথা স্বপ্ন নিয়ে অনেক গালগল্প চালু আছে।
পুরুষ ও নারীর স্বপ্ন
একজন মানুষ স্বপ্ন দেখেন সাধারণত তাঁর বেড়ে ওঠার পরিবেশ ও চাহিদা অনুসারে। ফলে এভাবে আলাদা করে পুরুষ ও নারীর স্বপ্নের ভিন্নতার কথা বলা যায় না। তবে হ্যাঁ, বয়স অনুসারে স্বপ্ন ভিন্ন হতে পারে।
বৃদ্ধ বয়সের স্বপ্নে থাকে বিগত দিনের মানুষ, পুরনো দিনের কাজকর্মের কথা। এমনকী কেউ কেউ বলেন, তাঁদের স্বপ্নে গত রাতে এসেছিল মৃত এক বন্ধু! অন্যদিকে কম বয়সিদের স্বপ্নে থাকতে পারে বর্তমান সময়ের নানা বিষয়।
স্বপ্নের সঙ্গে কি মানসিক অসুখের সম্পর্ক?
অবশ্যই রয়েছে সম্পর্ক। কারণ একজন ব্যক্তি মানসিক ভাবে সুস্থ না থাকলে তিনি ঘুমাবেন কীভাবে? অনিদ্রা গ্রাস করবে একজন ব্যক্তিকে। অনিদ্রার রোগীর স্বপ্নও সুখদায়ক হয় না।
ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়?
ভোরের দিকে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখা হল মানেই তা সত্যি হয়ে যাবে এমন কোনও অর্থ নেই। মোট কথা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলোর কোনও প্রমাণ মেলেনি।
স্বপ্ন কীভাবে দেখে মানুষ?
স্বপ্ন যে কীভাবে মানুষ দেখে এবং স্বপ্ন কীভাবে মস্তিষ্ক তৈরি করে তা ব্যাখ্যা করা সত্যিই মুশকিল। তবে হ্যাঁ, আমরা যখন ঘুমোই তখনও আমাদের ব্রেন কিন্তু জেগে থাকে। আর ব্রেন স্টেম সক্রিয় থাকে বলেই আমরা স্বপ্ন দেখি।
আমাদের ঘুম দুই প্রকারের- র্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম বা রেম স্লিপ) এবং নন র্যাপিড আই মুভমেন্ট (নন আরইএম)। মজার ব্যাপার হল যদি আমরা রেম স্লিপ-এ স্বপ্ন দেখি ও ঘুম ভেঙে যায় তাহলে সেই স্বপ্ন মনে থাকবে। তবে নন রেম স্লিপ হল গভীর ঘুমের পর্যায়। এই সময়ে ঘুমালে ও তারপর ঘুম থেকে উঠলেও স্বপ্ন মনে থাকে না। কাজেই শারীরবৃত্তীয়ভাবে স্বপ্নকে বর্ণনা করা কঠিন ব্যাপার। সাইকোলজিক্যাল বা মানসিক ব্যাখ্যা হল স্বপ্ন হল আমার অবদমিত ইচ্ছা। যা কিছু আমি সচেতনভাবে পাচ্ছি না তা আমি স্বপ্নের মাধ্যমে দেখে ইচ্ছাপূরণ ঘটাচ্ছি!
বায়োলজিক্যাল ব্যাখ্যা হল, আমাদের ব্রেনের কোষগুলি থেকে যে ইলেকট্রিক্যাল ডিসচার্জ হয় তা দিয়েই আমরা স্বপ্ন দেখি।
স্বপ্নের স্থায়িত্ব
স্বপ্ন স্থায়ী হতে পারে কয়েক সেকেন্ড থেকে আধঘণ্টা।
স্বপ্ন দেখা কি খুব দরকার?
এমন কোনও বিধিবদ্ধ নিয়ম নেই যে স্বপ্ন দেখতেই হবে। তবে ভালো স্বপ্ন দেখতে চাইলে ঘুম ভালো হওয়া উচিত। সময়ে ঘুমাতে যান, সময়ে উঠুন। এছাড়া সিগারেট, অ্যালকোহল, কফি থেকে থাকতে হবে দূরে। প্রতিদিন আধঘণ্টা এক্সারসাইজ দরকারি।
সূর্যের আলো আর ঘুম
সূর্যের আলোর সঙ্গে আমাদের স্লিপ ওয়েভ সাইকেলের মিল আছে। যেইমাত্র সূ্র্য ডোবে, সেই মাত্র মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরিত হতে শুরু করে। অর্থাত্ মেলাটোনিন হরমোন আমাদের ঘুম আসার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
তাই যে সকল প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের স্কুল শুরু হয় সকাল ৭-৮ টা নাগাদ, তাদের বাবা-মা রাত ৮টা-৯টা নাগাদ সন্তানকে ঘুম পাড়ান। তার থেকে বড় বাচ্চাদের ঘুমাতে হবে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে। তার থেকেও বড় বাচ্চার ঘুম দরকার ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে সে মোবাইল বা টিভি দেখবে না। হালকা যন্ত্রসঙ্গীত শুনতে পারে। এছাড়া ঘুমের আগে ঈষদুষ্ণ পানীয়ও ঘুম আসার ক্ষেত্রে খুব সাহায্য করে। অর্থাত্ ঘুমের আগে পান করা যায় একটু গরম দুধ।
শেষ কথা
মোটকথা সুস্থ থাকতে ও স্বাস্থ্যকর স্বপ্ন দেখতে প্রয়োজন ভালো ঘুমের। তাই বলে ঘুমের ওষুধ খেলে চলবে না। কারণ ঘুমের ওষুধে একসময় আসক্তি চলে আসে। তাই ভালো ঘুমের জন্য স্লিপ হাইজিন মেনে চলাই যথেষ্ট।
ড্রিম রিডিং
ড্রিম অ্যানালিসিস এখন আর হয় না বা বর্তমান চিকিত্সা ব্যবস্থায় সেভাবে ড্রিম অ্যানালিসিসের কোনও ভূমিকা নেই।
No comments